নেদারল্যান্ডসে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণের প্রত্যয়

সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণ’ এই প্রতিপাদ্যকে তুলে ধরে দি হেগস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের আয়োজিত ‘ব্রেইনচেইন’ – স্থানীয় সুশীল সমাজের একটি সংগঠন যারা অনাবাসী বাংলাদেশীদের সাথে স্থানীয় বাংলাদেশীদের মেলবন্ধনে নিয়োজিত – এর সহযোগিতায় নেদারল্যান্ডসে অধ্যয়নরত বাংলাদেশী ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে একটি সেমিনারের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে উচ্চ শিক্ষার্থে নেদারল্যান্ডসে আসা নতুন ছাত্র-ছাত্রীদের সংবর্ধনা প্রদান করা হয়।

দূতাবাসে কর্মরত সকল পর্যায়ের কর্মকর্তা/কর্মচারীদের পাশাপাশি প্রায় শতাধিক ছাত্র-ছাত্রী, অ্যালামনাই, শিক্ষাবিদ এবং প্রবাসী উদীয়মান পেশাজীবীগণ এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন। অংশগ্রহণকারীদের মাঝে উল্লেখযোগ্য সংখ্যায়ই ছিল নতুন আগত ছাত্র-ছাত্রী, যারা ২০১৯ সালে নেদারল্যান্ডসের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছে।

অনুষ্ঠানের মুখ্য উদ্দেশ্য ছিলো, নেদারল্যান্ডসে আগত বাংলাদেশী ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম গড়ে তোলা যেখানে তারা তাদের চিন্তা-চেতনা এবং সমস্যা সমূহ নিজেদের এবং দূতাবাসের সঙ্গে বিনিময় করতে পারে এবং একইসঙ্গে অ্যালামনাই ও অন্য সংশ্লিষ্টদের অভিজ্ঞতা/পরামর্শ গ্রহণের সুযোগ পেতে পারে।

তবে সকল আলোচনার মূল কেন্দ্রবিন্দু ছিল সম্মিলিত প্রচেষ্টায় কিভাবে একটি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণে সহযোগী হওয়া যায়। নেদারল্যান্ডসের সর্বোত্তম শিক্ষনীয় বিষয়সমূহ বাংলাদেশে যথাযথভাবে প্রয়োগের নিমিত্তে ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে এধরণের নেটওয়ার্কিং খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

নেদারল্যান্ডসের ইরাসমাস বিশ্ববিদ্যালয়-রটারড্যাম, মাস্ট্রিট স্কুল অফ ম্যানেজমেন্ট, ওয়াখেনিংগেন বিশ্ববিদ্যালয়, দি হেগ ইউনিভার্সিটি অফ অ্যাপ্লায়েড সায়েন্সেস, রটারড্যাম ইউনিভার্সিটি অফ অ্যাপ্লায়েড সায়েন্সেস, হান ইউনিভার্সিটি অফ অ্যাপ্লায়েড সায়েন্সেস, টোয়েন্টি বিশ্ববিদ্যালয়, আইন্দোভেন প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, ইন্টারন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ সোশ্যাল স্ট্যাডিজ (আইএসএস), অ্যামস্টারডাম বিশ্ববিদ্যালয়, ডেলফট প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, ফন্টিস ইউনিভার্সিটি অফ অ্যাপ্লায়েড সায়েন্সেস-এ অধ্যয়নরত স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর পর্যায়ের ছাত্র-ছাত্রীরা এই সেমিনারে অংশগ্রহণ করেন।

অনুষ্ঠানে আগত নতুন ছাত্র-ছাত্রী, বিভিন্ন শিক্ষাবিদ এবং পেশাজীবীদের স্বাগত জানিয়ে নেদারল্যান্ডসে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত শেখ মুহম্মদ বেলাল তার উদ্বোধনী বক্তৃতায় বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রার প্রতি আলোকপাত পূর্বক ছাত্র-ছাত্রীদের তাদের ‘উদ্ভাবনী’ এবং ‘সৃজনশীল’ অভিজ্ঞতা বিনিময়ের মাধ্যমে দেশের এই উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় সম্পৃক্ত হবার আহ্বান জানান।

রাষ্ট্রদূত নেদারল্যান্ডসের উন্নয়নের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে বাংলাদেশও কিভাবে উন্নতি লাভ করতে পারে সে লক্ষ্যে তিনি ছাত্র-ছাত্রী এবং শিক্ষানুরাগীদের তাদের মতামত/পরামর্শ প্রদানের আহ্বান জানান। তিনি মন্তব্য করেন ‘আধুনিক সমাজ ব্যবস্থা বিশালায়তনের উৎপাদনমুখী জ্ঞানকে ধারন করতে পারে, কেননা এই জ্ঞানের প্রতিটি অংশ সে সমাজ তার সদস্যদের মাঝে ছড়িয়ে দেয়। কিন্তু এর সদ্ব্যবহারের জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং ব্যবসায়ী সংগঠনের মাধ্যমে তা ছড়িয়ে দেয়া প্রয়োজন। এর মাধ্যমেই ব্যক্তিক সৌকর্যমন্ডিত এই জ্ঞানকে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বহুমাত্রিকতা প্রদান করা সম্ভব।’

রাষ্ট্রদূত নেদারল্যান্ডসে আগত বাংলাদেশী ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য সুযোগ-সুবিধা কিভাবে আরও বৃদ্ধি করা যায় সে লক্ষ্যে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং ব্যবসায়িক পর্যায়ে দূতাবাস যে সমস্ত কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে তাও তুলে ধরেন। নেদারল্যান্ডস সরকারকে, বিশেষ করে নেদারল্যান্ডস ফেলোশীপ কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে রাষ্ট্রদূত আশাবাদ ব্যক্ত করেন নিত্যনতুন উদ্যোগের মাধ্যমে পারস্পরিক সহযোগিতার এই সম্পর্ক অটল থাকবে।

ডাচ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি মিসেস লুইজ হুবেন্স নেদারল্যান্ডস সরকারের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে মর্মে আশ্বস্ত করেন। ২০১৫ সালে বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেদারল্যান্ডস সফর এবং নেদারল্যান্ডসের রানী ম্যাক্সিমার বাংলাদেশ সফর কিভাবে বাংলাদেশ এবং নেদারল্যান্ডসের সম্পর্ককে বহুমাত্রিক পর্যায়ে উন্নীত করেছে সে বিষয়েও তিনি বিশদ আলোচনা করেন।

নির্ধারিত পর্বের আলোচনায় অংশগ্রহণ করে আগত ছাত্র-ছাত্রীরা প্রশাসনের কার্যক্রমে তাদের সন্তোষ প্রকাশ করেন, তবে বাংলাদেশ থেকে আরও অধিক সংখ্যক ছাত্র-ছাত্রীরা যাতে নেদারল্যান্ডসে পড়ালেখায় উৎসাহিত হয় সে লক্ষ্যে নিউফিক (Nuffic) এর প্রচারণা আরও জোরদার করার অনুরোধ জানান। তারা নেদারল্যান্ডসে চাকরি সংক্রান্ত কোচিং, পেশাগত পরিকল্পনা এবং ইন্টার্নশীপ সহায়তার বিষয়ে পর্যাপ্ত সহযোগিতা প্রদানেরও অনুরোধ জানান।

নেদারল্যান্ডসের শিক্ষা, সমাজ এবং স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সাথে খাপ খাইয়ে নেবার জন্য এসকল বিষয়ে সেমিনারে ছাত্র-ছাত্রীদের বিভিন্ন পরামর্শ, টিপস প্রদান করা হয়। বাংলাদেশী আলামনাই এবং তরুণ পেশাজীবীরা ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে তাদের অভিজ্ঞতা বিনিময় করেন যা নতুনদের যথেষ্ট উৎসাহিত করে। ছাত্র-ছাত্রীরা চাকরির সুযোগ, ইন্টার্নশীপ এবং পেশাগত পরিকল্পনার জন্য তাদের পরামর্শ প্রত্যাশা করেন। তারা বাংলাদেশের উন্নয়নে তাদের অর্জিত জ্ঞান কিভাবে প্রয়োগ করতে পারে সে বিষয়েও আলোকপাত করেন।

রাষ্ট্রদূত বেলাল পানি, কৃষি, উদ্ভাবন ইত্যাদি ক্ষেত্রে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উদ্যোগের প্রতি আলোকপাত পূর্বক ছাত্র-ছাত্রীদের একটি ‘সমৃদ্ধ বাংলাদেশ’ বিনির্মাণে দূতাবাসের কার্যক্রমে সংযুক্ত থাকার আহবান জানিয়ে আলোচনা অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করেন। তিনি আশ্বস্ত করেন সেমিনারে উঠে আসা প্রস্তাবনাসমূহ দূতাবাস যথাযথভাবে বিবেচনায় রাখবে। একইসাথে ছাত্র-ছাত্রীদেরকে তাদের চিন্তা-ভাবনা এবং পরামর্শ দূতাবাসকে অবহিত রাখার প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখারও অনুরোধ জানান।

রাষ্ট্রদূতের সহধর্মিণী ড. দিলরুবা নাসরিন সেমিনারে অংশগ্রহণকারীদের মাঝে শুভেচ্ছা উপহার বিতরণ করেন এবং আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে এ ধরণের আয়োজন আরও বৃদ্ধি পাবে যার মাধ্যমে নেদারল্যান্ডসে তাদের অর্জিত জ্ঞান এবং উদ্ভাবনাসমূহ বাংলাদেশের প্রয়োজনীয় উন্নয়নে প্রয়োগ করা সম্ভব হবে।

সেমিনার শেষে অংশগ্রহণকারী সকলকে নৈশভোজে অ্যাপায়িত করা হয় এবং স্থানীয় বাংলাদেশী ব্যান্ড দল ‘ত্রিমাত্রিক’-এর অংশগ্রহনে একটি সংক্ষিপ্ত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশনা হয়। রয়্যাল ডাচ শেল-এ কর্মরত জনাব সিরাজ কবীর অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন। ছাত্র-ছাত্রীরা এই আয়োজনের জন্য তাদের সন্তোষ প্রকাশের পাশাপাশি দূতাবাসকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)