কলারোয়ায় ছবি আঁকিয়ে অনন্য প্রতিভায় শাওন

কলারোয়া প্রতিনিধি :

সাতক্ষীরার কলারোয়ায় এক অনন্য প্রতিভার নাম নাঈম হাসান শাওন। নিজের অদম্য ইচ্ছাশক্তি আর প্রচেষ্টাকে এক করে সুপ্ত প্রতিভা বিকশিত করে চলেছে সে। একেকজনের একেকটি প্রতিভা থাকে। শাওনের প্রতিভা ছবি আঁকাতে। চিত্রাঙ্কন, হোক সেটা ব্যক্তি বিশেষের, প্রকৃতির কিংবা যেকোন ছবির। শাওনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিভা হলো সে যেকোন ছবি অনেকটা হুবুহু আকঁতে পারে। কাগজে পেন্সিল, রং-তুলির ছোঁয়ায় ‘সাধ আর সাধ্য’কে কাছাকাছি নিয়ে এসেছেন শাওন।
ছোট্ট কোমলমতি নাঈম হাসান শাওন ৬মে এস.এস.সি পরীক্ষার ফলাফলে জিপিএ-৫ পেয়ে কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হয়ে কলারোয়া জিকেএমকে পাইলট হাইস্কুলকে গৌরভের শিখরে তুলেছেন।


এ পর্যন্ত ২শতাধিক ছবি এঁকেছেন শাওন। যার মধ্যে বেশির ভাগই পেন্সিল স্কেচ। এছাড়া জল রং এবং এক্রেলিক কালারের ছবিও রয়েছে অনেক।
বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছেন ১০ বারের মতো। এরমধ্য প্রথম হয়েছে ৬বার। যদিও ছবি আঁকার উপর কোন প্রাতিষ্ঠানিক বা একাডেমিক প্রশিক্ষণ কিংবা শিক্ষা তার নেই।
ছোট বেলা থেকেই ছোটখাটো অংকনে আগ্রহী ছিলো শাওন। কলারোয়া পৌরসদরের তুলশীডাঙ্গা গ্রামের শিক্ষক রুহুল কুদ্দুস, তাসলিমা খাতুনের ছোট ছেলে সে। রয়েছে বড় ভাই আর বড় আপু। তাদের অনুপ্রেরণা আর ভালোবাসায় এবং বন্ধু-শুভাকাঙ্ক্ষীদের সহযোগিতায় এ পর্যন্ত ৬টি চিত্রাঙ্কন প্রদর্শনীও হয়েছে ২০০২সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি জন্ম নেয়া এ কিশোরের।
নাঈম হাসান শাওন জানান- ‘আমি ছোটবেলা থেকেই টুকটাক ছবি আঁকতাম। আমার ছবি আঁকার প্রিয় মাধ্যম হলো পেন্সিল কালার। এছাড়া জল রং, পেন, এক্রেলিক কালার দিয়েও আঁকতে পছন্দ করি। আমি কখনও কোনো একাডেমীতে শিখতে যাইনি। আমি আমার ভাইয়া ও আপুর সাথে বসে আঁকতাম ছোটবেলায়। তাদের অনুকরণ করেই আঁকতাম। এরপর কয়েক বছর আর তেমন আঁকা পড়তো না। কিন্তু কলারোয়া সরকারি প্রাইমারিতে ৫ম শ্রেণিতে থাকতে আমি বইয়ের মধ্যে থাকা ছবি গুলো অনুকরণ করা শুরু করি। বই তে থাকা কবি, বীরশ্রেষ্ঠদের ছবি, রাজাদের ছবি, রাজপ্রাসাদ ইত্যাদি আঁকতাম।


শাওন আরো জানান- ‘আমার আঁকা প্রথম প্রোটের্ট হলো শহিদ তিতুমীরের ছবি। যেটি কিনা আমি ২য় শ্রেণিতে থাকতে আঁকি। আমি এটা দেয়ালে দেয়ালে আঁকতাম। এভাবে আমি আমার বইয়ের প্রায় সকল মহান ব্যক্তিদের ছবি এঁকে ফেলি। তারপরে কলারোয়া পাইলটে ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে থাকতে আমি অভিনেতা সজলের ছবি আঁকি। এরপর ২ বছরের আমার আর ছবি আঁকা হয়নি। তবে একেবারে বন্ধও করিনি কখনও। ৮ম শ্রেণীতে ওঠার পরে আমি প্রথম কোনো প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহণ করি। সে সময় ফেসবুকের মাধ্যমে আগে আঁকা ছবিটি অভিনেতা সজলকে দেখাই। ছবিটির প্রশংসা করে তিনি আমাকে আরও একটা ছবি এঁকে দিতে বলেন। তার কথায় আমি আরও ভালভাবে এঁকে দেয়ার জন্য আরও ভালভাবে অনুশীলন শুরু করি। এরপর থেকে আমি আমার আঁকা ছবি গুলো ফেসবুকে আপলোড দিতে থাকি।’
নিজের আঁকিয়ের ইতিহাস পর্যালোচনা করে শাওন জানান- ‘যখন ক্লাস ৯ম এ উঠি তখন আমার বন্ধুরা আমাকে স্কুলে চিত্র প্রদর্শনীর জন্য বলে। তাদের সহযোগিতায় এবং প্রধান শিক্ষকের অনুমতিক্রমে আমরা ২০১৬ সালের ১৭ জানুয়ারিতে কলারোয়া জিকেএমকে পাইলট হাইস্কুলে প্রথম বারের মতো চিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করি। ব্যাপক সাড়া পাওয়ার কারণে এরপরের বছর ২০১৭ এর ২৬ জানুয়ারিতে আরোও বড় পরিসরে ২য় বারের মতো পাইলট হাইস্কুলে প্রদর্শনী করি। এবারও আমরা আগত সকলের মন জয় করতে সক্ষম হই। এক্ষেত্রে আমাদের প্রধান শিক্ষক আব্দুর রব স্যারের অবদান অনেক । কারণ এই প্রদর্শনী দুইটির কারণে আমি ছবি আঁকার প্রতি বেশি পরিমাণে উৎসাহিত হই। এরপর থেকে আমি নিয়মিত আঁকতে থাকি।’
শাওন আরো জানান- ‘২০১৭ এর ১২ আগস্ট কলারোয়া সরকারি কলেজে আবারও আমার ৩য় চিত্রাঙ্কন প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। স্কুলের বাইরে অন্য জায়গায় করাটা আমাদের জন্য অনেক কঠিনই ছিল, তবে বন্ধু ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের সহযোগিতায় আমরা সফল হই। প্রদর্শনীতে কলারোয়া থানার ওসি বিপ্লব দেবনাথসহ অন্যান্য অতিথিরা উপস্থিত হয়ে আমাকে উৎসাহ প্রদান করেন।’
‘আমি তেমন একটা চিত্র প্রতিযোগিতায় যেতাম না এবং কোনো একাডেমিক ছাত্র না হওয়াতে তেমন কেঊ বুঝতেই পারে না আমি আঁকতে পারি কিনা এবং আমার পরিচয়’- যোগ করেন শাওন।
সমাজসেবা মূলক উন্নয়নের অন্যতম ক্ষুদ্র সংগঠক নাঈম হাসান শাওন জানান- ‘২০১৮ সালের ২৭ এপ্রিল কলারোয়া মডেল হাইস্কুলে ৪র্থ, ২৯ এপ্রিল কলারোয়া গার্লস পাইলট হাইস্কুলে ৫ম ও ৬ষ্ঠ তম প্রদর্শনীটি বামনখালি হাইস্কুলে চিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করি। শেষ দুই প্রদর্শনীতে পাইলটের ৮ম শ্রেণির শোহানা আসরাফ প্রাপ্তি সহযোগী হিসেবে অংশ নেয়। আমরা “রং-পেন্সিল” গ্রুপ এর মাধ্যমে আমাদের কয়েকটি প্রদর্শনীর প্রাপ্ত টাকা মানবসেবায় ব্যয় করি। আমার প্রদর্শনী গুলো সফল করার পিছনে সবচেয়ে বেশি অবদান রয়েছে আমার বন্ধুদের। তারা আমার প্রত্যেক কাজে সাহায্য করে।’
সে আরো জানায়- ‘বর্তমানে আমি আমাদের “স্বস্তি” নামক মানবসেবা গ্রুপেও যুক্ত রয়েছি।’

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)