দেশের তৃতীয় সাবমেরিন কেবল স্থাপিত হবে ৬৯৩ কোটি টাকায়

ডেস্ক নিউজ:

উচ্চ গতির ইন্টারনেট নিশ্চিত করার জন্য তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবলে যুক্ত হচ্ছে বাংলাদেশ। সরকার আশা করছে, ফাইভ-জি বা পঞ্চম প্রজন্মের প্রযুক্তির যুগে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও প্রবৃদ্ধিতে মাইলফলক হবে এ ক্যাবল।

ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ‘বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে তৃতীয় সাবমেরিন কেবল স্থাপন’ শীর্ষক একটি প্রকল্প নেয়া হচ্ছে। বাংলাদেশ সাবমেরিন কেবল কোম্পানি লিমিটেড (বিএসসিসিএল) এটি বাস্তবায়ন করবে।

মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য প্রকল্প প্রস্তাবটি উপস্থাপন করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য মো. মামুন আল রশিদ।

বিএসসিসিএল সূত্র জানায়, নতুন সাবমেরিন ক্যাবলের জন্য গঠিত সি-মি-উই ৬ কনসোর্টিয়ামের সদস্য হয়েছে বাংলাদেম। সিঙ্গাপুর ও শ্রীলঙ্কার মধ্যবর্তী স্থানে সি-মি-উই ৬ কনসোর্টিয়ামে যুক্ত হবে এ ক্যাবল। কনসোর্টিয়ামের মাধ্যমে কক্সবাজার থেকে সিঙ্গাপুরের দিকে ও কক্সবাজার হতে ফ্রান্সের দিকে ৫ টেরাবাইট করে মোট ১০ টেরাবাইট ব্যান্ডউইথ ইন্টারনেট পাবে বাংলাদেশ।

তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবলে যুক্ত হতে কক্সবাজার ল্যান্ডিং স্টেশন হতে গভীর সমুদ্রের মূল লাইনের দূরত্ব হবে ১ হাজার ৮৫০ কিলোমিটার। এ সংযোগের জন্য খরচ হবে ৬৯৩ কোটি টাকা। যার ৮৯ শতাংশ খরচ হবে শুধু ক্যাবল বাবদ। এর মধ্যে প্রায় ৩০১ কোটি টাকা সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে যোগান দেয়া হবে। বাকি ৩৯২ কোটি টাকার যোগান দেবে প্রকল্প বাস্তবায়কারী কোম্পানি বিএসসিসিএল।

এ প্রসঙ্গে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, আমরা এখন ফাইভ-জি প্রযুক্তির যুগে আছি। কিন্তু এখনো নিম্নমানের ব্রডব্যান্ড ব্যবহার করছি। এই বাস্তবতায় প্রযুক্তির উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে মাইল ফলক হয়ে আসবে তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবল। বাংলাদেশ প্রযুক্তিগত উন্নয়ন করেছে। এই নতুন সাবমেরিন ক্যাবল দীর্ঘমেয়াদি ইন্টারনেটের চাহিদা মেটাবে।

এই ক্যাবলটিতে বাংলাদেশ ছাড়াও ১৬টি দেশ সংযুক্ত হবে। এরমধ্যে চীন থেকেই যুক্ত হবে ৩টি কোম্পানি। ল্যান্ডিং স্টেশন থাকবে ২০টি। ২০১৯ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর এই কনসোর্টিয়ামে যোগ দিয়েছে বাংলাদেশ। বঙ্গোপসাগরের নিচে সিঙ্গাপুর-শ্রীলংকার মধ্যবর্তী কোনো একটি স্থানে বাংলাদেশের নিজেদের ব্রাঞ্চ স্থাপন করা হবে। আর এ কাজটি করবে কনসোর্টিয়ামের কাজ পাওয়া কোম্পানি।

প্রস্তাবিত নতুন প্রকল্পের আওতায় ১৩ হাজার ২৭৫ কিলোমিটার কোর সাবমেরিন কেবল এবং এক হাজার ৮৫০ কিলোমিটার ব্রাঞ্চ সাবমেরিন কেবল বসাতে হবে। প্রকল্প প্রস্তাবে বলা হয়েছে, সিঙ্গাপুর থেকে ফ্রান্স পর্যন্ত সংযুক্ত এসএমডাব্লিউ-৬ সাবমেরিন কেবল ভারত মহাসাগর, আরব সাগর, লোহিত সাগর হয়ে ভূমধ্যসাগর অবধি বিস্তৃত হবে।

বর্তমানে কক্সবাজার ও কুয়াকাটার ল্যান্ডিং স্টেশনের মাধ্যমে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া, মধ্য পূর্ব পশ্চিম ইউরোপ-৪ বা (এসএমডব্লিউ-৪) ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া ও পূর্ব এশিয়া, মধ্য পূর্ব পশ্চিম ইউরোপ-৫ (এসএমডাব্লিউ-৫) সাবমেরিন কেবলে যুক্ত হয়ে বিএসসিসিএল ব্যান্ডউইথ সেবা দিচ্ছে।

দেশে বর্তমানে এক হাজার ৪০০ জিবিপিএস (গিগাবিটস পার সেকেন্ড) ব্যান্ডউইথ ব্যবহার হচ্ছে। এর মধ্যে দেশের প্রথম ও দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবল দিয়ে আসছে ৮০০ জিবিপিএস আর টেরিস্ট্রিয়াল ক্যাবলের মাধ্যমে ভারত থেকে আসছে ৬০০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ। যদিও দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবলের সক্ষমতা এক হাজার ৫০০ জিবিপিএস।

তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবলের সক্ষমতা হবে ১০ হাজার জিবিপিএস। এ ব্যান্ডউইথ ক্যাবলের দুই প্রান্ত থেকে আসবে। কক্সবাজারের ল্যান্ডিং স্টেশনে সিঙ্গাপুর প্রান্ত থেকে ৫ হাজার এবং ফ্রান্স প্রান্ত থেকে ৫ হাজার জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ আসবে বলে জানা গেছে।

উল্লেখ্য, ২০০৬ সালে বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো সাবমেরিন ক্যাবল আন্তর্জাতিক কনসোর্টিয়ামে ‘সি-মি-উই-৪’ এ যুক্ত হয়। আনুষ্ঠানিকভাবে দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবল সি-মি-উই-৫ চালু হয় ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)