‘মাজার নিয়ে দ্বন্দ্ব’, ওরস থেকে শিশুকে তুলে নিয়ে ‘ধর্ষণ’

ডেস্ক রিপোর্ট:
‘মাজার পরিচালনা ও খাদেম নিয়ে’ দুই পরিবারের মধ্যে বিরোধের জের ধরে ওরস মাহফিল চলাকালে প্রতিপক্ষের সাত বছরের এক অবুঝ কন্যাশিশুকে তুলে নিয়ে ধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া গেছে চল্লিশোর্ধ্ব এক যুবকের বিরুদ্ধে।
স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণির ছাত্রী ওই শিশুটিকে গুরুতর আহত অবস্থায় গতকাল মঙ্গলবার রাতে প্রথমে সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে এবং পরে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
রাত ৮টার দিকে সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার সুলকাবাদ ইউনিয়নের সলুক শাহ মাজার প্রাঙ্গণ থেকে শিশুটিকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। মাজারের পাশে নিয়ে তাকে ধর্ষণ করা হয় বলে আজ বুধবার সকালে  জানিয়েছেন বিশ্বম্ভরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোল্লা মো. মনির।
ওসি আরো জানান, ঘটনার পরই শিশুটির দেওয়া ভাষ্যমতে শিশুটির প্রতিবেশী হাসান নামের এক যুবককে আটক করা হয়েছে। এ ঘটনায় শিশুটির মা আজ বুধবার সকালে বাদী হয়ে তিনজনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেছেন। আসামিরা হলো একই গ্রামের হাসান, জসীম উদ্দিন ও দানা মিয়া।
সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. বেনজামিন বলেন, ‘সাত বছরের শিশুটিকে রাত সাড়ে ১০টার দিকে হাসপাতালে আনা হয়। তখন অ্যাকটিভ ব্লিডিং হচ্ছিল এবং সেখানে টিআরও আছে। এখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে আমরা তাঁকে সিলেট হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসার জন্য স্থানান্তর করেছি।’
শিশুটির আত্মীয়স্বজন ও মামলার বরাত দিয়ে ওসি মোল্লা মো. মনির বলেন, ‘গতকাল রাতে সলুক শাহ মাজার প্রাঙ্গণে বার্ষিক ওরস মাহফিল চলছিল। শিশুটি সেখানেই খেলা করছিল। তখন হাসান ও তার কয়েকজন সহপাঠী শিশুটিকে তুলে নিয়ে যায় এবং পাশের একটি স্থানে ধর্ষণ করে।’
‘শিশুটির চিৎকারের আশপাশের লোকজন এগিয়ে এলে হাসান ও তাঁর সহযোগীরা পালিয়ে যায়। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে হাসানকে গ্রেপ্তার করে,’ যোগ করেন ওসি। তিনি আরো বলেন, ‘এই মাজারের পরিচালনা ও খাদেম নিয়ে গ্রামের দুই পরিবারের মধ্যে বিরোধ রয়েছে। তার জের ধরে এই ধর্ষণের ঘটে থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।’
শিশুটির এক ফুফু (৪৫) গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমরার বাড়িত একটা অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানের মধ্যে এই ঘটনাটা ঘটাইছে। এর আগে থেকেই আমরারে অনেক উৎপাত করতাছে। আমরারে এইখান (মাজার) থেইকা বাইর কইরা দিত। এর পরে আইজ সকালেও হইছে। আমরা চেয়ারম্যান সাহেবরে জানাইছি। এরারই ভাই-টাই নিয়া ওরে এইখান থেইকা (তুলে) নিছে। ৮টার সময় এ ঘটনা।’
শিশুটিকে সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে নিয়ে আসা ওই গ্রামের এক যুবক (৩৫) গণমাধ্যমকে বলেন, ‘চারজন লোক নাকি ওরে ধইরা নিয়া ইউনিয়ন পরিষদের অফিসের পেছনে ধর্ষণ করছে। তার মধ্যে একটা ছেলের নাম বলছে। ছেলেটার নাম হইছে হাসান। বারা নাম হইছে… । মেয়েটার মুখ থেইকা শুনছি।’
ওই যুবক আরো বলেন, ‘এখানে সাময়িক চিকিৎসা দিয়ে ডাক্তাররা বলছে, এখানে চিকিৎসা করা সম্ভব না। সঙ্গে সঙ্গে সিলেট পাঠাইয়া দিছে।’
এ ব্যাপারে সুলকাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রওশন আলী আজ সকালে  বলেন, ‘মাজার নিয়ে শিশুটির পরিবার ও হাসানের পরিবারের মধ্যে ঝামেলা আছে। শিশুটির পরিবার থেকে এখান খাদেমের দায়িত্ব পালন করছে। কিন্তু একই গ্রামের হাসানও সলুক শাহ পীরের ভক্ত। সেও তাদের অনুমতি না নিয়েই জোর-জবরদস্তি করে মাজারে প্রবেশ করতে যায়। কয়েক দিন আগে আমার কাছে দুই পক্ষ এসেছিল। আমি তাদের নিয়ে মিটমাট করে দিয়েছি। কিন্তু শিশুটির প্রতি যে আক্রোশ ছিল, তা তো বুঝতে পারি নাই।’
Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)