সেই গাপ্টিলের ব্যাটেই আবার হারলো বাংলাদেশ

নেপিয়ারেও মার্টিন গাপ্টিল, ক্রাইস্টচার্চেও মার্টিন গাপ্টিল। এক গাপ্টিলের রহস্যই ভেদ করতে পারলো না বাংলাদেশের বোলাররা। তার ওপর চ্যালেঞ্জটাও মামুলি। মাত্র ২২৭ রানের। সুতরাং, যা হওয়ার তাই হলো। সেই একই ব্যবধানেই, অর্থ্যাৎ ৮ উইকেটের ব্যবধানেই দ্বিতীয় ওয়ানডেতে পরাজয় বরণ করলো বাংলাদেশ। সে সঙ্গে ৩ ম্যাচের সিরিজ ১ ম্যাচ হাতে রেখেই জিতে নিলো স্বাগতিক নিউজিল্যান্ড।

লক্ষ্য মাত্র ২২৭ রানের। আগের ম্যাচে ২৩২ রানের লক্ষ্য কিউইরা পার হয়ে গিয়েছিল ৪৪.৩ ওভারে। এবার তো লক্ষ্য আরও কম। এই লক্ষ্য পাড়ি দিতে গিয়ে বাংলাদেশের বোলারদের কাছ থেকে খুব বড় চ্যালেঞ্জও যে পেয়েছেন কিউই ব্যাটসম্যানরা তা নয়। রীতিমত স্বাচ্ছন্দ্যে খেলে, ৩৬.১ ওভারেই জয়ের লক্ষ্যে পৌঁছে গেলো স্বাগতিকরা।

নেপিয়ারের চিত্রনাট্যই যেন লেখা ছিল ক্রাইস্টচার্চের জন্য। প্রথম ম্যাচে যেমন বাংলাদেশের হয়ে লড়াই করেছিলেন মোহাম্মদ মিঠুন, ক্রাইস্টচার্চে আজও লড়াই করলেন মিঠুন। নেপিয়ারে প্রথম ম্যাচে যেমন গাপ্টিল সেঞ্চুরি করে অপরাজিত থাকলেন ১১৭ রানে। আজ তিনি আউট হয়ে গেলেও করলেন ১১৮ রান। নিউজিল্যান্ডের জয় এলো ৮ উইকেটে। পার্থক্য শুধু, আগের ম্যাচ জিততে লেগেছিল ৪৪.৩ ওভার। আর আজ লাগলো মাত্র ৩৬.১ ওভার।

কেবল মোস্তাফিজুর রহমানই পারলেন কিউইদের গায়ে কিছুটা আঁছড় দিতে। আর কেউ পারেননি। ওপেনার হেনরি নিকোলস এবং সেঞ্চুরিয়ান মার্টিন গাপটিলের উইকেট তুলে নেন তিনি। আবার মোস্তাফিজের বলে দু’জনেরই ক্যাচ ধরেন লিটন দাস।

দলীয় ৪৫ রানের মাথায় কিউইদের উদ্বোধনী জুটিতে ভাঙন ধরাতে সক্ষম হন মোস্তাফিজুর রহমান। ১৪ রান করা হেনরি নিকোলসকে ফিরিয়ে দেন তিনি। ৮ম ওভারে মোস্তাফিজের করা ৪র্থ বলটি লেগ সাইড দিয়ে বাউন্ডারি মারতে চেয়েছিলেন নিকোলস। কিন্তু ডিপ স্কোয়ার লেগে বল উঠে গেলে সেটা তালুবন্দী করে নেন লিটন দাস।

হেনরি নিকোলস আউট হয়ে যাওয়ার পর কেনে উইলিয়ামস আর মার্টিন গাপটিল মিলে গড়ে তোলেন ১৪৩ রানের বিশাল জুটি। তাদের দু’জনের এই জুটির কাছেই মূলতঃ হার মানতে বাধ্য হয় বাংলাদেশ। ২৮.৫ ওভারে দলীয় ১৮৮ রানের মাথায় মার্টিন গাপটিলের উইকেট নেন মোস্তাফিজ। ডিপ মিড উইকেটে লিটনের হাতে ক্যাচ দেন তিনি। ৮৮ বলে ১১৮ রানের ইনিংস খেলেন গাপটিল। ১৪টি বাউন্ডারির সঙ্গে ৪টি ছক্কার মার মারেন তিনি।

এরপর বাকি কাজ শেষ করতে আর কোনোই বেগ পেতে হয়নি কেনে উইলিয়ামসন আর রস টেলরের। ৮৬ বলে ৬৫ রান করেন উইলিয়ামসন। ২১ রানে অপরাজিত থাকেন টেলর।

আর আগে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে ৪৯.৪ ওভারে ২২৬ রান তুলতেই অলআউট হয়ে যায় বাংলাদেশ। সিরিজ বাঁচানোর মিশনে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই বিপর্যয়ের সূচনা করেন লিটন দাস। চতুর্থ ওভারে ট্রেন্ট বোল্টের প্রথম বলেই লকি ফার্গুসনের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান লিটন। যদিও লিটনের দুর্ভাগ্য। লেগ সাইডে শট খেলতে গিয়ে ক্যাচ উঠলেও অনেক দুর দৌড়ে এসে ক্যাচটি তালুবন্দী করেন ফার্গুসন।

লিটন আউট হয়ে যাওয়ার পর তার ওপেনিং পার্টনার তামিম ইকবালও কিছু করতে পারলেন না। আগের ম্যাচের মতই ব্যর্থতার পরিচয় দিয়ে তিনি আউট হয়ে গেলেন ব্যাক্তিগত ৫ রানে। দলীয় রান তখন ১৬। শুরু থেকেই তামিমকে মনে হচ্ছিল স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছেন না। যার ফলে ২৮ বল মোকাবেলা করেও তিনি করতে পারলেন কেবল ৫ রান।

১৬ রানে ২ উইকেট পড়ার পর সৌম্য সরকার এবং মুশফিকুর রহীম কিছুটা প্রতিরোধের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। দু’জনের ব্যাটে ৩২ রানের জুটিও গড়ে ওঠে। কিন্তু সৌম্য সরকারের অস্থিরতা আর সেই চিরাচরিত ভুল সমাপ্তি ঘটিয়ে দিলো সম্ভাবনাময়ী একটি জুটির।
কলিন ডি গ্র্যান্ডহোমের বলটিতে কোনো বিপজ্জনক গতি ছিল না। ছিল না ইনসুইং কিংবা আউটসুইংও। শুধু অফস্ট্যাম্পের বাইরে রেখেছিলেন তিনি বলটি। এমন বলে বোলার উইকেটের আশাও করেন কম; কিন্তু সৌম্য ড্রাইভ করতে গিয়ে ছোঁয়ালেন ব্যাটের উপরের কানায়। বল চলে গেলো স্লিপে। ক্যাচ ধরলেন টেলর। ২৩ বলে ২২ রান করে ফিরে গেলেন সৌম্য।

মুশফিকুর রহীম আর মোহাম্মদ মিঠুনের জুটিটাও খারাপ ছিল না। তারাও চেষ্টা করলেন প্রতিরোধ গড়ার। ৩৩ রানের জুটি গড়ে ওঠে তাদের দু’জনের ব্যাটে। কিন্তু দলীয় ৮১ রানের মাথায় ভুলটা করে বসলেন মুশফিকুর রহীম। লকি ফার্গুসনের অফসাইডের বলটিতে পুশ করতে গিয়েছিলেন মুশফিক। কিন্তু বলের ঠিক উচ্চতা কিংবা লাইনে যেতে পারেননি। ফলে ব্যাটের ভেতরের কানায় লেগে বল চলে গেলো স্ট্যাম্পে। বলা যায় মুশফিক নিজেই বলটা স্ট্যাম্পে টেনে নিলেন।

মুশফিক আউট হওয়ার পর মাঠে নামলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। কিন্তু ভুলটা তিনিও করলেন। মাত্র ৭ রান করে বিদায় নেন তিনি। টড অ্যাসলের বল ঠিকমত খেলতে পারলেন না রিয়াদ। ব্যাটের কানায় লেগে বল চলে যায় উইকেটের পেছনে। যদিও দুর্দান্ত ক্যাচ ধরেছিলেন টম ল্যাথাম।

মোহাম্মদ মিঠুন এবং সাব্বির রহমানের জুটি কিছুটা আশা জাগিয়েছিল। দু’জনের ৭১ রানের জুটি মনে হচ্ছিল বাংলাদেশকে আজ হয়তো ভালো কিছু এনে দিতে পারে। সাব্বির রহমানও নিজের খোলস ছেড়ে বেরিয়ে এসে দারুণ ব্যাট করছিলেন। সঙ্গে মোহাম্মদ মিঠুন আগের ম্যাচের মতই সপ্রতিভ। টানা দুটি হাফ সেঞ্চুরিও এসে গেলো তার ব্যাট থেকে।

তবে হাফ সেঞ্চুরির পর তার কাছ থেকে আরও দায়িত্বশীল ব্যাটিংই প্রত্যাশা ছিল সবার; কিন্তু টড অ্যাসলের ইয়র্কার লেন্থের বলটি ডিফেন্স না করে তিনি কাট করতে চাইলেন। ফলাফল স্ট্যাম্পই উড়ে গেলো। ৬৯ বলে ৫৭ রান করে আউট হয়ে গেলেন মিঠুন।

সাব্বির রহমানের সঙ্গে মেহেদী হাসান মিরাজ জুটি বাধলেও সেটি বেশিক্ষণ টিকেনি। ২০ বলে ১৬ রান করেন মিরাজ। কিন্তু অহেতুক শট খেলতে গিয়ে জিমি নিশামের বলে ক্যাচ তুলে দিলেন তিনি। অনায়াসেই ক্যাচটি ধরলেন হেনরি নিকোলস। এরপর ফিরে গেলেন সাব্বির রহমানও। লকি ফার্গুসনের স্লোয়ার বুঝতে না পেরে ক্যাচ তুলে দিলেন পয়েন্টে। ধরলেন সেই নিকোলস। যেন ক্যাচ প্র্যাকটিস করছেন তিনি।

আগের ম্যাচে মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন দারুণ ব্যাট করেছিলেন। আজ পারলেন না। করলেন কেবল ১০ রান। লকি ফার্গুসনের বলে বোল্ড হয়ে ফিরে গেলেন তিনি। শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হন মাশরাফি বিন মর্তুজা। ১৮ বলে ১৩ রান করেন তিনি। জিমি নিশামের বলে বোল্টের হাতে ক্যাচ দেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। মোস্তাফিজ অপরাজিত ছিলেন ৫ রানে।

লকি ফার্গুসন সর্বোচ্চ ৩টি, টড অ্যাসলে এবং জিমি নিশাম নেন ২টি করে উইকেট। ম্যাট হেনরি, ট্রেন্ট বোল্ট ও কলিন ডি গ্র্যান্ডহোম নেন ১টি করে উইকেট।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)