ভোমরা বন্দরে পণ্য খালাসে ব্যবসায়ীদের নিকট থেকে আদায় করা হচ্ছে অতিরিক্ত অর্থ
ভোমরা স্থলবন্দরে পণ্য খালাস করতে ব্যবসায়ীদের কাছ আদায় করা হচ্ছে অতিরিক্ত অর্থ। পণ্য খালাসে সরকারী খরচ দেওয়ার পরও প্রতি ট্রাকে ২ হাজার ৫০০ থেকে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত অবৈধ ভাবে আদায় করা হচ্ছে। ব্যবসায়ী ও সিএন্ডএফ নেতৃবৃন্দ বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে বার বার অবহিত করার পরও কোনো প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে বলে জানান। ফলে প্রতিদিন ৭ থেকে ৮ লাখ টাকা ব্যবসায়ীদের নিকট থেকে অবৈধ ভাবে আদায় করা হচ্ছে।
ভোমরা স্থলবন্দরের সিএন্ডএফ এজেন্ট ও পাথর আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান মেসার্স রোহিত ইন্টারন্যাশনালের সত্ত্বাধিকারী রামকৃঞ্চ চক্রবর্তী জানান, ভোমরা বন্দরে প্রতিদিন গড়ে ২০ থেকে ২২ ট্রাক পাথর খালাস করাতে হয় তার। এসব পাথর খালাসের জন্য প্রথমে সরকারী ভাবে ট্রাক প্রতি ফি জমা দিতে হয় ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকা। কিন্ত লেবার ফি জমা দেয়ার পরও কোনো লেবার পাওয়া যায় না। ফলে পরবর্তীতে ট্রাক প্রতি ২ হাজার ৫০০ থেকে ৩ হাজার টাকা অতিরিক্ত দিয়ে এসব পণ্য খালাস করতে হয় বলে জানান তিনি।
এ বন্দর ব্যবহারকারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স গনি এন্ড সন্সের ব্যবস্থাপক অশোক কুমার ঘোষ জানান, তার প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন প্রকার কৃষি পণ্য আমদানি করা হয়। গড়ে প্রতিদিন ১২ থেকে ১৫ ট্রাক পণ্য বন্দর থেকে খালাস করাতে হয়। কিন্ত সরকারী ফি জমা দিয়েও নিজ খরচে পণ্য খালাস করতে তাকে। ফলে ট্রাক প্রতি আড়াই থেকে ৩ হাজার টাকা অতিরিক্ত গুনতে হয় তাকে।
শুধু রামকৃঞ্চ চক্রবর্তী বা অশোক কুমারই নয় ভোমরা বন্দর ব্যবহারকারী সকল ব্যবসায়ীকে এ ভাবেই পণ্য খালাসে অতিরিক্ত টাকা গুনতে হচ্ছে। সূত্রমতে প্রতি দিন ২৮০ থেকে ৩০০ পণ্যবাহী ট্রাক ভোমরা বন্দরে প্রবেশ করে। এসব ট্রাক থেকে প্রতিদিন ৭ থেকে ৮ লাখ টাকা অবৈধ ভাবে আদায় করা হচ্ছে।
ভোমরা স্থলবন্দর সিএন্ডএফ এজেন্ট ব্যবসায়ী এসোসিয়শনের সভাপতি কাজী দিলওয়ার নওশাদ রাজু জানান, ভোমরা বন্দরের ওয়ার হাউজে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৩০০ পণ্যবাহী ট্রাক প্রবেশ করে। এসব ট্রাকের পণ্য খালাস করতে সরকারী নিয়ম অনুযায়ী টন প্রতি ৭৭ টাকা হিসাবে একেক ট্রাকের জন্য ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকা করে জমা দিতে হয় ভোমরা বন্দরের লেবার সরবরাহকারী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ড্রব কমুনেকেশন লিমিটেড,এর নিকট ।
নিয়ম অনুযায়ী ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তাদের লেবার দিয়ে পণ্য খালাস করিয়ে দেবে। কিন্ত তারা টাকা নেওয়ার পরও কোনো লেবার দেয় না। ব্যবসায়ীদের বাধ্য করানো নিজ খরচে পন্য খালাস করাতে।
এব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে ভোমরা বন্দর কর্তৃপক্ষের উপ-পরিচালক মো. আব্দুল জলিল জানান, পণ্য খালাসের জন্য সরকারী নির্দেশ অনুযায়ী টন প্রতি ৭৭ টাকা হারে নেয়া হয়। কিন্ত পরবর্তীতে কোনো টাকা পয়সা কেউ নেয় কিনা তা আমি জানিনা। তবে ব্যবসায়ীরা অতিরিক্ত টাকা দেয়ার ব্যাপারে তার কাছে কেউ অভিযোগ করেনি বলেও জানান।
এব্যাপারে ভোমরা বন্দরের লেবার সরবরাহকারী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ড্রব কমুনেকেশন লিমিটেড, ঢাকা এর প্রতিনিধি, ফকরুল আলমের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, পণ্য খালাসে সরকারী নিয়ম মাফিক টাকা নেয়া হয়। কিন্ত পরবর্তীতে ব্যবসায়ীরা পণ্য খালাসের জন্য লেবার টাকা দেয় কি না সেটি আমরা জানিনা।
এব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে ভোমরা শুল্ক স্টেশনের দায়িত্ব থাকা কাস্টমেস্র বিভাগীয় সহকারী কমিশনার মো. রেজাউল হক জানান, বিষয়টি কাস্টমস্রে সংশ্লিষ্টতা না হওয়ায় কোনো মন্তব্য করা যাবে না। এটি বন্দর কর্তৃপক্ষের ব্যাপার। সুতরাং ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা পয়সা নিলে কাস্টম্স কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নিতে পারে না।