আজ ২০মে চুকনগর গণহত্যা দিবস

খুলনার চুকনগর গণহত্যা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে স্বর্ণ অক্ষরে লেখা থাকবে  অনন্তকাল।  খুলনা শহর থেকে ৩২ কি, মি  পশ্চিমে  চুকনগর  সৃতি সৌধটি অবস্হিত । চুকনগর গণহত্য একটি সামরিক গণহত্য যা পাকিস্তান সেনাবাহিনী ১৯৭১’এ  ২০শে মে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে এই হত্যাযঙ্গ সংঘটিত হয় ।
গণহত্যায় নিহত অধিকাংশই খুলনা জেলার ডুমুরিয়া ও বটিয়াঘাটার অধিবাসী। বাগেরহাট ও পাশ্ববর্তী কয়েকটি জেলার কিছু অধিবাসীও এখানে গণহত্যার শিকার হন।গণহত্যাটি অন্তত এক বর্গকিলোমিটার এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে ঘটে। পুটিমারি বিল, ভদ্রা নদী, গ্রামের কিছু পুকুর, চুকনগর বাজার, বাজারের কালী মন্দির প্রভৃতি স্থানে পাকিস্তানি সেনা গুলি চালায়। ৩-৪ ঘণ্টা ধরে পাকিস্তানি সেনারা গুলি চালায়।
গণহত্যায় নিহতের অনুমিত সংখ্যা দুই হাজার  থেকে দশ হাজার হবে। সে সময়  নিহতদের লাশ অপসারণকারী চুকনগরের কিছু অধিবাসী প্রত্যক্ষ ভাবে কাজ করেছিল এবং তাদের  বর্ণনা মতে এ তথ্য পাওয়া যায় । তারা জানান  ৪ হাজারেরও বেশি লাশ গর্ণনা করে ছিলেন বলে দাবি করেন। এই গণহত্যায় নিহত দুই শতাধিক ব্যক্তির নাম-পরিচয় উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে।
এই গনহত্যটি ইতিহাসে বিরল। চুকনগর শহরটি ভারতের নিকটবর্তী হওয়াই এখানে দেশের বিভিন্ন এলাকার লোকজন জড়ো হয়। বিশেষ করে ভদ্রা, কাজিপাশা, খরিয়া, ঘ্যাংরাইল প্রভৃতি নদী ও শাখা নদী পথে এবং কাঁচা রাস্তা দাকোপ, বটিয়াঘাটা,রামপাল, তেরখোদা ফকিরহাট হয়ে লোকজন খুলনা হয়ে চুকনাগরে আসছিল। সে সময় ভারতে যাওয়ার জন্য চুকনগর ছিল ট্রানজিট পয়েন্ট। ভারতের পথে রওনা হওয়া  লোকজন বিশ্রাম, সিমান্ত পর্যন্ত  পরবর্তী পথের অবস্থা  সম্পর্কে
খোজ খবর নেওয়া এবং গাইড যানবাহনের সন্ধানে এখানে থামতো। এখান থেকে ভারতে যাওয়ার মুল রুট ছিল মঙ্গলকোট, সরসকাটি কলারোয়া হয়ে হাটা পথে।
ফলে নৌকা এবং বিভিন্ন জিনিস পত্র পানির দামে বেচে দিয়ে তাদের হালকা হতে হত। কিন্তু মে এর তৃতীয় সপ্তাহে দাকোপ, বটিয়াঘাটা, ডুমুরিয়া, রামপাল প্রভৃতি এলাকা একযোগে  আক্রান্ত হওয়ায় গ্রাম কে গ্রাম উজাড় করে লোকজন চলে আসতে থাকে।
মুলতঃসেদিন ২০শে মে বৃহস্পতিবার আটলিয়া ইউনিয়নের চুকনগর বাজার চাঁদনী, ফুটবল মাঠ, রায়পাড়া, পুঠিমারি, মালতিয়া, তাতিপাড়া, দাসপাড়া, প্রভৃতি গ্রাম পাতখোলার বিল, এবং ভদ্রা ও ঘ্যাংরাইল নদীর পাড়ে হাজার হাজার মানুষ ভারতের উদ্দ্যেশে পাড়ি দেবার জন্য গাইড ও যানবাহনের অপেক্ষাই ছিল। পুরো এলাকাটা ছিল প্রায় এক কিলমিটার ব্যাসার্ধের।২০শে মে বেলা ১১টা সময় মিলেটারির দুটি দল একটি ট্রাক ও একটি জিপ গাড়িতে এসে চুকনগর বাজার উত্তর প্রান্তে এসে তারা থামে।
প্রথমে তারা পাতখোলার বিলে এসে গুলি চালানো শুরু করে পরে চুকনগর বাজারের দিকে অগ্রসর হন।বিকাল তিনটা পর্যন্ত তারা গুলি চালাতে থাকে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী।   চুকনগরে মৃত ব্যাক্তিদের সঠিক সংখ্যা গুনে নির্নয় করা না গেলেই প্রতাক্ষ্যদরশীদের মতে আনুমানীক দশ হাজারেরও বেশি হবে।
মৃত দেহ গুলি পাকবাহিনী পরে নদীতে নিক্ষেপ করে। এবং অবশিষ্ট দেহ গুলি স্থানীয় লোকজন পরে নদীতে ফেলে দেয়। হত্যকান্ডে নিহতের সৃতির উদ্দ্যেশে চুকনগরে একটি সৃতিস্তম্ভ স্থাপনা করা হয়েছে।
Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)