পাটকেলঘাটাকে উপজেলা করার দাবি স্থানীয়দের

মহাকবি মাইকেল মধুসদূন দত্তের স্মৃতি বিজড়িত কপোতাক্ষের তীর ঘেঁসে গড়ে ওঠা ঐতিহ্যবাহী পাটকেলঘাটা থানাঞ্চল। কালের পরিক্রমায় এ অঞ্চলের গ্রামীণ অবকাঠামোর পরিবর্তন হয়েছে। পরিবর্তিত হয়েছে মানুষের জীবনযাত্রাও।এখানে ক্রমশ মানুষের কর্মচাঞ্চল্য বেড়ে যাচ্ছে। ফলে পাটকেলঘাটাকে উপজেলায় রুপান্তরিত করার জন্য সরকারের সুদৃষ্টির অপেক্ষার প্রহর গুনছেন স্থানীয়রা।

স্থানীয় দোকানদার রমেশ মজুমদার বলেন, কপোতাক্ষের তীরবর্তী পাটকেলঘাটায় নৌযানের মাধ্যমে সোনালী আশ পাটের আনা নেওয়া করা হতো। তখন পাটকেলঘাটাকে বলা হতো ‘পাটের ঘাট’। এরপর ক্রমান্বয়ে ‘পাটকেলঘাটা’ নামে পরিণত হয়। সময়ের প্রেক্ষাপটে হারিয়েছে অতীত সুখময় ইতিহাস, হারিয়েছে ঐতিহ্য। এখানে জন্মেছেন বহু জ্ঞানী গুণী ব্যক্তিবর্গ। পাটকেলঘাটা বাজারকে ঘিরে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন ব্যাংক, বীমা, সংস্থা ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। এখানে উত্তোরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।  অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছে এ অঞ্চলে জনসাধারণ। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় না থেকে শিক্ষিত বেকার যুবকরা গড়ে তুলেছেন একাধিক বেসরকারী প্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন ধরণের খামার সহ আত্মনির্ভরশীল প্রতিষ্ঠান। আয়তনের দিক থেকে পাটকেলঘাটা বাজার যেন কমতি নেই। এ অঞ্চলের ৫টি ইউনিয়ন নিয়ে থানা প্রতিষ্ঠিত হয়। গড়ে উঠেছে পাটকেলঘাটার প্রাণকেন্দ্র। সরকার প্রতিবছর পাটকেলঘাটা বাজার থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা রাজস্ব আয় করে থাকে। এতে দেশ যেমন অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছে তেমনি পাটকেলঘাটাবাসীর উন্নয়নের অগ্রযাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে ইতোমধ্যে ৫/৬ টি ব্যাংক, একাধিক বীমা, বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থার মতো প্রতিষ্ঠান এ অঞ্চলের মানুষের খেদমতের জন্য গড়ে উঠেছে। ঋণ সুবিধা নিয়ে পাটকেলঘাটার অসংখ্য বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান উত্তোরত্তর তাদের ব্যবসা বানিজ্য সম্প্রসারিত করে চলেছে। পাশাপাশি অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ হয়ে তারা পুনরায় আমানত হিসেবে অর্থ সঞ্চয় করছেন। বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা প্রতিনিয়ত এ অঞ্চলের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন আনতে বিনা সুদে ঋণ প্রদান করছেন।

পাটকেলঘাটার ব্যাংকে টাকা জমা দিতে আসা যুবক খালিদ হাসান বলেন, কপোতাক্ষের প্রাণকেন্দ্রে উপজেলা ভূমি অফিস। জমিজমা সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ছুটে চলেছেন আপামর জনসাধারণ। স্থানীয় হাসপাতাল, ক্লিনিক, কমিউনিটিতে আপামোর জনসাধারণ পেয়ে থাকেন নিরন্তর সেবা। সাতক্ষীরা পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির সদর দপ্তরটিও পাটকেলঘাটার প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত। বৈদ্যুতিক সেবায় গড়ে উঠেছে একাধিক কোম্পানী, বেকারী প্রতিষ্ঠানসমুহ। পাটকেলঘাটাঞ্চলের অনেক ছাত্র ছাত্রী আজ দেশ সেবায় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে নিয়োজিত।

বিগত কয়েক মাস আগে কপোতাক্ষ পাড়ে তালের বীজ বপনের আড়ম্বরপুর্ণ অনুষ্ঠানে তৎকালীন সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসক ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বর্তমান যুগ্নসচিব আবুল কাশেম মোহাম্মদ মহিউদ্দিন বলেছিলেন, পাটকেলঘাটার আশপাশ আমি ঘুরে দেখেছি। একটি উপজেলা করতে গেলে যা যা প্রয়োজন পাটকেলঘাটায় তার কোনো কমতি নেই। আপনারা( পাটকেলঘাটাবাসী)  এগিয়ে যান, আমি পাটকেলঘাটাকে উপজেলায় পরিণত করতে সর্বাত্বক সহযোগিতা করব।

পাটকেলঘাটার প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত সরুলিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমান বলেন, বৃহস্পতিবার খুলনা বিভাগীয় কমিশনার লোকমান হোসেন মিয়া ও সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক ইফতেখার হোসেন কপোতাক্ষ নদের তীরে বৃক্ষরোপন করবেন। এরপর মাদক বিরোধী ও সুধী সমাবেশ করবেন। তিনি আরো বলেন, উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় আজ পাটকেলঘাটায় উপজেলার যৌক্তিক দাবিতে পরিণত হয়েছে।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)