অবশেষে ডানা মেলল বঙ্গবন্ধু-১

ডেস্ক রিপোর্ট:

অবশেষে বহুল প্রতীক্ষিত এবং ঐতিহাসিক স্বপ্নযাত্রার শুরু হলো। প্রথম চেষ্টায় ব্যর্থ হওয়ার পর দ্বিতীয় দফায় মহাকাশে সফল উড্ডয়ন করল বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার পথে মহাকাশে পদচিহ্ন আঁকল বাংলাদেশ।

বাংলাদেশ সময় শুক্রবার দিবাগত রাত ২টা ১৪ মিনিটে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের কেপ ক্যানাভেরাল লঞ্চপ্যাড থেকে মহাকাশপানে যাত্রা শুরু করে।

দেশের প্রথম এ কৃত্রিম উপগ্রহ উৎক্ষেপণের মধ্য দিয়ে টেলিযোগাযোগ ও সম্প্রচারে নতুন যুগের সূচনা হলো।

আরও পড়ুন: কতদিনে পৌঁছাবে বঙ্গবন্ধু-১

মহাকাশের পথে যাত্রার সব প্রস্তুতি শেষ হলেও গত রাতে উৎক্ষেপণ হয়নি বাংলাদেশের প্রথম স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১। সামান্য কারিগরি সমস্যার কথা উল্লেখ করে নির্ধারিত সময়ের ৪২ সেকেন্ড আগে তা স্থগিত করা হয়।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় ফেসবুক পোস্টে উৎক্ষেপণ স্থগিত প্রসঙ্গে লেখেন, ‘উৎক্ষেপণের শেষ মুহূর্তগুলো কম্পিউটার দ্বারা সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিয়ন্ত্রিত হয়। হিসেবে যদি একটুও এদিক সেদিক পাওয়া যায়, তাহলে কম্পিউটার উৎক্ষেপণ থেকে বিরত থাকে। আজ যেমন নির্ধারিত সময়ের ঠিক ৪২ সেকেন্ড আগে নিয়ন্ত্রণকারী কম্পিউটার উৎক্ষেপণের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে।’

আরও পড়ুন : বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট ১ : আরেকটি স্বপ্নের বাস্তবায়ন

‘স্পেসএক্স সবকিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে আগামীকাল একই সময়ে আবারও আমাদের প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ বহনকারী রকেটটি উৎক্ষেপণের চেষ্টা চালাবে। যেহেতু এ ধরণের বিষয়ে কোনো ঝুঁকি নেয়া যায় না, সেহেতু উৎক্ষেপণের মোক্ষম সময়ের জন্য অপেক্ষা করা খুবই সাধারণ বিষয়, চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই।‘

স্পেসএক্স জানায়, বাংলাদেশ সময় শুক্রবার দিবাগত রাত ২টা ১৪মিনিট থেকে পরবর্তী দুই ঘণ্টার মধ্যে বঙ্গবন্ধু-১ উৎক্ষেপণের কাজ আবারও শুরু হবে।

আরও পড়ুন : গ্রাউন্ড সিস্টেমের সমস্যার কারণে পেছাল উৎক্ষেপণ

গতকাল রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছাত্রলীগের ২৯তম জাতীয় সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণে দেরি হওয়ায় মন খারাপ না করার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘অবশ্যই বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণ হবে, আমরা মহাকাশ জয় করব, ইনশাল্লাহ।’

স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ উপলক্ষে ফ্লোরিডার অরল্যান্ডোতে উপস্থিত  মহিউদ্দিন সরকার জানান, ফ্লোরিডার আবহাওয়া আজও বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণের অনুকূলে ছিল। আজও ক্যানাভেরাল লঞ্চপ্যাড এলাকায় ঐতিহাসিক মাহেন্দ্রক্ষণের সাক্ষী হতে উপস্থিত হয়েছিলেন বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশিসহ বিভিন্ন দেশের সাংবাদিকরা।

আরও পড়ুন : মন খারাপের কিছু নেই, অবশ্যই উৎক্ষেপণ হবে

স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ উপলক্ষে সেখানে আরও উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল।

জুনাইদ আহমেদ পলক সে সময় বলেন, ‘আমরা অত্যন্ত আবেগঘন এবং আনন্দময় পরিবেশের মধ্যে আছি। কারণ বিশ্বের ৫৭তম দেশ হিসেবে আমরা স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করতে যাচ্ছি। স্যাটেলাইটটি মহাকাশে বাংলাদেশের উপস্থিতি জানান দেবে। পাশাপাশি স্যাটেলাইটটি আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে আরও উৎসাহিত এবং অনুপ্রাণিত করবে।’

আরও পড়ুন : মহাকাশে বাংলাদেশের উপস্থিতি জানান দেবে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট

তিনি বলেন, ‘প্রযুক্তিনির্ভর অর্থনীতি গড়ার ডাক দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে প্রযুক্তিনির্ভর স্যাটেলাইট যুগে বাংলাদেশ প্রবেশ করেছে ১৯৭৫ সালের ১৪ জুন। সে সময় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বেতবুনিয়ায় স্যাটেলাইটের প্রথম আর্থ স্টেশন স্থাপন করেন। আজ দীর্ঘদিন পরে হলেও তারই কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার সাহসী এবং দূরদর্শী নেতৃত্বে আমরা মহাকাশ জয়ের পথে এগিয়ে যাচ্ছি।’

পলক বলেন, ‘আমরা আশা করছি বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের মধ্য দিয়ে মহাকাশে বাংলাদেশের উপস্থিতি নিশ্চিত করব। পাশাপাশি এ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের মধ্য দিয়ে দেশের অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেও গতিশীলতা আসবে। আমাদের কমিউনিকেশন স্যাটেলাইটের যে তিনটি মূল উদ্দেশ্য, টেলিকমিউনিকেশন, ব্রডকাস্টিং এবং ডেটা কমিউনিকেশন- এই তিনটি ক্ষেত্রেই বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট অর্থনৈতিকভাবে আমাদের বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় করবে।’

আরও পড়ুন : মহাকাশে বাংলাদেশের উপস্থিতি জানান দেবে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট

যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা ও প্রযুক্তি সংস্থা স্পেসএক্সের ‘ফ্যালকন-৯’ রকেটে করে স্যাটেলাইটটি মহাকাশে পাঠানো হয়। এর মাধ্যমে বিশ্বের ৫৭তম স্যাটেলাইট সদস্য দেশের তালিকায় বাংলাদেশের নাম প্রবেশ করলো।

বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটের মূল অবকাঠামো তৈরি করেছে ফ্রান্সের প্রযুক্তি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান থ্যালেস অ্যালেনিয়া স্পেস। গত ২৮ মার্চ (বুধবার) কানের থ্যালেস অ্যালেনিয়া স্পেস প্ল্যান্ট ত্যাগ করে স্যাটেলাইটটি। পরে স্যাটেলাইট বহনকারী কার্গো বিমান অ্যানতোনোভ নাইস বিমানবন্দর থেকে ২৯ মার্চ যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে।

আরও পড়ুন :  বেতবুনিয়া থেকে ফ্লোরিডা

ওই দিন ফ্রান্সের স্থানীয় সময় সকাল ৬টা থেকে ৮টার মধ্যে বিমানটি যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্যে উড্ডয়ন করে। ২৯ মার্চ বোস্টনে যাত্রাবিরতির করে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ বহনকারী কার্গোবিমান। ৩০ মার্চ এটি ফ্লোরিডার কেপ ক্যানাভেরাল পৌঁছায়।

২০১৫ সালের নভেম্বরে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন-বিটিআরসি ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১’ নির্মাণের জন্য ফ্রান্সের থ্যালেস অ্যালেনিয়া স্পেসের সঙ্গে চুক্তি সই করে। ওই বছর মূল স্যাটেলাইট তৈরির কাজ শুরু হলেও এর প্রস্তুতিমূলক কাজ শুরু হয় ২০১২ সালে।

আরও পড়ুন: অর্থনীতির নয়া সম্ভাবনাময় ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট’

বাংলাদেশের প্রথম এ স্যাটেলাইট প্রকল্পে মার্কিন পরামর্শক প্রতিষ্ঠান স্পেস পার্টনারশিপ ইন্টারন্যাশনাল (এসপিআই) ২০১২ সাল থেকে বিটিআরসির পরামর্শক হিসেবে কাজ করেছে। এ প্রতিষ্ঠানের পরামর্শে প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই, অর্থায়ন, দরপত্র, অরবিটাল স্লট কেনাসহ অন্যান্য সব কাজ করেছে বিটিআরসি।

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের মোট ৪০টি ট্রান্সপন্ডার রয়েছে। এর মধ্যে ২০টি ট্রান্সপন্ডার বাংলাদেশের ব্যবহারের জন্য রাখা হবে। বাকি ২০টি ট্রান্সপন্ডার বিদেশি প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করা হবে। স্যাটেলাইটটি ১৫ বছর মেয়াদের মিশনে পাঠানো হচ্ছে।

স্যাটেলাইটের কার্যক্রম পুরোপুরি শুরু হলে আশপাশের কয়েকটি দেশে টেলিযোগাযোগ ও সম্প্রচার সেবা দেয়ার জন্য জিয়োসিক্রোনাস স্যাটেলাইট সিস্টেম (৪০ ট্রান্সপন্ডার, ২৬ কেইউ ব্র্যান্ড, ১৪ সি ব্যান্ড)-এর গ্রাউন্ড সিস্টেমসহ অন্যান্য সেবা নিশ্চিত করা যাবে।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)