গরম খাবার ফু দিয়ে খাওয়া এতটা মারাত্মক, আগে জানতেন কি?

গরম খাবার আমরা হামেশাই ফু দিয়ে খেয়ে থাকি। যেমন গরম চা বা দুধ অবশ্যই ফু দিয়ে পান করার অভ্যাস রয়েছে সবারই! গরম খাবারে যথেষ্ট পরিমাণ জলীয় বাষ্প থাকে। গরম চায়ের উপর যে ধোঁয়া দেখা যায় তা জলীয় বাষ্প ব্যতীত আর কিছুই নয়।

আমরা যখন গরম খাবার বা পানীয়তে ফু দেই তখন আমাদের মুখ থেকে কার্বন ডাই-অক্সাইড বের হয় যার রাসায়নিক সংকেত। জলীয় বাষ্প এবং কার্বন ডাই-অক্সাইড এর রাসায়নিক বিক্রিয়ায় কার্বনিক এসিড এবং এর জাতক উৎপন্ন হয় যা এসিডিক বা অম্লীয়।

আমরা জানি, সুস্থ সবল মানুষের দেহের রক্তের পিএইচ ৭ দশমিক ৩৫ থেকে ৭ দশমিক ৪৫ পর্যন্ত উঠানামা করে যা একটু ক্ষারীয়। পিএইচ ৭ এর নীচে হলে তা অম্লীয় এবং পিএইচ ৭ এর উপরে হলে তা ক্ষারীয় এবং পিএইচ ৭ হলে তা নিরপেক্ষ।

আমদের দেহের রক্তের পিএইচ যদি কোনোভাবে ৭ দশমিক ২ এর নীচে বা ৭ দশমিক ৬ এর উপরে চলে যায় তখন বিভিন্ন রকমের উপসর্গ যেমন মাথাব্যথা, বমি, বিভ্রান্তি, অসাড়তা, অলসতা দেখা দেয়। এমনকি এর থেকে মারত্মক রোগও দেখা দিতে পারে।

রক্তের পিএইচ পরিবর্তন বিভিন্ন বড় রোগের উপসর্গ। যেমন- হাঁপানি, বহুমূত্র (ডায়াবেটিস), হৃদরোগ, বৃক্কব্যাধি (কিডনিতে সমস্যা), ফুসফুসের রোগ, গেঁটেবাত, সংক্রমণ (ইনফেকশন), বিষক্রিয়া ও রক্তস্রাব।

তবে আশার কথা হলো, গরম খাবার বা পানীয়তে ফু দিলে তা যে পরিমাণ এসিডিক হয় তা আমাদের রক্তের পিএইচ পরিবর্তন করতে পারে না। কারণ রক্তের পিএইচ পরিবর্তন প্রতিহত করে দুটি অঙ্গ ফুসফুস এবং কিডনি। ফুসফুস দেহ থেকে কার্বন ডাই-অক্সাইড বের করে দেয় এবং কিডনি মূত্রের মাধ্যমে ক্ষতিকর এসিডিক যৌগসমূহ বের করে দেয়।

যদি ডায়েট ব্যালেন্স না হয় অর্থাৎ খাদ্য অতিরিক্ত ক্ষারীয় বা অম্লীয় হয় তবে রক্তের পিএইচ এর পরিবর্তন ঘটতে পারে। আর তা থেকে মারাত্মক রোগের ঝুঁকি বাড়ে। তাই খাদ্য গ্রহণের বেলায় সচেতন থাকতে হবে।

আরেকটা দিক হল ফু দিলে মুখ থেকে জীবাণু বের হবে এবং তা খাবারের উপর পড়বে। যদিও খাদ্যে জমা থাকা বেশিরভাগ জীবাণু মুখেই ধ্বংস হয়। বাকিগুলো পাকস্থলীতে জমা থাকা হাইড্রোক্লোরিক এসিডের দ্বারা ধ্বংস হয়। তার পরেও বিভিন্ন কারণে পেটের পীড়া দেখা দিতে পারে। তবে এর জন্য অবশ্যই ফু দিয়ে খাবার খাওয়া এককভাবে দায়ী নয়।

ফুড পয়জনিং বা খাদ্যে বিষক্রিয়া সাধারণত পচা-বাসি খাবার, অস্বাস্থ্যকর খাবার বা জীবাণুযুক্ত খাবার বা পানীয়ের কারণে হয়ে থাকে। গরমের মাত্রা বৃদ্ধির সঙ্গে এর ব্যাপকতা পরিলক্ষিত হয়। কারণ, গরমে খাবার নষ্ট হয় বা খাবারে সহজেই জীবাণু বংশ বিস্তার করে টক্সিন তৈরি করতে পারে। যা পেটে গেলে পেটে ব্যথা, হজমে সমস্যা, ডায়রিয়া, বমি অনেক ক্ষেত্রে জ্বর হতে পারে।

তাই গরম খাবার বা পানীয়তে ফু দিয়ে খেলে তেমন কোনো ক্ষতি নেই। তবে অনেকেই খাবারে ফু দিয়ে খাওয়াটা ভালো চোখে দেখেন না। একসঙ্গে অনেকজনের খাবার রাখা থাকলে তাতে ফু দেয়া মোটেই উচিত নয়।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)