যুদ্ধ লাগিয়ে খেলা দেখতে রাশিয়ায় সৌদি প্রিন্স

ইয়েমেনের বন্দর শহর হোদেইদার দখল নিতে সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের সৈন্যদের সর্বাত্মক অভিযান চলছে। এর মধ্যেই রাশিয়ায় বিশ্বকাপের উদ্বোধনী খেলা দেখলেন সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান।

বৃহস্পতিবার তিনি রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে একই সারিতে বসে খেলা দেখেন তিনি। খেলায় তার দলের ভরাডুবি হয়েছে, বিধ্বস্ত হয়েছে ৫-০ গোলে।

হুতি বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণে থাকা হোদেইদার দখল নিতে বুধবার থেকে তীব্র হামলা শুরু করে সৌদি নেতৃত্বাধীন ‘সুন্নি নেটো’। সামরিক এ জোটে এশিয়া ও আফ্রিকার মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অনেক দেশের সমর্থন থাকলেও ইয়েমেনের যুদ্ধে কেবল সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের বাহিনীই লড়ছে বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম।

হোদেইদার বিমান ও সমুদ্র বন্দরের পাশাপাশি রাজধানী সানার সঙ্গে সংযোগ সড়কগুলোর নিয়ন্ত্রণ নেওয়াই এবারের হামলার মূল লক্ষ্য, জানিয়েছেন সামরিক জোটটির শীর্ষ কর্মকর্তারা।

সংযুক্ত আরব আমিরাতের কর্মকর্তারা বলছেন, হোদেইদার বন্দরগুলো দিয়েই হুতিরা প্রতিমাসে ৩০ থেকে ৪০ মিলিয়ন ডলার আয় করে। শহরটি থেকে ইরান সমর্থিত বিদ্রোহী গোষ্ঠীটিকে হটিয়ে দিয়ে রাজনৈতিক সমাধানে বসতে বাধ্য করাই এ অভিযানের লক্ষ্য।

এ দফার যুদ্ধে গোয়েন্দা তথ্য, বিমান ও মাইন পরিষ্কারে মার্কিন নৌ বাহিনীর সহযোগিতা চেয়েছিল আরব আমিরাত। মার্কিন কংগ্রেসের ভেতর বাড়তে থাকা বিরোধিতায় ইচ্ছা থাকলেও ট্রাম্প প্রশাসন সেই পথে হাঁটতে পারেনি বলে জানিয়েছে নিউ ইয়র্ক টাইমস।

যুক্তরাষ্ট্র ফিরিয়ে দেওয়ার পর ফ্রান্স হোদেইদার সমুদ্রবন্দরের আশপাশে হুতিদের পুঁতে রাখা মাইন পরিষ্কারে সৌদি নেতৃত্বাধীন জোটকে সাহায্য করতে রাজি হয় বলে দাবি আমিরাত কর্মকর্তাদের।

এ বিষয়ে পেন্টাগন ও ফরাসী কর্মকর্তাদের কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

পর্যবেক্ষকরা বলছেন,বন্দরগুলো ঝুঁকিমুক্ত হলেই কেবল স্থলসৈন্য নামানোর সাহস দেখাতে পারবে সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত। সম্মুখসমর ছাড়া হোদেইদা থেকে হুতিদের হটানো সহজ হবে না বলেও মত তাদের।

এদিকে অভিযান শুরুর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সংযুক্ত আরব আমিরাতের চার সৈন্য নিহত হন বলে দেশটির কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেছেন।

হোদেইদার বন্দর থেকে ২০ মাইল দূরে থাকা আমিরাতের নৌযানে হুতিদের ছোড়া জাহাজবিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানলে এ ঘটনা ঘটে।

বৃহস্পতিবার সৌদি জোট হোদেইদার বিমানবন্দর দখলে তুমুল আক্রমণ চালায়, জানিয়েছে নিউ ইয়র্ক টাইমস। দীর্ঘদিন ধরে অবরুদ্ধ ইয়েমেনে আন্তর্জাতিক সাহায্যের প্রায় ৮০ শতাংশই এ বিমান বন্দর দিয়ে প্রবেশ করে।

সর্বাত্মক এ যুদ্ধের মধ্যেই বৃহস্পতিবার মস্কোর স্টেডিয়ামে বসে সৌদি আরবের খেলা দেখেন ইয়েমেনে ‘সুন্নি নেটো’র অভিযানের ‘মাস্টারমাইন্ড’ খ্যাত ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান।

রুশ প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বিলাসবহুল বক্সে বসে সৌদি ফুটবল দলের জন্য উল্লাস প্রকাশ করতেও দেখা গেছে তাকে।

রাশিয়ার তৃতীয় গোলের পর পুতিনের দিকে তাকিয়ে সৌদি ক্রাউন প্রিন্সের হতাশার অঙ্গভঙ্গিও ধরা পড়ে টিভি ক্যামেরায়। মোহাম্মদের দিকে সেসময় পুতিনের ছিল সহানুভূতিশীল দৃষ্টি।

যুদ্ধের কারণে দেশটির দুই কোটি ৮০ লাখ বাসিন্দার মধ্যে ৮০ লাখই দুর্ভিক্ষের হুমকির মধ্যে আছে বলে সতর্ক করেছে জাতিসংঘও।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)