স্বামীর সম্পত্তিতে অধিকার ফিরে পেলেন হিন্দু বিধবা নারীরা

ডেস্ক নিউজ:

হিন্দু বিধবা নারীরা স্বামীর কৃষি জমিরও অংশীদার হবেন বলে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। আর এ রায়ের মধ্যে দিয়ে ৮৩ বছর পর স্বামীর সম্পত্তিতে অধিকার ফিরে পেলেন হিন্দু বিধবা নারীরা। হাইকোর্টের এ রায়কে যুগান্তকারী মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এর ফলে হিন্দু বিধবা নারীদের সম্পত্তির উত্তরাধিকারের আইন দ্রুত সংসদে পাশ হবে এমনটাই প্রত্যাশা তাদের।

এ সংক্রান্ত একটি মামলার চূড়ান্ত শুনানি শেষে বুধবার হাইকোর্টের বিচারপতি মিফতাহ উদ্দিন চৌধুরীর একক বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন।

প্রচলিত আইন অনুযায়ী, হিন্দু বিধবা নারীরা স্বামীর কৃষি জমিরও অংশীদার পেত না। কিন্তু ১৯৯৬ সালে খুলনার হিন্দু বিধবা নারীর গৌরীদাসীর নামে কৃষি জমি রেকর্ড হয়। এর বিরুদ্ধে একই বছর খুলনা ভটিয়াঘাটা আদালতে মামলা করেন তার দেবর জ্যোতিন্দ্র নাথ মণ্ডল। ১৯৯৬ সালেই এই মামলার বিরুদ্ধে আপিল করেন গৌরিদাসী। এর প্রায় ২৪ বছর পর এই আপিল নিষ্পত্তি হয়।

মামলার পর্যবেক্ষণে হিন্দু বিধবা নারীরা স্বামীর কৃষি জমিরও অংশীদার বলে রায় দেন হাইকোর্ট। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী উজ্জল ভৌমিক এই মামলার এমিকাস কিউরি হিসেবে মামলা পরিচালনায় সহায়তা করেন।

তিনি জানান, ১৯৪৭ সালে ইন্ডিয়ান ফেডারেল কোর্টের এ সংক্রান্ত এক মামলার রায়ে কৃষি জমিতে অংশীদারিত্ব হারায় হিন্দু বিধবা নারীরা, যা পরবর্তীতে ১৯৭২ সাল থেকে বাংলাদেশের আইনে সংযুক্ত করা হয়। তবে আজকের ঐতিহাসিক রায়ের ফলে ৮৩ বছর পর স্বামীর সম্পত্তিতে অধিকার ফিরে পেলেন হিন্দু বিধবা নারীরা।

হাইকোর্টের এ রায়ের ফলে এখন থেকে কৃষিজমিসহ স্বামীর সব সম্পত্তির ভাগ স্ত্রী পাবেন বলেও জানান এই আইনজীবী।

এ বিষয়ে ডেইলি বাংলাদেশকে হিন্দু বোদ্ধ খৃষ্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রানা দাস গুপ্ত বলেন, আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্রের মধ্যে ভারত, নেপাল সম্প্রতি হিন্দু সময়ে নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষে বেশ কয়েকটি আইন পাশ করেছে। কিন্তু ১৯৪৭ সালের পর থেকে বাংলাদেশের হিন্দু নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় উল্লেখ করার মতো কোন আইন সংসদে পাশ হয়নি। হাইকোর্ট আজকে যে রায় দিয়েছেন তা যুগান্তকারী। এই রায়ের ফলে হিন্দু বিধবা নারীদের সম্পত্তির উত্তরাধিকারের আইনের ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। দ্রুত এই বিষয়ে আইন প্রণয়ন হোক এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

হিন্দু আইনের সবচেয়ে কঠোর অংশ হলো মেয়ে সন্তানদের মধ্যে সম্পত্তি বণ্টনের বিষয়টি। ১৯৩৭ সালে তৈরি এ আইনে বাবার সম্পদের উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয় মেয়েদের। দায়ভাগ আইন অনুযায়ী মৃত ব্যক্তির ছেলে থাকলে মেয়েরা সম্পত্তির ভাগ পায় না। আর যদি ছেলে না থাকে সে ক্ষেত্রে অবিবাহিত ও ছেলে সন্তানের জন্মদানকারী মেয়েরা জীবন-স্বত্বে সম্পত্তির অধিকার পায়। বন্ধ্যা, বিবাহিতা বা বিধবা ও মেয়ে সন্তান জন্মদানকারী মেয়েরা বাবার সম্পত্তি পান না। মেয়ের অধিকার নির্ভর করে ছেলে থাকা বা না থাকার ওপর।

তবে, ২০১২ সালের আগস্ট মাসে আইন কমিশন হিন্দু নারীদের সম্পত্তির সমান ভাগ দেয়ার জন্য একটি নতুন আইনের সুপারিশ করে।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)