ঘুমের সময় আমাদের সঙ্গে যা যা হয়

আমরা প্রতি দিন অন্তত একবার হলেও ঘুমাই। কিন্তু আপনি কি জানেন পৃথিবীতে ১০০% মানুষের মধ্যে গড়ে ১৩ পারসেন্ট মানুষ প্রতিদিনের রাতে না ঘুমিয়ে দিনে ঘুমায়। আরো এমন অনেক ফ্যাক্ট আছে আমাদের ঘুমকে নিয়ে। যেমন ধরুন আপনার বয়স যতই হোক না কেন ঘুমের পরে ০.৫ ইঞ্চি আপনার শরীরের আয়তন বাড়ে। আবার ধরুন কেনই বা আমরা স্বপ্ন দেখি। আবার আমাদের প্রত্যেকের স্বপ্ন কেনই বা আলাদা হয়। এসব অজানা অবাক করা ঘুমের তথ্য নিয়ে ডেইলি বাংলাদেশের আজকের এই আলোচনা। প্রথম পর্বে কিছুটা আলোচনা করা হয়েছে। আজ দ্বিতীয় এবং শেষ পর্ব প্রকাশ করা হলো-

ঘুমানোর সময় মানুষ কেন নাক ডাকে জানেন, তার প্রধান কারণ হলো গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হওয়ার সময় নাক ও গলায় যে শ্বাস-প্রশ্বাসের জায়গা আছে তা অত্যন্ত আরাম বোধ করে। আর এই অবস্থায় আমাদের শরীরে কিছু পরিমাণে বায়ু প্রবেশ করে। এই সময় আমাদের শরীর ওই হাওয়া যাওয়ার রাস্তাটিকে ছোট করে দেয়। যাদের সেই অংশটি অতি মাত্রায় ছোট হয়ে যায় তারাই সাধারনত নাক ডাকে। তবে প্রত্যেকের অতিমাত্রায় ছোট হয় না। কিছু মানুষের ক্ষেত্রেই হয়। তাই আমাদের প্রত্যেকের পরিবারের কোনো ব্যক্তির মধ্যে এই নাক ডাকার ঘটনাটি ঘটতে থাকে।

আপনারা কি জানেন আমরা ঘুমের ঘোরে প্যারালাইসড হয়ে যাই? আমরা জানি প্যারালাইসড লোকেরা সাধারণত নড়াচড়া করতে পারে না এবং তাদের হাত পা নিশ্চল হয়ে যায়। গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হওয়ার সময় আমাদেরও প্যারালাইসিস হয়ে যায়। তবে এই ব্যাপারটি অস্থির হওয়ার প্রয়োজন নেই। কারণ এটি একটি সাধারণ ব্যাপার। যা প্রত্যেকের সঙ্গেই ঘটে কিন্তু আমরা কখনই নিজেরা অনুভবই করতে পারি না যে আমাদের প্যারালাইসিস হয়েছে। কারণ আমরা গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন  থাকি।

ঘুমের সময় চোখ নড়তে থাকে এমনটা ঘটে এবং সেটি প্রমাণিত। আমাদের প্রত্যেকেরই ব্যক্তিগত চিন্তায় মনে হয়  ঘুমানোর সময় আমাদের চোখের অবস্থান একই জায়গায় স্থির থাকে। কিন্তু এই ভাবনা সম্পূর্ণটাই ভুল। বৈজ্ঞানিক গবেষণায় জানা গিয়েছে যে, যখন আমরা ঘুমাই তখন আমাদের চোখ আমাদের সঙ্গে এক অদ্ভুত আচরণ করে। আসলে ঘুমানোর সময় আমাদের চোখ সব সময় নড়তে থাকে। বৈজ্ঞানিক গবেষণায় গ্রাফ চিত্রে দেখা যায়, এক স্থান থেকে অন্য স্থানে চোখ সঞ্চালিত হয়। যদি আপনি ভাবেন এটা আপনার সঙ্গে হয় না তবে আবারও বলব এটি আপনার ভুল ধারনা। শুধু আপনার সাথে এই নয় আপনার পিতা মাতা বন্ধু-বান্ধব সমস্ত পৃথিবীর মানুষের সঙ্গে এটা ঘটে। কিন্তু আশ্চর্য ব্যাপার এই যে, আমরা সেটা কখনোই অনুভব করতে পারি না। তার একটি প্রধান কারণ হল এই ঘটনা শুধুমাত্র তখনই ঘটে যখন আপনি গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন থাকেন।

আপনি হয়তো কোন ব্যক্তির সঙ্গে পরিচিত হওয়ার পরে এটা ভেবে নিশ্চয়ই অবাক হয়েছেন যে তার বয়স এত কম কেন। অর্থাৎ তার বয়স হয়তো ৮০ কিন্তু আপনার তাকে দেখে মনে হচ্ছে ৬০ কিংবা ৭০ বছরের একজন মানুষ। এটার সঙ্গে আমাদের ঘুমের সরাসরি সম্পর্ক। বৈজ্ঞানিকরা একজন মহিলার ওপর সমীক্ষা চালায়। যাকে দেখে ৬০ থেকে ৭০ বছরেরই মনে হতো কিন্তু আসলে তার বয়স ছিল ৮৩ বছর। তারা এই সমীক্ষায় জানায় তার এই যৌবন ধরে রাখার ক্ষমতা শুধুমাত্র ঘুমের কারণে। আর মহিলার কথাতে এটা প্রমাণ হয় যে, সেই মহিলা ভীষণভাবে ঘুমাতো। বিজ্ঞানীদের মতে, ঘুমে আছন্ন   অবস্থায় আমাদের শরীরের টেম্পারেচার এবং ব্লাড প্রেসার কম থাকে। সেই কারণে আমাদের হৃৎপিণ্ডে আরাম অনুভব করে। এক কথায় বলা যায় ঘুমের সময় আমাদের রিচার্জ হয় ঠিক মোবাইল ফোনেরই মতো। আর এই সময় আমাদের শরীরের পিসিও রিপিয়ার হয়ে ওঠে এবং নতুন নতুন কোষ এরও জন্ম দেয়। তাই আমাদের ত্বকের উজ্জ্বলতা পেতে গভীর ঘুমের প্রয়োজন। লক্ষ্য করে দেখবেন কম ঘুমের কারণে চোখের কাল দাগ, ব্রন, মুখের উজ্জলতা হারায়। কিন্তু তাই বলে এই নয় যে অনেক বেশিক্ষণ ঘুমাতে হবে। যদি আপনি প্রয়োজনের বেশি ঘুমান তাহলে আপনার ওজন অনেক তাড়াতাড়ি বারতে থাকবেন এবং আপনি মোটা হয়ে যাবেন।

আমরা সাধারণত জানি আমরা শৈশব থেকে ১৮ বছর অব্দি ঘুমানোর সময় বাড়তে থাকি। কিন্তু আপনি জেনে অবাক হবেন আঠারো বছর পরে মানুষ বাড়তে থাকে। আপনি যদি ঘুমাতে যাওয়ার সময় আপনার হাইট মেপে রাখেন এবং ঘুম থেকে ওঠার পর আবার আপনি আপনার হাইট মাপেন তাহলে দেখতে পাবেন আপনার হাইট বেড়ে গেছে। তবে তা বেশি বাড়ে না। মাত্র ০.৫ ইঞ্চির মতোই বেড়ে যায়। কারণ ঘুমের সময় আমাদের শরীরের উপর সেই রকম চাপ পড়ে না। তাই ঘুম থেকে ওঠার পর সাধারণত আমাদের হাইট বেড়ে যায় কিন্তু এই হাইট বেশিক্ষণ থাকে না। প্রায় ৫ থেকে ৬ ঘন্টার মধ্যেই আমাদের শরীর আবার আগের অবস্থায় ফিরে আসে। কারণ আমাদের মেরুদণ্ডের উপর বেশি চাপ এর ফলে এমন ঘটনা ঘটে। আর এই ঘটনা আমাদের সঙ্গে প্রায় প্রতিদিনই ঘটতে থাকে।

এবার যেটি বলতে চলেছি এটি সাধারণত সবার সঙ্গে হয় না কিন্তু আপনি চাইলে এই ঘটনাটি আপনার সঙ্গে ঘটাতে পারবেন। সেটা হল অ্যাস্ট্রাল প্রোজেকশন। ধরা যাক, আপনি ঘুমিয়ে রয়েছেন। এই অবস্থায় আপনি আপনার শরীর থেকে বেড়িয়ে আপনার নিজের শরীরকে দেখতে পারেন তাহলে কেমন হবে? দারুন ব্যাপার না? আর এটা যে সম্ভব তা বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমানিত। এটা আপনিও করতে পারেন। তবে এর জন্য আপনাকে ধ্যান করতে হবে। মেডিটেশনের মাধ্যমে শরীর মানসিকভাবে খুব হালকা হয়ে পরে। আপনিও চেষ্টা করতে পারেন।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)