বদলে দেওয়া মানুষের নাম মাইনুল ইসলাম

“জীবে প্রেম করে যেই জন, সেই জন সেবিছে ঈশ্বর” স্বামী বিবেকান্দের এই বাণী প্রতিফলিত হয়েছে একজন সাদা মনের মানুষের মাঝে। মাইনুল ইসলাম, খুব সহজে বদলে দেওয়া একজন মানুষের নাম। সাদাসিধে আর মিশুক প্রকৃতির এই মানুষটি। সাতক্ষীরা শহরের সুজনসাহ এলাকায় তার গ্রামের বাড়ী। অবশ্য পড়াশুনার তাগিদে ঢাকা শহরে ইট পাথরের দালানে আবদ্ধ হয়ে থাকতে হয়। প্রাণচঞ্চল এই মানুষটি ছোট বেলা থেকে পাখি আর প্রাণীর প্রতি ভালবাসা একটুই বেশি।
প্রকৃতি ও পাখিকে তো ভালোবাসে সবাই। কিন্তু পাখির প্রতি ভালোবাসার প্রকাশের ধরণটা এক এক জনের ক্ষেত্রে এক এক রকম। কেউ হয়তো বাসার খাঁচায় পাখি পুষতে ভালোবাসেন, আবার কেউ খাঁচার পাখিকে মুক্ত করে দিয়ে আনন্দ পায়। অনেকে আবার ভালোবাসার মানুষটিকে আদর করে পাখি সম্বোধন করে।এমনও কিছু মানুষ আছে যারা নির্বিচারে পাখি মেরে ফেলে বা পাখির ছানা ধরে নিয়ে গিয়ে নষ্ট করে ফেলেন।
মাইনুল তেমনি এক পাখি প্রেমী মানুষ। শুধু পাখি প্রেমী বললে ভুল হবে প্রকৃতি নিয়েই যার ভাবনা। যার মুখের কথায় ঝরে পড়ে প্রকৃতির জয়গান।
ঢাকা শহরে পড়াশুনা করেন মাইনুল। বছরে খুব কম সময় গ্রামে আসা হয় তার। শহুরে ব্যস্ত আর যান্ত্রিকতাকে পাশ কাটিয়ে সুযোগ পেলে গ্রামে ছুটে আসা মাইনুলের।পাখির প্রতি ভালোবাসা সেই ছোট থেকেই,একবার এক দোয়েল পাখিকে অসুস্থ অবস্থায় পেয়ে সুস্থ করে আবার উড়ে যাওয়া পর্যন্ত তার সেবাও করেছে।পাখির কিচিরমিচির ডাক ভালো লাগে,পাখির বন্দীদশা খুবই অপছন্দের তার।কিন্তু আজকাল পাখির এই অবাধ বিচরণ দেখা যায় কম। পাখির প্রতি এই ভালোবাসা থেকেই তাদের কিচিরমিচির ডাক শোনার জন্য বাড়ির বিভিন্ন গাছে মাটির পাত্র বেঁধে তাদের বাসা তৈরীর ব্যবস্থা করেছে মাইনুল। যেখানে পাখিরা অবাধে থাকতে পারবে,প্রজননের ফলে বাড়বে পাখির সংখ্যাও।এতে করে একদিকে যেমন প্রাকৃতিক পরিবেশ সুন্দর হবে অপরদিকে প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষার্থে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।
সাতক্ষীরার তালা উপজেলার সুজনসাহা গ্রামের এই বাড়িতে গেলে চোখে পড়ে এমন দৃশ্য।ছেলের এমন সুন্দর কাজে খুশি তার পিতামাতা।মাইনুলের বোন নবম শ্রেণির ছাত্রী ঋতু বলে আমিও পাখি পছন্দ করি আর বাড়িতে যে মাটির পাত্রে পাখিদের বাসার জন্য বাঁধা হয়েছে আমি খেয়াল রাখবো,কেউ যেন পাখিদের বিরক্ত করতে না পারে।
এই উদ্যোগ কে স্বাগত জানিয়ে গ্রামের এক মুরব্বি বলেন,  বনাঞ্চল ধ্বংস ও পরিবেশ বিপর্যয়ের ফলে পাখিদের আবাসস্থল অনেকাংশে লোপ পেয়েছে।অন্য দিকে পাখি শিকারীরা লোকচক্ষুর আড়ালে  কেড়ে নিচ্ছে পাখির প্রান।তার মাঝে এই ব্যক্তিগত উদ্যোগ ধন্যবাদের দাবি রাখে।গণসচেতনতা বৃদ্ধিতেও সহায়তা করবে এমনটি জানান তিনি।
মাইনুল ইসলামের কাছে জানতে চেয়েছিলাম, এমন ব্যাতিক্রমী কাজে কেন উদ্বুদ্ধ হলেন। তিনি জানালেন ‘আমি পাখি-প্রকৃতি ভালবাসি। পাখি যখন আকাশে উড়েবেড়ায় আমার খুব ভাল লাগে। মানুষের মত সব প্রাণীর বাঁচার অধিকার আছে। প্রকৃতির ভারসাম্য ও জীববৈচিত্র  রক্ষায় পাখিদেরও গুরুত্ব অপরিসীম।  তাই তাদের নিয়ে কাজ করি।
তিনি আরও বলেন,সবার কাছে আমার আকুল অনুরোধ,পাখি ও বন্যাপ্রাণীর প্রতি সবাই সদায় হোন।বন্যপ্রাণী ও পাখি নিধোনকারীদের প্রতিরোধ করুন।প্রকৃতি বাঁচান নিজে বাঁচুন।
আমাদের দেশ থেকে অনেক জাতের পাখি বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে শুধু মাত্র নির্বিচারে গাছ কাটা ও পাখি হত্যার কারণে। পরিবেশকে বাঁচাতে ও পরিবেশের সৌন্দর্য রক্ষা করতে পাখির তুলনা নাই। তাই আমাদের দেশের পাখি বাঁচাতে আমাদেরকেই আরো সচেতন হতে হবে।
আলোর বাহিরে নিভৃতে প্রকৃতির সেবায় নিয়োজিত আছেন মাইনুলের মত মানুষেরা। যাদের উপর নাই এই সমাজের লাইট, ক্যামেরার ফোকাস তবুও আপন মনে অসহায় মানুষ ও প্রাণীদের সেবায় নিয়োজিত আছেন মাইনুলেরা। আমরা আশাকরি এমন মাইনুল ইসলাম গড়ে উঠবে বাংলাদেশের প্রতিটা অঞ্চলে এবং প্রতিটা ক্ষেত্রে। এইভাবে প্রকৃতি ও পাখিদের সেবার বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমরা সবাই যদি এগিয়ে আসি তবে পৃথিবী গ্রহটা হয়ে উঠবে শান্তিময়।
Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)