১০০ টাকায় পুলিশ কনস্টেবলের চাকরির জন্য পুলিশ সুপারের কাছে অসহায় মামুনের আবেদন

বরাবর,
মানণীয় পুলিশ সুপার মহোদয়,
সাতক্ষীরা ।

বিষয় : ১০০ টাকায় একটি পুলিশ কনস্টেবল এর চাকরি দিবেন স্যার ।

জনাব,যথাবিহীত সম্মান প্রদর্শক বিনীত নিবেদন এই যে , আমি মোঃ আবদুল্লাহ আল মামুন , পিতা – মোঃ সাইদুল ইসলাম , মাতা – মিসেস মর্জিনা খাতুন , গ্রাম – ভালুকা , চাঁদপুর , থানা + জেলা – সাতক্ষীরা ।

ছোট বেলা থেকে অভাব অনাটন আর কষ্টের সাথে লড়াই করে বেড়ে উঠেছি , আমার আব্বা একজন দিনমজুর । রাজমিস্ত্রির জোগাড়ির কাজ করে আমাদের সংসার চলতো খুব অভাবের মধ্যে দিয়ে । ছোটবেলা থেকে লেখাপড়া করার খুব ইচ্ছা ছিলো আমার , কিন্তু পিতা – মাতার সাধ থাকলে সাধ্যি ছিলো নাহ । প্রাইমারী স্কুল পার করে হাইস্কুলে উঠেছিলাম অনেক কষ্ট করে , একটা সময় ক্লাস নাইনে উঠলে ফরম ফিলাপের টাকা জোগাড় করতে হাতে কলম ফেলে দিয়ে সাবল তুলে নিলাম , বেছে নিলাম রাজমিস্ত্রির জোগাড়ীর কাজ । আব্বা অনেক অসুস্হ হয়ে পড়লো রোগে । সংসারের দায়িত্ব কাধে পড়লো আমার । ” মা ” লোকের বাড়িতে কাজ নিলো , বাড়িতে ছোট একটা বোন তাকে মানুষ করা , এদিকে লেখাপড়া, উপায় না পেয়ে প্রথমে ধান কাটার কাজ শুরু করলাম । তাই দিয়ে যা পেতাম সংসার চালানো শুরু করলাম । ধানের সিজন শেষ কি করবো চাঁদপুর থেকে পাশের বাড়ির বড় ভাই হাবিব রাজমিস্ত্রির সাথে ১৩ কিলোমিটার সাইকেল চালিয়ে আসলাম সাতক্ষীরায় , জীবনের প্রথম জোগাড়ির কাজ করার জন্য । প্রথম দিনেই কাজ করে হাতে ঠোসা উঠে গেলো , অভ্যাস না থাকলে যা হয় ।

আবার সন্ধ্যা বেলা ১৩ কিলোমিটার সাইকেল চালিয়ে ভালুকা চাঁদপুর বাড়িতে গেলাম । রাতে বেলা লেখাপড়া করতে বসতাম মনের মাঝে নতুন স্বপ্ন নিয়ে একদিন এস, এস সি পাশ করবো , কলেজে পড়বো । শুরু হলো জীবন সংগ্রাম , এভাবে জোগাড়ির কাজ করে লেখাপড়া করে SSC পাশ করলাম 3. 61 নং পেয়ে , কলেজে ভতি হলাম HSC , টাকার জন্য কোন স্যারের কাছে পড়তে পারিনি , বই / নোট কেনার ক্ষমতা ছিলো নাহ , বন্ধুদের কাছ থেকে বই / নোট নিয়ে রাতের বেলা বসে বসে নিজে নোট করে পড়েছি , অনেক চেষ্টার পর HSC পরীক্ষায় পাশ করলাম 3. 17 নং পেয়ে । অনেক কষ্টের ভিতরে ও থেমে থাকিনি , সাতক্ষীরা সরকারি কলেজে বড় ভাইদের সহযোগিতায় ভর্তি হলাম (ইসলামী ইতিহাসে) – অর্নাস ।

ছোটবেলা থেকে পুলিশের পোশাকটা আমাকে খুব অনুপ্রানিত করতো । মনে হতো একটা পুলিশের চাকরি পেলে ওই পোশাকটা আমি ও পরতে পারতাম । দেশের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রাখতে পারতাম । কিন্তু কে পূরণ করবে এই স্বপ্ন ? সারাদিন ৮ ঘন্টা জোগাড়ির কাজ করবো, নাহ রাতের বেলা পড়াশুনা করবো নাকি চাকরি খুঁজবো । প্রতিদিন ২৬ কিলোমিটার সাইকেল চালিয়ে কাজে আসা – যাওয়া, কলেজে ক্লাশ করা অসম্ভব হয়ে উঠতে থাকলো । গায়ের ব্যাথায় , হাতের ব্যাথায় সব দিন কাজ করা ও সম্ভব হয়ে উঠতো নাহ ।

সাতক্ষীরা একদিন জোগাড়ির কাজের ফাঁকে পরিচয় হলো খবর পাঠিকা ” রেশমা রশনি ” আন্টির সাথে , আন্টির বাড়িতে ১ মাস রাজমিস্ত্রির জোগাড়ির কাজ করেছি , বেলা ১১ টা বাজলেই আন্টির কাছে “চা “খাওয়ার নাম করে সরকারী কলেজে ১ ঘন্টার ১ টা অর্নাসের ক্লাশ করে এসেছি চুরি করে , হঠাত করে আন্টি একদিন এই চুরিটা ধরে ফেলে খুব রাগ করে জিঞ্জাসা করে তুমি প্রতিদিন কাজের ফাকে “চা” খাওয়ার নাম করে কোথায় যাও। তোমার রাজমিস্ত্রি একা কাজ করে উওর দাও,কোথায় যাও ? আন্টির রাগ দেখে মাথাটা নিচু করে চোখের পানি ফেলতে ফেলতে বলেছিলাম , আন্টি আমি অনেক কষ্ট করে লেখাপড়া করার জন্য এই জোগাড়ির কাজ করছি । আমার আব্বার পড়াশুনা করানোর ক্ষমতা নেই । আমি সরকারি কলেজে (ইসলামী ইতিহাসে) – অর্নাস ২য় বর্ষে পড়ি । সামনে আমার ২য় বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষা , এই কটা দিন ক্লাস করতে না পারলে আমি নন কলিজিয়েট হয়ে যাবো , অনেক টাকা ফাইন ধরবে ডিপার্টমেন্ট , যেটা আমার দেবার ক্ষমতা নেই । আমি অনেক মানুষ দেখেছি এই ছোট বয়সে কিন্তু” রেশমা রশনি “আন্টির মত মানুষ এক টাও দেখিনি । নিজ চোখের পানি ফেলতে ফেলতে আমাকে বাবা আমার ভুল হয়ে গিয়েছে, না জেনে আমি তোমাকে বকা দিয়েছি বলে নিজের ছেলের মত বুকে জড়িয়ে ধরেছে , না জেনে রাগ করেছে তার জন্য ক্ষমা চেয়েছে । আন্টির ও একজন পুলিশের ঘরের মেয়ে ,উনার দাদা মৃত আলহাজ্জ আব্দুল আলী দারোগা ছিলেন । সাতক্ষীরাতে সবাই তার দাদার নামে তাদের বাড়িটি সুপরিচিত ।

একদিন আন্টিকে মনের কথা খুলে বললাম । আন্টিকে বললাম ,গত বছর শুনেছি আমাদের সাতক্ষীরার পুলিশ সুপার সাজ্জাদুর রহমান স্যার নাকি ১০০ টাকায় পুলিশের চাকরি দিয়েছে । আমার একটা পুলিশ কনস্টেবল এর চাকরী দিবে স্যার । আমার সারা জীবনের কষ্টের লেখাপড়ার মূল্য দিবে একটা চাকরি দিয়ে । শুনেছি পুলিশের চাকরি করতে গেলে ৮ থেকে ১০ লক্ষ টাকা লাগে, না হলে চাকরি হয় নাহ । আমার তো কোন ক্ষমতা নেই টাকা দেবার , একটা পুলিশ কনস্টেবল এর চাকরি করতে গেলে ১৮- ২০ বছর বয়সের মধ্যে বয়স সীমাবদ্ধ থাকতে হয় , আমার বয়স ১৯ বছর চলছে আগামী বছর আর দরখাস্ত করতে পারবো নাহ আন্টি । আমার উচ্চতা ৫ ফুট ৮ ইঞ্চি , যেখানে পুলিশে ৫ ফুট ৫ চেয়েছে , একটা বার আমাকে SP স্যারের কাছে নিয়ে যাবেন , আমি স্যারের পা দুটো জড়িয়ে ধরে ভিক্ষা চাইবো একটা চাকরির জন্য । আমার শারিরীক গঠন , উচ্চতা, লেখাপড়া সব দিক থেকে পরীক্ষা করে যদি স্যারের দয়া হয় তাহলে স্যার কি আমার পাশে এসে দাড়াবেন , আমার স্বপ্ন পূরণ করতে । এই ছোট মামুনের এই প্রশ্ন গুলির কোন উওর তার রেশমা রশনি আন্টি দিতে পারিনি । শুধু বলেছিলো , আল্লাহ পাকের উপর ভরসা রাখো ,পুলিশের কনস্টেবল এর সারকুলার দিয়েছে দরখাস্ত করো আগামী ২২ জুন তারিখে পরীক্ষা দিতে হবে তোমাকে ।

আমার  মনের ইচ্ছা একটা বার শ্রদ্ধেয় পুলিশ সুপার স্যারের সাথে দেখা করতে চাই । বলতে চাই তার অভাব অনাটনের কষ্টের কথা ।কত কষ্ট করে আজ সে লেখাপড়া করছে হাতুড়ি , কোদাল, ইট মাথায় নিয়ে শুধু একটা পুলিশের চাকরির করার স্বপ্ন নিয়ে ।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)