রাতে নৈশ প্রহরীকে দিয়ে দরজার হ্যাজবোল্ড ভাঙ্গালেন প্রশাসনিক কর্মকর্তা মাহাবুবর রহমান

শহর প্রতিনিধি:

নৈশপ্রহরী দিয়ে সাতক্ষীরা জেলা পরিষদের নিজ অফিস কক্ষের দরজার হ্যাজবোল্ড ভাঙিয়েছে প্রতিষ্ঠানটির প্রশাসনিক কর্মকর্তা এসএম মাহাবুবর রহমানের বিরুদ্ধে। বুধবার রাত ৯টার দিকে এ ঘটনা ঘটলেও বৃহষ্পতিবার বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে বিষয়টি পরিষদের কয়েকজন সদস্যের নজরে আসলে নৈশ প্রহরী শেখ আল হেলাল বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

সাতক্ষীরা জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম বাবু জানান, বৃহষ্পতিবার বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে তাদের অফিসের প্রশাসনিক কর্মকর্তা এসএম মাহাবুবর রহমানের কক্ষের দরজা খোলা অবস্থায় দেখতে পেলেও হ্যাজবোল্ডটি ভাঙা অবস্থায় দেখতে পান সদস্য মনিরুল ইসলাম। তিনি বিষয়টি উপস্থিত কয়েকজনন সদস্যকে অবহিত করলে তারা নৈশ প্রহরী শেখ আল হেলালকে খবর দেন। আল হেলাল জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বরাবর দেওয়া এক লিখিত স্বীকারোক্তিতে নৈশ প্রহরী শেখ আল হেলাল উল্লেখ করেন যে, বুধবার রাত ৯টার দিকে প্রশাসনিক কর্মকর্তা এসএম মাহাবুবর রহমানের নির্দেশে তার কক্ষে তালা লাগানো অবস্থায় হ্যাজবোল্ডটি ভাঙা হয়। বৃহষ্পতিবার পরিষদের কয়েকজন সদস্যের নজরে আসায় তার কাছে জানতে চাইলে তিনি ঘটনা সম্পর্কে তাদেরকে অবহিত করেন। স্বীকারোক্তির সময় মনিরুল ইসলাম, আল ফেরদৌস আলফা, মাহাফুজা সুলতানা রুবি, মতিয়ার রহমান ও তিনি উপস্থিত ছিলেন।

সাতক্ষীরা জেলা পরিষদ সদস্য  অ্যাড. শাহানাজ পারভিন মিলি জানান, অনিয়ম ও দূর্ণীতির অভিযোগে জেলা পরিষদ প্রশাসক এসএম মাহাবুবর রহমানকে বিগত জেলা পরিষদ নির্বাচনের পরদিন স্থানীয়রা অফিসে এসে লাঞ্ছিত করে। সম্প্রতি তার বিরুদ্ধে আব্দুর রউফ কমপ্লেক্সে অনিয়ম ও দূর্ণীতির মাধ্যমে জেলা পরিষদের টাকা খরচ করার অভিযোগে তদন্ত হয়। বর্তমানে তার বিরুদ্ধে দূর্ণীতির তদন্তে নেমেছ দুদক। বদলী সংক্রান্ত হাইকোর্টের খারিজ আদেশের বিরুদ্ধে মাহাবুবর রহমান সুপ্রিম কোর্টে গেলে কোন সুবিধা করতে না পেরে পরিষদের কয়েকজন সদস্যের সুপারিশে তিনি আবারো বহাল থাকেন সাতক্ষীরা অফিসে। একপর্যায়ে গত ১২ এপ্রিল দুপুরে ২৯টি পুকুর ইজারা সংক্রান্ত টে-ার ও বিকেল চারটায় মাসিক মিটিং আহবান করেন মাহাববুর রহমান। শ্যামনগরের নওয়াবেকী খেয়াঘাট ইজারার নামে ছয় লাখ টাকা নেওয়াসহ বিভিন্ন খেয়াঘাট ও পুকুর ইজারা দেওয়ার নাম করে বহু টাকা নিয়ে তিনি তার ব্যক্তিগত খরচ করেছেন বিষয়টি জানতে পেরে ১২ এপ্রিল দুপুর আড়াইটার দিকে সদস্যদের সঙ্গে মাহাবুবর রহমানের বচসা হয়। এ সময় তার উপর চড়াও হলে তিনি ক্ষমা চেয়ে এক সপ্তাহের মধ্যে চাকুরি থেকে অব্যহতি নেওয়ার কথা ঘোষণা করেন। একপর্যায়ে বিকেল ৫টার দিকে মাহাবুবর রহমান জেলা পরিষদ প্রশাসকের সঙ্গে দেখা করে তার ব্যক্তিগত সহকারি শাহীনা পারভিনের কাছে তার ইস্তফা পত্র জমা দিয়ে চলে যান। ওই ইস্তফা পত্রের অনুলিপি রোববার তাদের দেওয়ার কথা থাকলেও  ওই দিন রাত ৮টার দিকে শাহীনা পারভিনকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে ইস্তফাপত্র ফিরিয়ে নিয়ে সেখানে ছুটির দরখাস্ত জমা দেওয়া হয়।  এ ঘটনায় গত ১৭ এপ্রিল পরিষদে সাধারণ সভা আহবান করা হয়। সভায় মাহাবুবর রহমানকে বদলী, বিভিন্ন পুকুর ও ঘাটের ইজারা সংক্রান্ত তদন্ত, আশাশুনি উপজেলার ঘোলা-হিজলা-কল্যাণপুর খেয়াঘাট, হাজরাখালি-বিছট খেয়াঘাট ও মানিকখালি খেয়াঘাট ইজারা দেওয়ার ক্ষেত্রে হাইকোর্টে বিচারাধীন থাকা তিনটি রিট পিটিশনের নিষ্পতিকরণ, আব্দুর রউফ কমপ্লেক্সে নিয়ম বহির্ভুতভাবে জেলা পরিষদের টাকা না দেওয়াসহ মাহাবুবর রহমানের বিভিন্ন অনিয়ম ও দূর্ণীতি আলোচনায় আসে। একইভাবে ইস্তফাপত্রটি তুলে নিয়ে ১৫ দিনের ছুটির আবেদনপত্রটি মঞ্জুর করা হয়নি মাসিক সভায়। এসব খবর জানাজানি হওয়ার পর বুধবার অফিসে এসেও নিজের কক্ষে ঢোকেননি মাহাবুবর রহমান। এমন এক পরিস্থিতিতে বুধবার রাতে তালা না খুলে নৈশ প্রহরীকে ডেকে হ্যাজবোল্ড ভেঙে ঘরে ঢোকার বিষয়টি মাহাবুবর রহমানের নতুন অভিসন্ধি বলে মনে করা হচ্ছে।

কয়েকজন সদস্য জানান, দূর্ণীতি সংক্রান্ত কাগজপত্র সরিয়ে নিতে অফিসে এসে নৈশ প্রহরীকে দিয়ে দরজার লাগানো তালার হ্যাজবোল্ড ভাঙিয়েছেন শেখ আল হেলাল।

এ ব্যাপারে এসএম মাহাবুবর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ নজরুল ইসলাম জানান, তিনি বর্তমানে ঢাকায় অবস্থান করছেন। প্যানেল চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম বাবু তাকে দরজায় লাগানো তালার হ্যাজবোল্ড ভাঙার বিষয়টি অবহিত করেছেন।

চধঢ়বৎ-গধযধনঁন

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)