সাতক্ষীরায় প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে আমে মিশানো হচ্ছে ক্ষতিকারক ক্যামিকেল

নিজস্ব প্রতিনিধি:

সাতক্ষীরার বাজারে বিষমুক্ত আম সরবরাহ ও বিক্রি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলেও অনেকাংশে তা মানা হচ্ছে না। অধিক মুনাফা লাভের আশায় কিছু অসাধু ব্যবসায়ী প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে অপরিপক্ক আম পকানোর জন্য ব্যবহার করছে ক্ষতিকারক ক্যামিকেল। শহরের সুলতানপুর বড়বাজারের আশেপাশে বেশ কিছু এলাকায় অস্থায়ী ঘর নির্মাণ করে আম সাজিয়ে রেখে গোপনে এই ক্যামিকেল মিশানো হচ্ছে। ক্যামিকেল মেশানোর একদিন পর এসব আম কার্টুনে ভরে ট্রাকে করে পাঠানো হচ্ছে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায়। সম্প্রতি শহরের ইটাগাছা এলাকা থেকে ক্যামিকেল মেশানো ট্রাক ভর্তি ৬ লাখ টাকা মূল্যের ৩’শ মণ আম জব্দ করেছে ডিবি পুলিশ। তবে, এ সময় ডিবি পুলিশ কোন অসাধু ব্যবসায়ীকে আটক করতে সক্ষম হয়নি। দেশব্যাপী সাতক্ষীরার আমের সুখ্যাতি থাকায় ক্যামিকেল দিয়ে পাকানো এসব আম কিনে প্রতারিত হচ্ছেন ক্রেতারা। পড়ছেন স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মৌসুমের শুরুতেই সাতক্ষীরার বাজারে বিষমুক্ত আম সরবরাহ ও বিক্রি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। ব্যবসায়ীরা যাতে আমে ক্ষতিকারক ক্যামিকেল না মিশিয়ে বাজারজাত করতে পারে সে জন্য সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি নিয়মিত বাজার পরিদর্শনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। কিন্তু কিছু অসাধু ব্যবসায়ী অধিক মুনাফা লাভের আসায় প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বাগান থেকে অপরিপক্ব আম পেড়ে দ্রুত পাকানোর জন্য ক্ষতিকারক ক্যামিকেল ব্যবহার করছে। সকালে বাগান থেকে পাড়ার পর দুপুরে দিকে এসব আম সুলতানপুর বড়বজারের আশে পাশে কিছু নির্দিষ্ট স্থানে এনে মাটিতে বিছানো কাগজ কিম্বা পলের উপর রেখে স্প্রে করা হচ্ছে ক্ষতিকারক কেমিকেল। এতে করে অপরিপক্ক আমে দ্রুত রং চড়ে যাচ্ছে। পরে এসব আম কার্টুন কিম্বা প্লাস্টিকের ক্যারেটে ভরে সন্ধ্যায় ট্রাকে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায়।

শহরের সুলতানপুর বড়বাজারে পাশে পিটিআই সংলগ্ন একটি খোলা মাঠসহ বিভিন্ন স্থানে স্প্রে করার জন্য আম সাজিয়ে রাখা হচ্ছে। হিম সাগর, ল্যাংড়া, আম্রপালীসহ বিভিন্ন আমের সেখানে রাখা হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা বেশি দামে বিক্রির আশায় অপরিপক্ব আম গাছ থেকে পেড়ে ক্যামিকেল মিশিয়ে জেলার বাইরে পাঠাচ্ছে। কিছু গাছে পাকা আম দেখা গেলেও অধিকাংশ রয়েছে অপরিপক্ব। জিজ্ঞাসা করতে একজন ব্যবসায়ী জানালেন, আমের আটা শুকানোর জন্য এভাবে রাখা হচ্ছে। এখানে আমে কোন ক্যামিকেল মিশানো হয় না। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন কর্মচারী জানালেন, আমা সাজানোর পরেই রং চড়ানোর জন্য একটা ঔষধ স্প্রে করা হবে। পরে সন্ধ্যায় ক্যারেটে ভরে ঢাকায় পাঠনো হবে এই আম। তবে এসব আম শহরের বাজারে বিক্রি হচ্ছে না। প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দেয়ার জন্য ব্যবসায়ীরা বাজার ছেড়ে পার্শ্ববর্তী নিরাপদ এলাকায় আম পাকানোর এ ব্যবস্থা নিয়েছে বলে জানা গেছে। তবে, সচেতন মহলের দাবী আমে যাতে কোন অসাধু ব্যবসায়ী আর ক্ষতিকারক ক্যামিকেল না মেশোতে পারে সেজন্য প্রশাসন যেন যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।

সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ কাজী আব্দুল মান্নান জানান, চলতি মৌসুমে সাতক্ষীরা জেলায় ৪ হাজার ১ ’শ হেক্টর জমিতে আম চাষ করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ২’শ মেট্রিকটন আম এবারও ইউরোপের বাজারে রপ্তানী হবে।

তিনি আরো জানান, বিদেশের বাজারে সাতক্ষীরার উৎপাদিত আমের সুনাম ধরে রাখতে হলে ক্ষতিকারক ক্যামিকেল মিশানো বন্ধ করতে হবে। আমে ক্ষতিকারক ক্যামিকেল মিশানো বন্ধ করতে ইতিমধ্যে ব্যবসায়ীদের সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি বাজার পর্যবেক্ষণ জোরদার করা হয়েছে। তবে সাতক্ষীরা অঞ্চলে এধরনের প্রবণতা আগের তুলনায় অনেক কমেছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)