অতীতের বেড়াজালে সানি লিওন

এক সময়ের জনপ্রিয় পর্ন তারকা সানি লিওন পর্ন সিনেমায় অভিনয় ছেড়ে বলিউডে নাম লিখিয়েছেন। তার চেষ্টা বলিউডে অভিনেত্রী হিসেবে খ্যাতি ছড়াবেন। অথচ এই তারকার অতীত জীবন নাকি কিছুতেই তার পিছু ছাড়ছে না।

টানা কয়েক বছর ধরে ভারতে তার নামই সবচেয়ে বেশি গুগলে সার্চ করা হয়েছে। পাশের দেশ বাংলাদেশেও তাই। তার বিভিন্ন ভিডিও ক্লিপস, সাক্ষাৎকার স্মার্টফোনের মারফত হাতে হাতে ঘোরে। অথচ ভারতে একজন শিল্পীর যে ন্যূনতম অধিকারটুকু পাওয়ার কথা, ভারতের সেই সবচেয়ে বড় ইন্টারনেট তারকা ও সাবেক পর্নস্টার সানি লিওন নাকি সে অধিকারটুকুও পাচ্ছেন না।

সামনের মাসে ব্যাঙ্গালোর শহরে তার প্রথম নাচের ‘লাইভ পারফরম্যান্স’ করার কথা, কিন্তু তাতে ভারতীয় সংস্কৃতি রসাতলে যাবে-এই যুক্তি দেখিয়ে প্রতিবাদে গর্জে উঠেছে স্থানীয় কন্নড় গোষ্ঠীগুলো। এর আগে গত বছরেও ব্যাঙ্গালোরে বিভিন্ন গোষ্ঠীর বাধার মুখে কর্নাটক সরকার সানি লিওনের অনুষ্ঠান বাতিল করে দিয়েছিল।

শুধু তা-ই নয়, কয়েক মাস আগে তিনি যখন ‘করনজিৎ কাউর : দ্য আনটোল্ড স্টোরি অব সানি লিওন’ নামে নিজের বায়োপিক রিলিজ করেছিলেন, তখনও সেখানে ‘কাউর’ শব্দের ব্যবহার নিয়ে তীব্র আপত্তি জানায় নানা শিখ সংগঠন।

তাদের যুক্তি ছিল, ‘কাউর’ শিখ সমাজের নারীদের জন্য অত্যন্ত সম্মানজনক একটি পদবী এবং যিনি নিজের ধর্ম ত্যাগ করেছেন তার আর নিজের নামে কাউর ব্যবহার করার কোনো অধিকার নেই।

ফলে একটা জিনিস স্পষ্ট, পর্ন-তারকার অতীত পেছনে ফেলে সানি লিওন যতই নিজেকে বলিউডের একজন শিল্পী ও অভিনেত্রী হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চান না কেন-অনেকেই এখনও তাকে সেই পুরনো প্রিজম দিয়েই দেখতে চাইছেন।

ব্যাঙ্গালোরে ‘কর্নাটক রক্ষণ ভেদিকে’ নামে একটি কট্টরপন্থী সংগঠন অনেকদিন ধরেই সানি লিওনের প্রস্তাবিত অনুষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে আসছে। এর আগে চলতি বছরের ঠিক আগে ব্যাঙ্গালোরে সানি লিওনের যে অনুষ্ঠান করার কথা ছিল, তা এদের বাধাতেই ভেস্তে যায়। ৩ নভেম্বর ওই শহরে সানি লিওনের আবার প্রোগ্রাম করার কথা। তবে শিখ সংগঠনের বিরোধিতার কারণে সেই অনুষ্ঠানও ভেস্তে যাওয়ার পথে।

কর্নাটক রক্ষণ ভেদিকের নেতা হরিশ বিবিসিকে জানান, সানি লিওন যেদিন ভদ্রভাবে শাড়ি পরে পারফর্ম করবেন, তখন হয়তো আমরা সেটা মেনে নেয়ার কথা ভাবতে পারি। কিন্তু ছোট ছোট স্কার্ট পরে নাচ-গান করে তিনি সংস্কৃতিকে উচ্ছন্নে পাঠাবেন, সেটা কিছুতেই হতে দেয়া যায় না।

এমনকি ওই সংগঠনের তরুণী সদস্যরাও মনে করছেন-ব্যাঙ্গালোরে এমনিতেই মেয়েরা নিরাপদ নন, এরপর শহরে যদি সানি লিওন এসে নাচগান করেন, তাহলে নারী নিরাপত্তা আরও বিপন্ন হবে।

এ প্রসঙ্গে এক তরুণী বলেন, ‘মানছি উনি একজন অভিনেত্রী, ব্যক্তিগত জীবনে তিনি যা খুশি করতে পারেন-কিছু বলার নেই। কিন্তু পাবলিক লাইফে সেটা হয় না। সানি লিওন যা করেছেন, একজন মেয়ে হিসেবে আমি সেটা করলে কেউ মানবে না! সানি লিওনের ইতিহাস সবাই জানে। তিনি কিছুতেই কর্নাটক বা ভারতের সংস্কৃতির প্রতিনিধি হতে পারেন না।’

পাঞ্জাবের বিভিন্ন শিখ সংগঠন যখন তার বায়োপিকের ‘করনজিৎ কাউর’ নামকরণের বিরোধিতা করেছিল, তখনও তাদের যুক্তি ছিল সানি লিওন আসলে তাদের ধর্মেরই অবমাননা করেছেন।

তবে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেনস স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক শমিতা সেনের মতে, সানি লিওনকে পারফর্ম করতে দেয়া হবে না, কারণ তিনি পর্নস্টার ছিলেন-এই যুক্তিটাও ভীষণ হাস্যকর। কারণ ভারতে পর্নতো এমনিতেই কম জনপ্রিয় নয়!

‘ভারতে চারিত্রিক নৈতিকতার সংজ্ঞাই বা কী, যেখানে বিশ্বের সেক্স ইন্ডাস্ট্রির প্রধান উৎস কামসূত্রের জন্মই এদেশে!’-যোগ করেন এই অধ্যাপক।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)