করোনাকালে খুলনা ও বরিশাল অঞ্চলে প্রায় কোটি টাকার অর্থ সহায়তা দিয়েছে ওয়ার্ল্ড ভিশন

করোনা পরিস্থিতিতে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ সারাদেশে ১৮,৬৮৪ পরিবারকে  এবং খুলনা ও বরিশাল অঞ্চলের ৩,১৫৭ পরিবারকে নগদ অর্থ সহায়তা প্রদান করেছে। সেই কার্যক্রমের অংশ হিসেবে দেবহাটা এপি ২৯৭ পরিবারের মধ্যে আট লাখ একানব্বই  হাজার টাকার নগদ অর্থ সহায়তা প্রদান করা হয় । এর মাধ্যমে করোনা ভাইরাসের প্রকোপ মোকাবেলায় সরকার ঘোষিত প্রায় দুমাসের অধিক সময় ধরে লকডাউনের কারণে সংকটে থাকা নিন্ম আয়ের মানুষের পরিবারের তাৎক্ষনিক চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হবে ।সাতক্ষীরা জেলার দেবহাটা উপজেলার শারীরিক প্রতিবন্ধী জোহর আলী (৪৫) মোটরভ্যান চালিয়ে কোনমতে তিন সদস্যের পরিবারের জন্য তিনবেলা আহারের সংস্থান করেন। তিনি বলেন ‘এই সংকটের সময় ওয়ার্ল্ড ভিশনের এই অর্থ সহায়তা পেয়ে যে কতটা উপকৃত হয়েছি তা বোঝাতে পারবো না। গত তিন মাস ধরে আমার উপার্জন বন্ধ, ধার দেনা করে অনাহার অর্ধাহারে বহু কষ্টে দিন কাটাচ্ছি।  আজ বিকাশের মাধ্যমে ৩০০০ টাকা পেয়েছি। এই টাকা দিয়ে ধার-দেনা শোধ করব আর বাকী টাকা দিয়ে জরুরী খাদ্য কিনবো’।

ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশের দেবহাটা এপি’র ম্যানেজার ফুলি সরকার বলেন ‘এই ধরনের সংকটে শিশুরা নির্যাতন ও শোষণের মতো বিষয়ে সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকে, যে সময় তাদের মানসিক সাহায্য খুব প্রয়োজন। ইবোলা মহামারীর মতো অতীত অভিজ্ঞতায় দেখা যায় যে শ্রেণীকক্ষের বাইরে থাকায় শিশুদের প্রতি বাড়ীতে সহিংসতা বিশেষ করে শারীরিক ও যৌন সহিংসতা, বাল্য বিবাহ এবং মানসিক নির্যাতন বেড়ে যায়’।জোহর আলীর মতো সাউদার্ন বাংলাদেশ রিজিওনের (খুলনা ও বরিশাল বিভাগ) শহরাঞ্চলের ২৪২ পরিবার ৫০০০ টাকা করে এবং গ্রামাঞ্চলের ২৯১৫ পরিবার ৩০০০ টাকা নগদ অর্থ সহায়তা পেয়েছে।ফুলি সরকার আরও বলেন ‘বাংলাদেশ সরকারের কোভিড-১৯ সংক্রমন প্রতিরোধের প্রচেষ্টার পরিপূরক হিসাবে এ বছরের এপ্রিল মাসে ওয়ার্ল্ড ভিশন জাতীয় পর্যায়ে কোভিড-১৯ সাড়াদান কর্মসূচী গ্রহণ করেছে যার লক্ষ্য হল জনগণের জীবন রক্ষার উপকরণ, সেবা ও তথ্য প্রদান করা। ওয়ার্ল্ড ভিশন সমাজের সবচেয়ে অবহেলিত ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সাথে তাদের শিশুদের জীবন মানের উন্নয়নে কাজ করে থাকে। কোভিড-১৯ বিস্তারের কারণে অবহেলিত এ সকল মানুষের জীবন ও জীবিকায় খুবই নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। কোভিড-১৯ সাড়াদান কর্মসূচী দেশের ২৪ জেলায় ওয়ার্ল্ড ভিশন কর্ম এলাকায় বাস্তবায়িত হচ্ছে যার মাধ্যমে শিশু, প্রতিবন্ধী মানুষ, নারী ও শিশু প্রধান পরিবারের চাহিদাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। আমরা স্থানীয় সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্টভাবে কাজ করে উপকারভোগী নির্বাচন করেছি।’

একটি ব্যাংকের মাধ্যমে মোবাইল ব্যাংকিং সেবাদানকারী সংস্থার সহযোগিতায় উপকারভোগীর মোবাইল ব্যাংক অ্যাকাউন্টে সহায়তার অর্থ সরাসরি চলে যায় । মাত্র ২/৩ দিনের মধ্যে নিরাপদে ও দক্ষতার সাথে পৌঁছে যাচ্ছে এই সেবা।‘উপকারভোগী নির্বাচন থেকে অর্থ হস্তান্তরের পুরো প্রক্রিয়াটাই বিভিন্ন সফটওয়্যরের মাধ্যমে ডিজিটাল পদ্ধতিতে হয়ে থাকে । প্রথমে ব্যাংকে অর্থ প্রদানের আদেশ দেয় ওয়ার্ল্ড ভিশন, পরে সেই অর্থ মোবাইল ব্যাংকিং সেবা প্রদানকারীর কাছে চলে যায়’ বলেও জানান ফুলি সরকার ।

ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ কোভিড-১৯ বিষয়ক সতর্ক বার্তা এবং সাবান, মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজারের মতো হাইজিন সামগ্রী প্রদান করার মাধ্যমে জোহর আলীর মতো পরিবারগুলোকে ভাইরাস সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষার চেষ্টা করছে। এখন পর্যন্ত দক্ষিনাঞ্চলে ওয়ার্ল্ড ভিশন ২,৬২৮ পরিবারকে হাইজিন কিট্স, ১,৬০৮ পরিবারকে হাত ধোয়ার সরঞ্জাম, ৫২৭ জন স্বাস্থ্য কর্মীকে পিপিই এবং ৫৮৯ জন স্বাস্থ্য কর্মীকে মাস্ক, গ্লাভস ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিতরণ করেছে। এরমধ্যে সাতক্ষীরা জেলার দেবহাটা উপজেলায় ৪৯৮ পরিবারকে হাইজিন কিট্স, ৫০ পরিবারকে হাত ধোয়ার সরঞ্জাম, ১০ জন স্বাস্থ্য কর্মীকে পিপিই এবং ৫০ জন স্বাস্থ্য কর্মীকে মাস্ক, গ্লাভস ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিতরণ করেছে। ওয়ার্ল্ড ভিশনের প্রথম সারির কর্মীরা কমিউিনিটির নেতাদের সাথে কাজ করার মাধ্যমে শিশু, পিতা-মাতা ও অভিভাবকদের ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধেও বার্তা দিয়ে যাচ্ছে।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)