গবাদি পশুর বর্জ্য থেকে বায়োগ্যাস

ডেস্ক রিপোর্ট :

গবাদি পশুর বর্জ্য ও রক্ত সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সার হিসেবে ব্যবহারের পাশাপাশি বায়োগ্যাস উৎপাদনসহ মাছের খাবার হিসেবে ব্যবহারের প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। বাংলাদেশের গবাদি পশুর বর্জ্য থেকে বায়োগ্যাস উৎপাদনে প্রথমবারের মতো সফল হয়েছেন গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার কৃতি সন্তান ও সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি শক্তি ও যন্ত্র বিভাগের চেয়ারম্যান এবং ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্ম পাওয়ার অ্যান্ড মেশিনারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ রাশেদ আল মামুন।

তিনি গবেষণা করে বের করেছেন, প্রতি কেজি মুরগির বর্জ্য থেকে ২৭.২০ মিলি, প্রতি কেজি গরুর বর্জ্য থেকে ২.৫ মি.লি, প্রতি কেজি ছাগলের বর্জ্য থেকে ৩৯.০০ মি.লি এবং গরু, ছাগল ও মুরগির সমন্বিত বর্জ্য থেকে ৭৪.১০ মি.লি বায়োগ্যাস বা মিথেন পাওয়া যায়।

উন্নত দেশের মতো বাংলাদেশেও রযেছে প্রচুর গরু এবং হাঁস মুরগির খামার। ইসলামিক ও উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশে রয়েছে অনেক কসাইখানা ও পোল্ট্রি দোকানও। যেখানে প্রতি দিন হাজার হাজার গরু, ছাগল, হাঁস ও মুরগি জবাই করা হয়। কিন্তু সুষ্ঠু বর্জ্য ব্যবস্থাপনা না থাকায় এসব জবাইকৃত পশুর পাকস্থলীর বর্জ্য এবং রক্ত বেশির ভাগই ফেলা হয় নদী নালা বা খোলা জায়গায়। যা বাতাস, পানি ও মাটি দূষিত করে।

এমনকি এটি মানুষের স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকর। কারণ এই বর্জ্য পঁচে প্রচুর পরিমাণ মিথেন গ্যাস নির্গত হয় যা গ্রিনহাউস গ্যাস হিসেবে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের চেয়ে ২৫ গুন বেশি ক্ষতিকর ভূমিকা রাখে। বাংলাদেশে বছরে গড়ে প্রতি গরু থেকে ৬.৭৭ কেজি, মহিষ থেকে ৫.২৪ কেজি, প্রতি ছাগল বা ভেড়া থেকে ০.২০৩ কেজি এবং প্রতি মুরগি বা হাঁস থেকে ০.০২৪ কেজি মিথেন নির্গত হয় বলে গবেষণায় দেখা গেছে।

নবায়ণযোগ্য জ্বালানি হিসেবে বায়োগ্যাস উন্নত বিশ্বে এখন বহুল পরিমাণে ব্যবহৃত হচ্ছে। বর্জ্য ভেদে ৬০-৬৫ শতাংশ মিথেন গ্যাস পাওয়া যায় বায়োগ্যাস থেকে। এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশে জবাইকৃত পশুর বর্জ্যের পরিমাণ ছিল ২.২০ বিলিয়ন কেজির মতো যার প্রায় পুরোটাই অব্যবহৃত থাকে। অপর এক জরিপে দেখা যায়, ২০১৫ সালে প্রায় ৩০.২১ মিলিয়ন গরু ও মহিষ, ২৫.৬৯ মিলিয়ন ছাগল ও ভেড়া এবং ১৬০.৭০ মিলিয়ন পোল্ট্রি রয়েছে যা থেকে প্রায় ১০ বিলিয়ন কেজির মতো বর্জ্য সংগ্রহ করা সম্ভব হতো। যদি এর ৫০ শতাংশ বর্জ্যও নবায়নযোগ্য জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা যায় তাহলে তা বিদ্যুৎ ও জ্বালানিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে।

এ প্রসঙ্গে গবেষক ড. মুহাম্মদ রাশেদ আল মামুন জানান, প্রতি ১৫ কেজি পাকস্থলীর বর্জ্য থেকে প্রায় ১ ঘনমিটার বায়োগ্যাস উৎপাদন সম্ভব।

তিনি বলেন, বর্জ্য থেকে সার উৎপাদনের পাশাপাশি প্লেট আকারে মাছের খাবার হিসেবেও ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে। সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে বৃহৎ পরিসরে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করা হলে বাংলাদেশে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে নতুন দিগন্তের সূচনা করা সম্ভব।

উল্লেখ্য, ড. মুহাম্মদ রাশেদ আল মামুন ২০১৬ সালে জাপানের কুমামোতু বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যাডভান্স টেকনোলজির উপর পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। এছাড়া গবেষণায় সাফল্যের জন্য একই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট পদকসহ সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রেষ্ঠ প্রকাশনা পুরস্কার লাভ করেন। গত বছর জলবায়ু ব্যবস্থাপনা বিষয়ক গবেষণার জন্য শ্রেষ্ঠ গবেষক হিসেবে ‘কিংডম অব সৌদি এরাবিয়া’ আন্তর্জাতিক পদক অর্জন করেন।

তিনি গাজীপুরের কালীগঞ্জ পৌর এলাকার ৬নং ওয়ার্ডের ভাদগাতী গ্রামের মুহাম্মদ বাছেদ ও মাহ্ফুজা বেগম দম্পতির সন্তান। তিন ভাই এক বোনের মধ্যে তিনি সবার বড়।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)