সাতক্ষীরা সদর থানা লকআপ থেকে নিখোঁজ ডাঃ মোখলেছুর,মামলার শুনানি ২৯ আগষ্ট

রঘুনাথ খাঁ,সাতক্ষীরাঃ

পাঁচ বছর আগে সাতক্ষীরা সদর থানা
লকআপ থেকে শহরের পারকুকরালির হোমিও চিকিৎসক ডাঃ
মোখলেছুর রহমান জনি নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় তার বাবা শেখ
আব্দুর রাসেদ এর আদালতে দায়েরকৃত অপহরণ, হত্যা ও লাশ গুমের
মামলার শুনানী আগামি ২৯ আগষ্ট রোববার ধার্য করা হয়েছে।
সোমবার মামলায় সংযুক্ত করা হাইকোর্টে দায়েরকৃত রিট
পিটিশন, বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদন ও পিবিআই
প্রতিবেদনসহ বিভিন্ন কাগজপত্রের ছায়ালিপির জাবেদা নকল
জমা দেওয়ার কথা উলে-খ করে সাতক্ষীরার মুখ্য বিচারিক হাকিম
মোঃ হুমায়ুন কবীর মঙ্গলবার এ আদেশ দেন। মামলায় সদর থানার
তৎকালিন থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এমদাদ শেখ, ফিরোজ হোসেন
মোল-া ও উপপরিদর্শক হিমেলকে আসামী শ্রেণীভুক্ত করা হয়।
মামলা ও ঘটনার বিবরনে জানা যায়, ২০১৬ সালের ৪ আগষ্ট রাত
সাড়ে ৯টার দিকে অসুস্থ বাবার জন্য বাইসাইকেলে ঔষধ কিনতে
যেয়ে সাতক্ষীরা শহরের লাবনী সিনেমা হলের সামনে ফটোস্টাটের
দোকান থেকে সদর থানার উপপরিদর্শক হিমেল শহরের পারকুকরালির
শেখ আব্দুর রাশেদ এর ছেলে হোমিও চিকিৎসক মোখলেছুর রহমান
জনিকে(২৭) থানায় ধরে নিয়ে যান। ৫,৬ ও ৭ আগষ্ট স্ত্রী জেসমনি
নাহার রেশমা তার শ্বশুর ও স্বজনদের নিয়ে থানা লক আপে তাকে খাবার
দিয়েছেন, তার সঙ্গে কথা বলেছেন। থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা
এমদাদুল হক শেখ ও উপপরিদর্শক হিমেলের সঙ্গে কথা বললে জনির
জঙ্গি সম্পৃক্ততা রয়েছে বলে জানানো হয়। স্বামীর মুক্তির বিনিময়ে
তৎকালিন থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শেখ এমদাদ হোসেন ও
উপপরিদর্শক হিমেল জনির স্ত্রী রেশমার কাছে দাবি করেন মোটা
অংকের টাকা। ৮ আগষ্ট থানায় গেলে জনিকে পাওয়া যায়নি।
ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ নেতা, পুলিশ সুপার, সাতক্ষীরা জেলা
প্রশাসক, জনপ্রতিনিধি ও সাংবাদি দের জানিয়ে কোন লাভ
হয়নি। পুলিশ সাধারণ ডায়েরী না নেওয়ায় সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করা হয়। অবশেষে ২০১৭ সালের ২ মার্চ
হাইকোর্টে রিট পিটিশন (২৮৩৩/১৭) দাখিল করেন জেসমিন
নাহার রেশমা। মামলায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ আটজনকে বিবাদী করা হয়।
পরবর্তীতে আদালত মাখলেছুরকে ওই বছরের ১২ এপ্রিলের মধ্যে
সাতক্ষীরার বিচারিক হাকিম আদালতে হাজির করানোর নির্দেশ এর
পাশাপাশি ৯ মে এ সংক্রান্ত তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য
ঢাকা লিগ্যাল সেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এএসএম জাভিদ
হাসানকে নির্দেশ দেওয়া হয়। প্রতিবেদন রিটকারির বিপক্ষে
যায়।পরে আদালতের নির্দেশে ২০১৭ সালের বছরের ৩ জুলাই সাতক্ষীরার
জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম হাবিবুল-াহ মাহমুদ হাইকোর্টে তদন্ত
প্রতিবেদন দাখিল করেন। প্রতিবেদনে থানা লক আপ থেকে ডাঃ
জনির নিখোঁজ হওয়ার সত্যতা পাওয়া গেছে মর্মে প্রতীয়মান
হয়। পরবর্তীতে এক আদেশে ওই বছরের ৩ অক্টোবরের মধ্যে এ
সম্পর্কিত তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য পিবিআইকে (পুলিশ
ব্যুরো ইনভেসটিগেশন) নির্দেশ দেওয়া হয়। পিবিআই তদন্ত
প্রতিবেদনে ডাঃ জনিকে থানায় এনে আটক রাখার সত্যতা
মেলেনি বলে উলে-খ করা হয়। ২০১৮ সালের ২৪ জানুয়ারি তদন্ত
প্রতিবেদন পর্যালোচনা শেষে মহামান্য হাইকোর্ট ডাঃ জনি
নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় থানায় সাধারণ ডায়েরী নিয়ে তার
তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নেওয়ার জন্য থানা ভারপ্রাপ্ত
কর্মকর্তা এমদাদুল হক শেখ, ফিরোজ হোসেন মোল-া ও
উপপরিদর্শক হিমেল হোসেনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা গ্রহণ ও
একইসাথে তাদের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করা যেতে পারে বলে এক
আদেশে উলে-খ করেন। পরবর্তীতে বিভিন্ন জায়গার আইন
সহায়তা চেয়ে না পেয়ে বিশিষ্ঠ মানবাধিকার কর্মী
মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউণ্ডেশনের চেয়ারপার্সন অ্যাড.
সুলতানা কামালের সহায়তায় নিখোঁজ জনি’র বাবা শেখ আব্দুর
রাশেদ সোমবার সাতক্ষীরা মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে একটি
মামলা দায়ের করেন। মামলায় আসামী সদর থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত
কর্মকর্তা শেখ এমদাদ হোসেন, ফিরোজ হোসেন মোল-া ও
উপপরিদর্শক হিমেলের বিরুদ্ধে জনিকে অপহরণ করে হত্যার পর লাশ গুমের
অভিযোগ আনা হয়। মামলার নথিতে হাইকোর্টে দায়েরকৃত
রিট পিটিশনের আদেশের জাবেদা নকল, রিট পিটিশন, বিচার
বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদন ও পিবিআই প্রতিবেদনের
ছায়ালিপি জমা দেওয়া হয়।এর আগে ২০১৮ সালে উপপরিদর্শক হিমেলের বিরুদ্ধে ৬/১৮, ও
সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এমদাদ শেখ ও ফিরোজ হোসেন
মোল-ার বিরুদ্ধে যথাক্রমে ১৬/২০ ও ১৭/২০ বিভাগীয় মামলা দায়ের করা
হয়।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)