অবশেষে আইনে পরিণত হলো ভারতের ‘নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল’

নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল ২০১৯-এ সম্মতি দিলেন ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ, ফলে বিলটি আইনে পরিণত হল। এই আইনে তিনটি প্রতিবেশী দেশের অভিবাসীদের ভারতীয় নাগরিকত্ব দেওয়ার কথা বলা হয়েছে, তবে মুসলিমদের নয়।

ভারতীয় সম্প্রচারমাধ্যম এনডিটিভি জানিয়েছে, রাষ্ট্রপতির সম্মতির পর বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রীয় গেজেট প্রকাশের মধ্য দিয়ে আইনটি কার্যকর হয়েছে।

মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলাদেশ, আফগানিস্তান ও পাকিস্তান থেকে নিপীড়নের মুখে ভারতে পালিয়ে যাওয়া হিন্দু, বৌদ্ধ, শিখ, জৈন, পার্সি ও খ্রিস্টানদের নাগরিকত্ব দিতে বিলটি পার্লামেন্টে উত্থাপন করে ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)।

গত সোমবার (৯ ডিসেম্বর) মধ্যরাতে ৩১১-৮০ ভোটে লোকসভার অনুমোদন পায় বিতর্কিত এই বিলটি। পরে বুধবার পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভারও অনুমোদন পায়।

বিরোধীদলগুলো বিলটিকে ‘মুসলিমবিরোধী’ আখ্যা দিয়ে প্রতিবাদ করলেও দেশটির উত্তর-পূর্বাঞ্চল ভিন্ন দাবিতে উত্তাল। আসাম-ত্রিপুরা, মেঘালয়ে শরণার্থীদের অবৈধ অভিবাসীর স্বীকৃতি বাতিল ও এই অঞ্চলকে সিএবি আওতামুক্ত করার দাবিতে বিক্ষোভ করছে তারা।

রাষ্ট্রপতির সম্মতি দেওয়া আইন অনুযায়ী ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের আগে পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও আফগানিস্তান থেকে ভারতে যাওয়া হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন, পার্সি ও খ্রিষ্টান ধর্মালম্বীদের অবৈধ শরণার্থী হিসেবে গণ্য করা হবে না। তাদের ভারতের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিজেপি সরকার বলছে, এই আইনের মাধ্যমে প্রতিবেশি দেশগুলোতে নিপীড়নের শিকার হওয়া মানুষদের রক্ষা করা হবে। তবে বিরোধী দলগুলোর দাবি, মুসলমানদের রক্ষার প্রস্তাব না দেওয়ার মধ্য দিয়ে এই আইনটি ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধানকে হেয় করেছে।

এদিকে পার্লামেন্টে বিলটি উত্থাপনের পর থেকে বিক্ষোভে অশান্ত হয়ে রয়েছে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় কয়েকটি রাজ্য। বৃহস্পতিবার আসামে বিক্ষোভকারীরা কয়েকটি ভবনে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। কারফিউ উপেক্ষা করে কয়েকটি স্থানে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে। পুলিশের গুলিতে রাজ্যটিতে নিহত হয়েছে তিন বিক্ষোভকারী।

এছাড়া পাশের রাজ্য মেঘালয়েও দুই দিন ধরে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে মোবাইল ইন্টারনেট ও এসএমএস সেবা। রাজ্যটির রাজধানী শিলংয়ে জারি করা হয়েছে কারফিউ। আরেক রাজ্য ত্রিপুরায় বড় ধরণের কোনও সহিংসতা না ঘটলেও রাজ্যটিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও অফিস বন্ধ করে দিয়ে কার্যত অচলাবস্থা তৈরি করেছে কর্তৃপক্ষ।

বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী আসামের বিক্ষোভকারীদের দাবি, এই বিলের মাধ্যমে বিদেশি শরণার্থীদের ঢল নামবে। তবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বিক্ষোভকারীদের শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।

আসামের মানুষদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আমি তাদের আশ্বস্ত করতে চাই- আপনাদের অধিকার, অনন্য পরিচয় ও নান্দনিক সংস্কৃতি কেউ কেড়ে নেবে না। এগুলো সুসজ্জিত ও বাড়তে থাকবে’।

বিজেপি সরকার বলছে, নতুন নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের মাধ্যমে জাতীয় নাগরিক পঞ্জি তেরি করা হবে। ফলে মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের প্রমাণ করতে হবে যে তারা ভারতের স্থায়ী বাসিন্দা, প্রতিবেশি তিন দেশ থেকে যাওয়া শরণার্থী নন। তবে আইনে বর্ণিত অন্য ধর্মাবলম্বী শরণার্থীরা নাগরিকত্ব পাবেন।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)