বেতনা নদী খনন ও টিআরএম বাস্তবায়নের দাবি

শহর প্রতিনিধি :
বেতনা নদী অববাহিকার ১০লক্ষ মানুষের চরম দুর্ভোগ থেকে মুক্তি দেওয়ার লক্ষ্যে জরুরী ভিত্তিতে নদীটি খনন পূর্বক অববাহিকার সুবিধাজনক বিলে জোয়ারধারা (টিআরএম) বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় পানি কমিটি ও বেতনা বাঁচাও কমিটির নেতৃবৃন্দ। গতকাল রবিবার সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলে অবস্থিত প্রাচীনতম বেতনা নদীটি ঝিনাইদহ’র মহেশপুর, যশোরের চৌগাছা, শার্শা ও ঝিকরগাছা উপজেলা এবং সাতক্ষীরার তালা, কলারোয়া,  সদর এবং আশাশুনি উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। ১৫০ কিমি দৈর্ঘ্যরে এ নদীটির নিষ্কাশন এলাকার আয়তন প্রায় ৮০ হাজার হেক্টর এবং বিস্তীর্ণ এলাকায় প্রায় ১০ লক্ষ অধিবাসীর বসবাস। পলি জমে নদীর বক্ষ ভরাট হওয়ায় বিগত দুই দশক ধরে প্রতি বৎসর বর্ষাকালে এলাকায় জলাবদ্ধতা প্রকট আকার ধারণ করে। ফলে জনপদ প্লাবিত হয়ে বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এলাকার ধান ও মাছ চাষসহ সকল ধরণের উৎপাদন ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে। প্রতি বৎসরই বৃদ্ধি পাচ্ছে বাস্তুভিটা ত্যাগকারীর সংখ্যা। এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে নিকট ভবিষ্যতে এলাকার মানুষের পক্ষে এলাকায় বসবাস করা কঠিন হয়ে পড়বে।
তারা বলেন, এ সমস্যা দূর করতে সরকারের পক্ষ থেকে একাধিকবার নদী খনন করা হলেও আশাব্যঞ্জক কোন ফলাফল পাওয়া যায়নি বরং প্রতি বছর নদীর অপমৃত্যুর হার বৃদ্ধি পেয়ে বেতনা নদীটি এখন মৃত্যুর শেষ প্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছে। পূর্বে মহেশপুর, চৌগাছা, শার্শা, ঝিকরগাছা-কলারোয়া প্রভৃতি বিস্তীর্ণ এলাকা থেকে বর্ষা মৌসুমে যে পানি আসতো তার অধিকাংশ পানিই বেতনা তার শাখা নদী নৌখাল, প্রাণসায়ের, ব্যাংদহ, শালিখা, পাকুড়িয়া প্রভৃতি নদীর মাধ্যমে মরিচ্চাপ, লাবণ্যবতী এবং কপোতাক্ষে নিষ্কাশিত করতো। কিন্তু পোল্ডার ব্যবস্থার কারণে এখন আর সে সুযোগ নেই। বর্তমানে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ধূলিহর ইউনিয়নের সুপারিঘাটা থেকে উজানের ঝাউডাঙ্গার মুরারীকাটি পর্যন্ত নদীর অবস্থা খুবই সংকটজনক। এ পরিস্থিতি উত্তরণে পূর্বের নদীগুলো খনন পূর্বক পরস্পরের সাথে সংযোগ প্রদানসহ শালিখা ও পাকুড়িয়া নদীর মাধ্যমে কপোতাক্ষের সাথে সংযোগ, ব্যাংদহ, প্রাণসায়ের এবং নৌখালের মাধ্যমে লাবণ্যবতী ও মরিচ্চাপ নদীর সাথে সংযোগ প্রদান করতে হবে। অতীতের অভিজ্ঞতা অনুযায়ী শুধু খনন করে নদীরক্ষা করা সম্ভব নয়। এ জন্য খননের পাশাপাশি টিআরএম বাস্তবায়ন করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে আরো বলা হয়, ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুরে ভৈরবের সাথে মাথাভাঙ্গার সংযোগ প্রদানের মাধ্যমে এবং বেতনার উপরের অংশের নদী খনন পূর্বক ভৈরবের সাথে পুনঃ সংযোগ দিয়ে বেতনা নদীতে উজান প্রবাহ নিশ্চিত করতে হবে। এলাকার  নদীগুলোর মধ্যে পরস্পরের সংযোগ এবং এর সাথে উজান প্রবাহ যুক্ত হলে এলাকার সকল নদীই তার পূর্বের প্রাণ প্রবাহ অনেকটা ফিরে পাবে। নিরাপদ হবে এলাকার উৎপাদন ব্যবস্থা, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ এবং পরিবেশ প্রতিবেশগত ভারসাম্য।
সংবাদ সম্মেলনে নেতৃবৃন্দ দাবি জানিয়ে আরো বলেন, সমুদ্রপৃষ্ঠের বৃদ্ধি জনিত উচ্চ জোয়ার, জলোচ্ছ্বাস এবং আইলার মতো ঘটনা মোকাবেলার জন্য উপকূলীয় বাঁধ আরো মজবুত ও উঁচু করে নির্মাণ করতে হবে। ভগ্নদশা ও জরাজীর্ণ স্লুইজগেট গুলো সংস্কার করতে হবে এবং সকল স্লুইজগেট দ্বি-মুখী করতে হবে যাতে জনগণ তার চাহিদা অনুযায়ী সহজে পানি উঠা-নামা করাতে পারে। মৎস্য ঘেরের মধ্যে অবরুদ্ধ খালগুলো উদ্ধার করে ভরাট হওয়া খালগুলো রেকর্ড অনুযায়ী পুনঃখনন করতে হবে এবং পানি নিষ্কাশনের খালগুলো খাস জলাশয় হিসাবে লিজ প্রদানে বিরত থাকা। সাথে সাথে চিংড়ী চাষের জন্য উপকূলীয় বাঁধের উপর অপরিকল্পিত পাইপগেট স্থাপন নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। উপকূলীয় বাঁধ, স্লুইজ গেট এবং অভ্যন্তরীণ খালগুলো সুষ্ঠুভাবে রক্ষণাবেক্ষণ কার্যক্রম জোরালো করতে হবে এবং এটি নিশ্চিত করতে হবে যে এসব অবকাঠামো সমূহ কেবলমাত্র ব্যক্তি বা গোষ্ঠীস্বার্থে ব্যবহৃত না হয়ে সামগ্রিকভাবে যাতে জনস্বার্থে ব্যবহৃত হয়।
তারা উপরোক্ত দাবীসমূহ অন্তর্ভুক্ত করে বেতনা নদী পুনরুজ্জীবনে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ পূর্বক অববাহিকার ১০লক্ষ মানুষের চরম দুর্ভোগ থেকে মুক্তি দেওয়ার লক্ষ্যে কার্যকরী উদ্যোগ গ্রহণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)