সুন্দরবনে পশুর নদে ডুবে যাওয়া কয়লা বোঝাই কার্গো জাহাজ দেড় মাস পর উদ্ধার

এস.এম. সাইফুল ইসলাম কবির, বাগেরহাট :

দেড় মাস পর অবশেষে উদ্ধার হলো সুন্দরবনের হারবাড়িয়া পশুর চ্যানেলে ডুবে যাওয়া কয়লা বোঝাই কার্গো জাহাজ এমভি বিলাশ। বুধবার দুপুরের ভরা জোয়ারে উদ্ধারকারী নৌযানের সাহায্যে ভাসিয়ে দুর্ঘটনাস্থলের অদূরে কানাইনগর এলাকার নদীর চরে রাখা হয়েছে এ কার্গো জাহাজটি। জাহাজটি উদ্ধার হওয়ায় নৌযান চলাচলের জন্য এখন পুরোপুরি ঝুঁকিমুক্ত হলো বন্দরের পশুর চ্যানেল।
উল্লেখ্য, গত ১৪ এপ্রিল ভোর রাতে বিদেশী বাণিজ্যিক জাহাজ মাদার ভ্যাসেল থেকে ৭শ’ ৭৫ মেট্রিক টন কয়লা নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে যাওয়ার পথে হারবাড়িয়ার ৬নং বয়া এলাকায় ডুবো চরে আটকে যায় কার্গোটি। বহুবার ওখান থেকে সরানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হয় কার্গোতে থাকা নাবিকরা। পরিশেষে তলা ফেটে ডুবে যায় কয়লা বোঝাই বিলাশ নামের ওই কার্গো জাহাজটি। আর এ দুর্ঘটনাটি সুন্দরবনের অভ্যন্তরে হওয়ায় বনবিভাগ ও পরিবেশ অধিদপ্তর এবং মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তর সমূহে ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়। প্রথমে বন্দরের উদ্ধারকারী জাহাজ এমটি শিপসা এসে উদ্ধারের চেষ্টা করে। তার সাথে সহায়তা করে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড সদস্যরা। কিন্তু সকল চেষ্টা নিষ্ফলের পর মালিক পক্ষ উদ্ধারকারী প্রতিষ্ঠানকে ডুবন্ত কার্গো উদ্ধারের জন্য চুক্তি করে। উদ্ধারকারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স হোসেন স্যাভেস কোম্পানির সাথে ২৪ এপ্রিল কার্গো জাহাজটি দ্রুত উত্তোলনের জন্য চুক্তিপত্র করা হয়। এর পর থেকে শুরু করে কার্গো জাহাজ উত্তোলনের কাজ। ২৭ এপ্রিল পুরোদমে কাজ শুরু করে স্যালভেস কোম্পানির লোকজন। এ কাজের জন্য তার প্রতিষ্ঠানের ২৪ জন এবং মালিক পক্ষের ১২ জন ডুবুরি দল কাজ করে। তাদের ডুবুরী দলের লোকসহ সেখানে ৩৬ জনের উদ্ধারকারী দল কাজ করছিল। এখানে একটি উদ্ধারকারী জাহাজ এমভি হাইপ্রিড ও তাদের থাকা-খাওয়া এবং প্রয়োজনীয় মেশিনারীজ জিনিসপত্র রাখার জন্য এমভি হরিণটানা নামে একটি জাহাজ ঘটনাস্থলে অবস্থান করে বলেও জানান হোসেন স্যালভেজের মালিক সোহরাব হোসেন। প্রথম পর্যায়ে ডুবন্ত এ কার্গো জাহাজটি উদ্ধারে মালিক পক্ষকে ১৫ দিনের সময়সীমা বেঁধে দেয় মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ। জাহাজটির কয়লা অপসারণ ও উদ্ধার কাজ শুরু হওয়ার পর নানা বিড়ম্বনায় পড়তে হয় মালিক পক্ষকে। পরবর্তীতে দ্বিতীয় দফায় ৩ মে আরও ২৫ দিনের সময় নিয়ে ডুবন্ত কার্গো জাহাজটি উদ্ধার করা হয়। অনেক ঝুট-ঝামেলা শেষে ডুবন্ত কার্গো জাহাজের কয়লা অপসারণের পর ২৮ মে থেকে খালি কার্গোটি উদ্ধারের চেষ্টা করা হয়। কার্গো জাহাজটিতে বালু পড়া এবং তলা ফেটে যাওয়ার ফলে মধ্য থেকে দু’টি খণ্ড করে উদ্ধার করা হয়েছে। এদিকে ডুবন্ত ওই জাহাজে থাকা ৭৭৫ মেট্রিক টন কয়লার মধ্যে মাত্র ৪শ’ মেট্রিক টন এ পর্যন্ত অপসারণ করা হয়েছে। বাকী কয়লা নদীর জোয়ার ভাটায় ছড়িয়ে পড়েছে আর কিছু কয়লা এখনও দ্বি-খণ্ডিত কার্গো জাহাজটির অভ্যন্তরে রয়েছে বলে জানিয়েছেন উদ্ধারকারীরা।
পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জ কর্মকর্তা মোঃ শাহিন কবির বলেন, সকালের জোয়ারে কার্গো জাহাজটি ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে আনা হয়েছে। কার্গোটি উদ্ধার করে আনার সময় বন বিভাগের একটি টিম ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিল। ঘটনাস্থল অনেক গভীরতা হওয়ায় এবং পানির স্রোত থাকায় কাজ করতে সমস্যা হয়েছে, না হলে আরো ১০ দিন আগে এটিকে উত্তোলন করা সম্ভব হতো। এছাড়াও বন বিভাগের পক্ষ থেকে বনের ক্ষয়ক্ষতি উল্লেখ করে থানায় একটি সাধারণ ডায়রি ও একটি মামলা হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এখন বনের ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা নেবে। বাংলাদেশ নৌ-যান শ্রমিক ফেডারেশনের সহ-সভাপতি বাহারুল ইসলাম বাহার জানান, বিদেশী একটি জাহাজ থেকে কয়লা বোঝাই করে ছেড়ে আসা কার্গো এমভি বিলাস ডুবে যাওয়ার পর থেকে মালিক পক্ষ এটিকে উদ্ধারের জন্য প্রতিনিয়ত চেষ্টা করে যাচ্ছিল। অনেক চেষ্টার পর সর্বশেষ গতকাল কয়লা অপসারণ করে কার্গোটিকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। তবে ডুবে যাওয়ার সময় জাহাজে থাকা ৯ নাবিক সবাই জাহাজের কাছেই আছে। এছাড়া নৌ-পরিবহন মালিক গ্রুপ, নৌযান শ্রমিক ফেডারেশন ও কার্গো মালিক পক্ষের সবাই জাহাজটি উদ্ধারের পর সেখানে অবস্থান করছে।
এদিকে কয়লা বোঝাই ডুবন্ত কার্গো জাহাজ উত্তোলনে দেরি হওয়ায় উদ্বেগ জানিয়ে সেভ দ্যা সুন্দরবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান লায়ন ড. শেখ ফরিদুল ইসলাম বলেন, এ কয়লায় রয়েছে সালফার, সিসা, ক্রোমিয়াম, ক্যাডমিয়াম, পারদ, নিকেল, সেলেনিয়াম, বেরিলিয়াম, রেডিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ ও আর্সেনিকের মতো ক্ষতিকর সব পদার্থ। দীর্ঘ সময় কয়লাগুলো পানিতে ভিজে থাকায় এসব ক্ষতিকারক পদার্থ পানির সঙ্গে মিশে গেছে। আর এখন যেভাবে পাইপ দিয়ে কয়লা উত্তোলন করা হয়েছে, তাতে কয়লা উঠছে ঠিকই, কিন্তু এর ক্ষতিকারক রাসায়নিক পদার্থ পানি ও মাটিতে মিশে মাটির গুণাগুণ নষ্ট করবে। এতে অঙ্কুরোদ্গম ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তিনি আরো বলেন, কয়লা বোঝাই জাহাজটি যে স্থানে ডুবেছে, সেখানে ইরাবতী ডলফিনের বিচরণক্ষেত্র। লবণ পানির কুমিরের প্রজননেরও সময় এটা। ফলে কয়লার বিষাক্ত রাসায়নিকের কারণে ডলফিন ও কুমিরের জীবনচক্র ব্যাহত হতে পারে। অন্যান্য জলজ প্রাণীর প্রজননও হুমকিতে পড়বে। একই সঙ্গে মাছসহ অন্যান্য প্রাণী ও আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া রামপাল তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র চালু হলে সুন্দরবনে এ ধরনের দুর্ঘটনা ক্রমশই বৃদ্ধি পাবে। তাই সুন্দরবনের সুরক্ষায় এখনই সরকারকে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ অবস্থান থেকে সরে আসার আহ্বান জানায় এ নেতা।
মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের হারবার মাস্টার কমান্ডার এম অলিউল্লাহ জানান, বন্দরের হারবাড়িয়া এলাকায় বিদেশী জাহাজ থেকে ছেড়ে আসা কার্গো জাহাজ ডুবির জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানসহ একটি টিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছিল। মালিকপক্ষকে প্রথমে ১৫ দিনের সময় দেয়া হয়েছে। পরে আরো ২৫ দিনের সময় দেয়া হয়েছে তবে কার্গোটি উদ্ধার হয়েছে কিন্তু সময় বেশী লেগেছে। তার পরেও বন্দরের পশুর চ্যানেল এখন পরিষ্কার, এবং ঝুঁকিমুক্ত রয়েছে। যদি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে উত্তোলন করতে না পারতো তবে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হতো বলেও জানান তিনি। তাই সুন্দরবনের সুরক্ষায় এখনই সরকারকে রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ অবস্থান থেকে সরে আসার আহবান জানায় এ নেতা। মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের হারবার মাষ্টার কমান্ডার এম অলিউল্লাহ জানান,বন্দরের হারবাড়িয়া এলাকায় বিদেশী জাহাজ থেকে ছেড়ে আসা কার্গো জাহাজ ডুবির জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানসহ একটি টিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছিল। মালিকপক্ষকে প্রথমে ১৫ দিনের সময় দেয়া হয়েছে। পরে আরো ২৫ দিনের সময় দেয়া হয়েছে তবে কার্গোটি উদ্ধার হয়েছে কিন্ত সময় বেশী লেগেছে। তার পরেও বন্দরের পশুর চ্যানেল এখন পরিষ্কার, এবং ঝুঁকিমুক্ত রয়েছে। যদি নিদিষ্ট সময়ের মধ্যে উত্তোলন করতে না পারতো তবে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হতো বলেও জানায় ।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)