শর্ত সাপেক্ষে খুলে দেয়া হলো যশোরের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান

শর্ত সাপেক্ষে যশোরের সকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণ ও  প্রতিরোধ সংক্রান্ত জেলা কমিটি।
বুধবার স্থানীয় সার্কিট হাউজে অনুষ্ঠিত এক সভায় এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার পর পরই কিছু মালিক তাদের প্রতিষ্ঠান খুলে দেন। অন্যরা আজ বৃহস্পতি বা শনিবার থেকে নিজ নিজ প্রতিষ্ঠান খুলবেন বলে আশা করছেন ব্যবসায়ী নেতারা। সভার সিদ্ধান্ত হলো পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত সরকারি নির্দেশনা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে ব্যবসায়ীরা তাদের প্রতিষ্ঠান চালু রাখতে পারবেন। সভায় উপস্থিত প্রেসক্লাব যশোরের সভাপতি ও করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কমিটির সদস্য জাহিদ হাসান টুকুন এই তথ্য জানান। তিনি জানান, শংকরপুর বটতলামসজিদ এলাকায় অবস্থিত বেসরকারি জিডিএল হাসপাতালকে করোনা রোগীদের চিকিৎসায় ব্যবহার করারও সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে সভা থেকে। বুধবারের সভায় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় যেসব বেসরকারি হাসপাতলকে করোনাভাইরাস রোগীদের চিকিৎসায় ব্যবহার করা হবে তার ফিস প্রদানে সরকারের কাছে সহায়তা চেয়ে আবেদন জানানো হবে। এর আগে স্থানীয়ভাবে তৈরি তহবিল থেকে বেসরকারি হাসপাতালের বিল পরিশোধ করা হবে।
এজন্যে স্থানীয় ব্যবসায়ী ও সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিদেরকে সহযোগিতার হাতপ্রসারিত করারও অনুরোধ জানানো হয় সভায়। দুপুর একটা পর্যন্ত চলা ওই সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শফিউল আরিফ। অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন পুলিশ সুপার মুহাম্মদ আশরাফ হোসেন, সিভিল সার্জন ডাক্তার শেখ আবু শাহীন, লে. কর্নেল নেয়ামুল হক এবং যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডাক্তার দিলীপকুমার রায়। জাহিদ হাসান টুকুন জানান, সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত ব্যবসায়ীরা তাদের প্রতিষ্ঠান খোলা রাখতে পারবেন বলে সভায় সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এসময় সরকারি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ওপর কঠোরভাবে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
ব্যবসায়ীদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে হ্যান্ডসেনিটাইজার বা হাত ধোয়ার ব্যবস্থা রাখতে হবে। একইসাথে মেনে চলতে হবে নিরাপদ দূরত্বের বিধানও।খাবারের হোটেল খোলা রাখার ব্যাপারে সভায় কোনো সিদ্ধান্ত হয়েছে কি না জানতে চাইলে জাহিদ হাসান টুকুন বলেন, ‘খাবারের হোটেল খোলা রাখার ব্যাপারে কোনো বিধিনিষেধ আগেও ছিল না। কিন্তু, বিকেল চারটা পর্যন্ত হোটেল খোলা রাখা লাভজনক নয় মনে করে মালিকরা তা বন্ধ রেখেছেন।
’সিভিল সার্জন ডাক্তার শেখ আবু শাহীন জানান, যশোর বক্ষব্যাধী (টিবি হাসপাতাল) হাসপাতালের পাশাপাশি শংকরপুর এলাকার বটতলা মসজিদের সামনে অবস্থিত বেসরকারি হাসপাতাল ডিজিএলকে করোনা রোগীদের চিকিৎসায় ব্যবহার করা হবে। কোনো রোগীর অপারেশনের প্রয়োজন পড়লে বা রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেলেই এই হাসপাতালকে ব্যবহার করা হবে। তিনি বলেন, ডিজিএল হাসপাতালে অপারেশন সুবিধা থাকায় এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, এর আগে যশোরের আরও তিনিটি বেসরকারি হাসপাতাল কুইন্স, ইবনেসিনা এবং জেনেসিসকে করোনা রোগীদের চিকিৎসায় ব্যবহারের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছিল। এর মধ্যে শুধুমাত্র জেনেসিস হাসপাতালে একজন প্রসুতির অপারেশন করা হয়। এছাড়া আর কোনো হাসপাতাল করোনা রোগীদের চিকিৎসার জন্যে ব্যবহার করা হয়নি।এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রেসক্লাব যশোরের সভাপতি জাহিদ হাসান টুকুন বলেন, কুইন্স হাসপাতালে প্রতিদিন বিপুল সংখ্যক রোগী ডায়ালসিস করান।এছাড়া, এই হাসপাতলটিতে সাধারণ রোগীদেরও চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। সে কারণে এখনই এটাকে কোভিড হাসপাতাল হিসেবে ব্যবহার করে মানুষকে সাধারণ চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত করা যুক্তিযুক্ত নয় মনে করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, দেশে করোনা ভাইরাসের হার বৃদ্ধি পাওয়ার প্রেক্ষিতে সরকার ২৬ মার্চ থেকে দেশে ছুটি ঘোষণা করে।পর্যায়ক্রমিকভাবে এই ছুটি বৃদ্ধি করা হয়েছে। এর মধ্যে যশোরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শফিউল আরি এক গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ২৭ এপ্রিল থেকে যশোর জেলাকে লকডাউন ঘোষণা করেন।
সরকারি নির্দেশনার পর দেশের অন্যান্য স্থানের মতো যশোরেও ১০ মে থেকে শপিংমল খুলে দেয়া হয়। কিন্তু, বাজারে মানুষের নিয়ন্ত্রণহীন উপস্থিতির কারণে করোনাভাইরাস সংক্রমণের আশঙ্কা বৃদ্ধি পাওয়ায় ১৯ মে থেকে যশোরে শপিংমল ফের বন্ধ ঘোষণা করেছিল জেলা প্রশাসন।
Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)