কলারোয়ায় ৫ সাফল্য অর্জনকারী নারীর ইতিকথা

জুলফিকার আলী,কলারোয়া :

সাতক্ষীরার কলারোয়ায় সাফল্য অর্জনকারী ৫ নারী সমাজে বিভিন্ন সময় ভূমিকা রেখেছেন। তারা সমাজে অর্থনেতিক, শিক্ষা, চাকুরী, সফল জননী, নির্যাতনের বিভীষিকা, সমাজ উন্নয়নে কাজ করেছেন। এর মধ্যে-“অর্থনেতিক সাফল্য অর্জনকারী নারী” হলেন- কলারোয়া উপজেলার লাঙ্গলঝাড়া গ্রামের মতিয়ার রহমানের স্ত্রী নাসরিন খাতুন। তার স্বামী একজন দীনমজুর, তার সামন্য আয়ে খুব কষ্টে সংসার চলতো। তিনি স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য দর্জি কাজ শেখেন। দর্জি কাজের পাশাপাশি তিনি গ্রামের মহিলাদের দর্জি প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন। এ থেকে উপর্জিত অর্থ দিয়ে তিনি ১০কাঠা জমি কিনেছেন ও স্বামীকে বিদেশ পাঠিয়েছেন। বর্তমানে তিনি অর্থনৈতিক ভাবে সচ্ছল।“শিক্ষা ও চাকুরীর ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনকারী নারী”হলেন-কলারোয়া উপজেলার কুশোডাঙ্গা গ্রামের মৃত জীবন সরকারের মেয়ে অলোকা রাণী। জন্মের পরই তার বাবা মাকে তাড়িয়ে দেয় এবং মামার বাড়িতে আশ্রায় নেয় তারা। মা অন্যের বাড়িতে কাজ করে তাকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ায়। পরে অনেক কষ্টে সামান্য উপবৃত্তির টাকা দিয়ে টিউশনি করে অর্নাসসহ এলএলএম শেষ করে। বর্তমানে সে ঢাকা জজ কোর্টের আইনজীবী।“সফল জননী নারী”হলেন-কলারোয়া উপজেলার চন্দনপুর গ্রামের মৃত রফিকুজ্জামানের স্ত্রী রোকেয়া খাতুন। তার স্বামী একজন সামান্য কৃষক ছিলেন। তিন সন্তান জন্মের পর তার স্বামী মারা যায়। স্বামীর সংসারে আসার পর থেকে বিভিন্ন অভাব অনটনের মধ্য দিয়ে তিন সন্তানের লেখাপড়া চালিয়ে নিয়ে যায়। তার তিন সন্তানকেই এমএ পাশ করিয়েছেন। একজন ব্র্যাক কর্মকর্তা, একজন হাইস্কুলের শিক্ষক এবং অন্য জন ব্যবসায়ী। বর্তমানে রোকেয়া খাতুন সংসার জীবনে অনেক সুখেই জীবন যাপন করছেন।“নির্যাতনের বিভীষিকা মুছে ফেলে নতুন উদ্যামে জীবন শুরু করেছেন যে নারী”তিনি হলেন-কলারোয়া উপজেলার তুলসীডাঙ্গা গ্রামের জয়নাল আবেদীনের স্ত্রী মনোয়া খাতুন। অল্প বয়সেই বিয়ে হয়ে তার একটা পুত্র সন্তান হয়। স্বামী সংসারে অভাব থাকায় তাকে তার স্বামী খুবই নির্যাতন করতো। স্বামী সংসার টিকতে না পেরে সে বাবার বাড়িতে চলে আসে। কিন্তু কয়েক মাস পরেই তার বাবা তাকে অন্যত্র বিয়ে দিয়ে দেয়। সেখানেও সে নির্যাতিত হতে থাকে। তিনি সিদ্ধান্ত নেন,নির্যাতন থেকে বাঁচতে নিজেকে স্বাবলম্বী করে তুলতে হবে। এর জন্য তিনি এনজিও এর মধ্যে স্বাস্থ্য কর্মী হিসাবে প্রশিক্ষণ নেন। বর্তমানে সে স্বাস্থ্য সেবিকা হিসাবে চাকরী করছেন। পাশাপাশি বাড়িতে একটি ক্লিনিক স্থাপন করেছেন। বর্তমানে তার সুখেই দিন কাটছে।“সমাজ উন্নয়নে অসামান্য অবদান রেখেছেন যে নারী”তিনি হলেন-কলারোয়া উপজেলার দলইপুর গ্রামের মনিরুজ্জামানের স্ত্রী বিলকিস খাতুন। তার স্বামীর সংসারে অভাব থাকার কারণে সে নিজ উদ্যোগ নিয়ে বাড়ীতে ছাগল, গরু, হাঁস, মুরগী পালন করে তিন ছেলের লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছেন। পাশাপাশি যৌতুক, বাল্য বিবাহ, নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে বিভিন্ন সমাজ উন্নয়ন মূলক কাজে ভূমিকা রেখেছেন। সমাজ উন্নয়নের জন্য তিনি দলইপুর পল্লী সমাজ মহিলা সমিতি গঠন করেছেন। তার উৎসাহ ও অনুপ্রেরণায় সমিতির সদস্য ও অন্যরা সমাজ উন্নয়নে এগিয়ে আসছেন।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)