ভিক্ষা করেন না তিনি…
পৃথিবীতে কেউ সুখে বসবাস করেন আবার কাউকে সারা জীবন সংগ্রাম করে বেঁচে থাকতে হয়। তাদের জীবনের সংগ্রাম যেন শেষই হয় না।
তাই বলে ৭৫ বছর বয়সেও সংসারের ঘানি কাঁধে নিয়ে ভ্যান চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ!
ঝিনাইদহ জেলার শৈলকুপা উপজেলার নির্বাহী অফিসার উসমান তার ফেসবুকে সোমবার (১৬ জুলাই) এমনই একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। পাঠকদের জন্য স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হলো-
গতকাল সকালে জেলায় মিটিং এ যাওয়ার সময় গাড়াগঞ্জ স্ট্যান্ডে অতিবৃদ্ধ এবং বয়সের ভারে কুঁজো হয়ে যাওয়া একজন ব্যক্তির খুব ধীরে ধীরে যাত্রিসহ পা দিয়ে ভ্যান চালিয়ে যাওয়া চোখে পড়ল। দৃশ্যটি প্রথমে দেখে খুব খারাপ লাগল।
জানা গেল লোকটি এই এলাকায় ভ্যান চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে। আমি ঐ ব্যক্তির ঠিকানা যোগাড় করতে বলি। পরে জানতে পারি, লোকটির নাম মোঃ আদিল উদ্দিন, সাং- চন্ডিপুর, দুধসর ইউনিয়ন। আমার সাথে দেখা করার জন্য তাকে সংবাদ দেওয়া হয়। আজ সকালে ভ্যান চালিয়ে তিনি আমার অফিসে আসেন। আলাপকালে তার পরিবারের বিস্তারিত তথ্য জানা যায়।
লোকটির এক ছেলে প্রতিবন্ধী। অন্য ছেলে ঢাকায় থেকে পড়াশুনা করে, কিন্তু বাবার খোঁজ রাখে না। তিন মেয়ে বিবাহিত। এক মেয়ে বিধবা হয়ে বাবার কাছে থাকে। অর্থাৎ সংসারে বৃদ্ধা স্ত্রী, প্রতিবন্ধী ছেলে, বিধবা মেয়ে ও তিনি নিজে। সংসারে একমাত্র কর্মক্ষম ব্যক্তিও তিনি নিজে। বয়সের কারণে সোজা হয়ে হাটতে পারে না। কিন্তু জীবন বাঁচানোর তাগিদে প্রতিদিন ভ্যান নিয়ে বাইরে যেতে হয়।
দ্রুত ভ্যান চালাতে পারে না বলে তার ভ্যানে কেউ উঠতে চায়না বলে তিনি জানান। দিনে ৪০/৫০ টাকা আয় হয়। তাই দিয়ে কোনোরকম সংসার চলে। কোনো কোনো দিন না খেয়েও থাকতে হয়। তবে তিনি ভিক্ষা করেন না। আত্ম মর্যাদা নিয়ে বেঁচে থাকতে চান। এই বয়সে সংসারে বিশ্রামে থাকার কথা, নাতি-নাতনি নিয়ে আনন্দে থাকার কথা। কিন্তু তার ভাগ্যটা অন্যরকম!
আগামী ২ মাস সংসার চালানোর মত নগদ অর্থ তাকে দিলাম। তার প্রতিবন্ধী ছেলেকে একটি প্রতিবন্ধী কার্ড করে দেওয়া হচ্ছে। বৃদ্ধ লোকটিকে কিভাবে স্থায়ীভাবে আয়ের ব্যবস্থা করে দেয়া যায় এটাই এখন ভাবছি।