পৃথিবীর বিকল্প গ্রহগুলো

একবার ভাবুন তো যদি পৃথিবী পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যায় তাহলে আমরা কোথায় যাবো?কীভাবে বাঁচবো? এই নিয়ে কম বেশি সব বিজ্ঞানীদের মাথা ব্যাথার কারণ। বেশ কয়েক দশক গবেষণার পর এমন কিছু গ্রহ পাওয়া গেছে যেগুলো হয়ত আমাদের ভবিষ্যতের পৃথিবী হতে পারে। চলুন জেনে নেয়া যাক কোন কোন গ্রহগুলো ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য-

কেপলার ৩৪৮বি

সর্বপ্রথম এটি আবিষ্কৃত হয় ২০০৯ সালে। আমাদের গ্রহ থেকে ৪৭০ আলোকবর্ষ দূরে।কেপলার ৩৪৮বি এখন পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া সবচেয়ে বেশি মানুষের বসবাসের উপযুক্ত গ্রহ। কারণ এর ইএসআই বা আর্থ সিমিলারিটি ইন্ডেক্স ৮৮ শতাংশ অর্থ্যাৎ পৃথিবীর মতো।বরং এটি পৃথিবী থেকে ১২ গুণ বড় আর পৃথিবীর থেকে ৪০ গুণ বেশি আলো পৌঁছে থাকে।তবে এই গ্রহের এমন কিছু দিক আছে যেগুলো মানুষের পক্ষেগ্রহণ করাটা সহজ হবে না।যেমন সেখানে ভালো কোনো বায়ুমণ্ডল নেই, এছাড়াও সেখানকার সূর্যটি ১০ গুণ বেশি আলো প্রদান করে থাকে।এই গ্রহ নিয়ে এখনো গবেষণা চলছে। যদি এ গ্রহের ম্যাগনেটিক ফিল্ড থাকে তাহলে এটি হতেও পারে মানুষের জীবন যাপনের দ্বিতীয় অপশন।

কেপলার ৪৫২বি

এটি আবিষ্কৃত হয় ২০১৫ সালের জুলাইতে। কেপলার ৪৫২বি’কে সুপার আর্থও বলা হয়। এ গ্রহটি পৃথিবী থেকে ৫ গুণ বড়।এ গ্রহটির কক্ষপথকে ৩৮৫ দিনে একবার পরিভ্রমণ করে থাকে অর্থাৎ এই গ্রহে এক বছর হয় ৩৮৫ দিনে। এর আকার বড় হওয়ার কারণে এর অভিকর্ষ পৃথিবী থেকে ২ গুণ বেশি।এ গ্রহে পৃথিবী থেকে অনেক বেশি আলো পৌঁছায়।তবুও যদি কখনো এ গ্রহ পর্যন্ত পৌঁছানো যায় তাহলে এটিও হতে পারে বিকল্প পৃথিবী।কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত কেপলার ৪৫২বি পৃথিবী থেকে ৪৫ হাজার আলোকবর্ষ দূরে।যদি কোনো স্পেসশিপে করে ৩৭ হাজার মাইল প্রতি ঘন্টার গতিতে এই গ্রহের দিকে যাওয়া যায় তাহলে ২৬ মিলিয়ন বছর লাগে যাবে ঐখানে পৌঁছাতে।

প্রক্সিমা বি

এটি পৃথিবী থেকে ৪ দশমিক ২ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থান করছে। প্রথমবারের মতো আগস্ট ২০১৬ সালে এটি আবিষ্কৃত হয়।প্রক্সিমা বি, প্রক্সিমা সেঞ্চুরি নামের রেড ডট স্টারের হাইবিটেবল জোনে ঘুরছে।এ গ্রহে পানির খোঁজ পাওয়া গেছে তাই এখানে জীবন যাপন করা সম্ভব বলে মনে করা হয়।এই গ্রহটি পৃথিবী থেকে ৩০ গুণ বড় যার এক বছর পৃথিবীর ১১ দিনের মত।এর ইএসআই বা আর্থ সিমিলারিটি ইন্ডেক্স শূন্য দশমিক ৮৭ শতাংশ।তবে এ গ্রহে বসবাসের দূর্বলতম দিক হচ্ছে এর সবচেয়ে কাছের সূর্য থেকে মাত্র ২ শতাংশ আলো গ্রহণ করতে হবে।এ গ্রহের আরেকটি খারাপ দিক হচ্ছে স্টেলার উইন্ড।এর উপর স্টেলার উইন্ড চলতেই থাকে এবং এক একটি ঝড় পৃথিবীর ঝড় থেকে ২ হাজার গুণ শক্তিশালী।

কেপলার ৬২-এফ

কেপলার ৬২-এফ কে ২০১৩ সালে আবিষ্কার করা হয়।কেপলার ৬২-এফ ছয় বিলিয়ন বছর পুরনো একটি তারার হাইবিটেবল জোনে অবস্থান করছে। এটির ইএসআিই শূন্য দশমিক ৬৭ এবং এটি পৃথিবী থেকে ১ দশমিক ৪ গুণ বড়।এটি পৃথিবী থেকে বেশ খানিকটা ঠান্ডা।সেখানে ছোট একটি সূর্য আছে যাকে প্রদক্ষিণ করে প্রতিনিয়ত ঘুরছে এ গ্রহটি।এটিতে পৃথিবীর মতোই পানি রয়েছে এবং সমুদ্রে রয়েছে সলিড বরফ।মানব জাতির বসবাসের জন্য এটি একটি উত্তম গ্রহ হতে পারে।এ গ্রহে এক বছর হয় ২৬৭ দিনে।এ গ্রহ যেকোনো সময় টাইরিয়াল লক হতে পারে অর্থাৎ এর এক পাশ চিরকাল সূর্যের এর দিকে এবং অপর পাশ চিরকাল অন্ধকারে থাকবে।

গ্লীজ-৫৮১জি

একে যারমিনা নামেও ডাকা হয়।যা পৃথিবী থেকে ২০ আলোকবর্ষ দূরে।এ গ্রহটিকে স্টিফেন ভোগট্ ২০১০ সালে আবিষ্কার করেন। এই গ্রহটি পৃথিবী থেকে দেড় গুণ বড়।কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত এই গ্রহটি টাইরিয়াল লক হয়ে আছে এর সূর্যের সঙ্গে।কিন্তু যদি এ গ্রহের একটমস্ফিয়ার সমানুপাতিক হয় তাহলে এ গ্রহের উষ্ণতা ডার্ক সাইট পর্যন্ত পৌঁছাতে পারবে যা জীবনের সঞ্চালন তৈরি করতে পারবে।গবেষণায় পাওয়া গেছে এই গ্রহে কম করে হলেও দুটি সমুদ্র রয়েছে।গ্লীজ-৫৮১জি গ্রহ যে সূর্যটিকে প্রদক্ষিণ করে তা খুব একটা বড় নয়।তাই এ গ্রহটি টাইরিয়াল লক হলেও এটিতে জীবন ধারণ অসম্ভব নয়।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)