ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর আয়-ব্যয় কত?

ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো- ফুটবল প্রেমীদের কাছে এক অন্যরকম নির্ভরতা এবং ভালোবাসার নাম। বিশ্বের অন্যতম ধনী এই সকার স্টারকে নিয়ে রয়েছে সাধারণ ফুটবল প্রেমীদের মধ্যে হাজারো জল্পনা কল্পনা। সেই জল্পনা কল্পনার সমীকরণ মেলাতে কত টাকা আয় করেন এই ফুটবলার, কোন কোন গাড়ি আছে তার পছন্দের তালিকায়, আয়কৃত বিপুল পরিমাণ অর্থ তিনি কীভাবে ব্যয় করেন এরকম অনেক প্রশ্ন নিশ্চয়ই আপনার মনেও ঘুরপাক খাচ্ছে? তবে জেনে নিন উত্তর-

রোনালদোর বর্তমান বিলাসবহুল এবং অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ জীবনাচরণ কিন্তু তার ক্যারিয়ারের শুরুতে ছিলো না। মাত্র ১৫ বছর বয়সে হৃদরোগের ব্যধিতে আক্রান্ত হয়ে সে তার স্বপ্ন থেকে বেশ দূরে সরে গিয়েছিলো। কিন্তু সকল বাঁধা অতিক্রম করে অবশেষে মাত্র ১৮ বছর বয়সে তিনি পাড়ি জমান বিখ্যাত ইংলিশ ক্লাব ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে তাও আবার রেকর্ড পরিমাণ অর্থের বিনিময়ে। অতঃপর এ পর্যন্ত রোনালদো তার ক্যারিয়ারে ১২৮ টি ট্রফি জিতেছেন যার মধ্যে রয়েছে ৫ টি করে প্রিমিয়ার লীগ ট্রফি এবং চ্যাম্পিয়নস লীগ ট্রফি এবং একটি উয়েফা ট্রফি এছাড়াও ব্যক্তিগত ৫ টি ব্যলন ডি’অর সহ অসংখ্য পুরস্কার এবং সম্মাননা। রোনালদো জাতীয় দলে গোল সংখ্যা বিচারে ইউরোপীয় খেলোয়াড়দের মধ্যে সর্বোচ্চসংখ্যক গোলের মালিক এবং পুরো ক্যারিয়ার জুড়ে এ পর্যন্ত প্রায় ৬৮০ টিরও বেশি গোল সংখ্যা রয়েছে তার নামের পাশে।

বর্তমানে এই কিংবদন্তি ৪৮০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের মালিক। ২০১৮ সালের তথ্য অনুযায়ী, ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো ২০১৭ সালেই ১০৮ মিলিয়ন ডলার আয় করেন এবং পাশাপাশি তার বার্ষিক বেতন ছিল ৬১ মিলিয়ন ডলার। বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বিজ্ঞাপনের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর সি আর সেভেন। বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ফলোড এথলেট এই তারকা ফুটবলার। ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম এবং টুইটারে সব মিলিয়ে সবচেয়ে বেশি ভক্তের সংখ্যাও রোনালদোর। শুধুমাত্র ইনস্টাগ্রামে অক্টোবর ২০১৮ সালের তথ্য অনুযায়ী, ১৪৫ মিলিয়ন ফলোয়ার্স রয়েছে তার যার দ্বারা তিনি পেছনে ফেলেছেন বিশিষ্ট মার্কিন পপ তারকা সেলেনা গোমেজকে। একটি সাধারণ ছবি ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করার মাধ্যমে ক্রিশ্চিয়ানো আয় করেন ৪০০ হাজার ডলার। প্রায় ৩০টি বিশ্ববিখ্যাত কোম্পানির স্পনসরশীপের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো।

শুধুমাত্র নাইকি থেকে তিনি বছরে প্রায় ৩৮ মিলিয়ন ডলার এবং এই স্পোর্টস কোম্পানি থেকেই তিনি ২০০৩ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১৭৪ দশমিক ৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার পেয়েছেন। এছাড়াও তিনি ২০১৩ এবং ২০১৬ সালে কেএফসির ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হয়েছিলেন এবং সেখান থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ পেয়েছিলেন। অতঃপর ক্যাস্ট্রল থেকে ৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার পেয়েছিলেন ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হওয়ার সুবিধার্থে। এমনকি প্রত্যেক বছর হাফ মিলিয়ন মার্কিন ডলার তিনি পেয়ে থাকেন স্ক্রীন প্রটেক্টর গ্লাস নির্মাতা প্রতিষ্ঠান পানজার গ্লাস থেকে। পোশাক নির্মাতা প্রতিষ্ঠান আরমানির কাছে ৩৪ দশমিক ৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার নিয়েছেন শুধুমাত্র তাদের আন্ডারওয়ার এবং জিন্সের বিজ্ঞাপন এর কারণে। এছাড়াও ইজিপশিয়ান স্টিল নামক কোম্পানির অ্যাম্বাসেডর তিনি। সেখান থেকেও পেয়ে থাকেন বিপুল পরিমাণ অর্থ এমনকি নিজের পোশাক নির্মাতা প্রতিষ্ঠান সিআরসেভেন রয়েছে তার নিজের অর্থায়নে যেটি বেশ জনপ্রিয় একটি ব্র্র্যান্ড হয়ে উঠছে।
রোনালদোর এত এত আয়ের পরিমাণ জানার পরে সকলের মনে একটি প্রশ্ন উঁকি দেয়া স্বাভাবিক যে তিনি এত টাকা কোন কোন খাতে ব্যয় করেন? রোনালদোর ব্যয়ের খাত প্রসঙ্গ এলেই প্রথমেই যে খাতটির কথা শোনা যায় সেটি হলো তার কারের পেছনে। পৃথিবীর কম বেশি বিখ্যাত সব কার কোম্পানির টপ লেভেলের কারগুলোর প্রত্যেকটিই তার সংগ্রহে রয়েছে। বিখ্যাত সব কোম্পানির তৈরি করা প্রায় বিশটি কার রয়েছে তার সংগ্রহে এবং এই বিশটি কারের পেছনে আনুমানিক ব্যয় করেছেন প্রায় ৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এর মধ্যে বুগাটি চিরনের পেছনেই লেগেছে ৪ দশমিক ৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। আরেকটি স্পিড কার তার গ্যারেজে সব সময় শোভা পায় সেটি হল ল্যাম্বরগিনি এভেন্টেডর এলপি ৭০০-৪ যেটি বাজার মূল্য ৩ দশমিক ৪ মিলিয়ন ডলার।

ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হয়ে রোনালদো যখন খেলেছিলেন তখনকার স্মৃতি হিসেবে তার সংগ্রহে রয়েছে বিএমডব্লিউ এম৬ যেটি ১ দশমিক ২ মিলিয়ন ডলারের। এছাড়া রয়েছে ২ দশমিক ২ মিলিয়ন ডলারের বেন্টলি জিটি স্পিড। ভি-১২ ইঞ্জিনের  অ্যাস্টন মার্টিন ডিবি৯ রয়েছে যেটির বাজার মুল্য দুই মিলিয়ন ডলার। এছাড়াও রয়েছে ১ দশমিক ৫ মিলিয়ন ডলারের আওডির আর-৮। এছাড়াও ফেরারীর জিটিও রয়েছে ৩ দশমিক ৮৫ মিলিয়ন ডলারের, ফেরারীর এফ-৪৩০ রয়েছে ৩ মিলিয়ন ডলারের এছাড়াও ৫৯৯ জিটিবি ফিওরানো রয়েছে ৩ দশমিক ১ মিলিয়ন ডলারের। এছাড়াও রোলস রয়েস ফ্যান্টমের ডাবল ভি-১২ ইঞ্জিনের ৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের কার ছাড়াও আরো বেশ কিছু বিলাসবহুল গাড়ি রয়েছে তার সংগ্রহে। সাধারণভাবে প্রশ্ন জেগে থাকে যে সব সময় মাঠে কাটানোর পরেও ক্রিশ্চিয়ানো এতগুলি গাড়ি কিভাবে চালানোর সময় পান। তবে যতটুকুই সময় পান না কেন তবে এটা হলফ করে বলা যায়, ক্রিশ্চিয়ানোর কার কালেকশন এর প্রতি রয়েছে বিশেষ বিলাসিতা।

এছাড়াও ক্রিশ্চিয়ানোর রয়েছে ব্যক্তিগত প্রাইভেট জেট। গালফস্ট্রিম জি-৬৫০ নামের এই জেটটি ১৮ জন মানুষ ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন এই জেটটির মূল্য ৩২ মিলিয়ন ডলার যা ঘন্টায় ৬১০ কিলোমিটার গতিতে ছুটতে সক্ষম। রোনালদোর ব্যক্তিগত অতি বিলাসবহুল বাড়িটি  রয়েছে মাদ্রিদে যেটির মূল্য প্রায় ৬ মিলিয়ন ডলার, যেখানে দু’টি পুল, ভেতরে মনোরম বাগানসহ অসংখ্য সুবিধা রয়েছে। এছাড়া এই বাড়িটিতে রয়েছে তার নিজস্ব মূর্তি যে মূর্তিগুলোর তৈরি করার পেছনে তিনি ব্যয় করেছেন মিলিয়ন ডলার। ক্রিশ্চিয়ানোর ততোধিক ব্যয়ের পেছনে রয়েছে তার তার দামী দামী স্যুট যেগুলোর বেশির ভাগ আরমানি এবং বালমার থেকে অর্ডার করে বানিয়ে নেয়া এছাড়াও তার বাড়িতে শোভা পায় হাজারো রকমের নিজের জন্য ডিজাইনকৃত শু, তার ঘড়ির প্রতিও বিশেষ শখের কারণে তার কাছে রয়েছে বিশ্বের বিখ্যাত কোম্পানিগুলোর টপ ঘড়িগুলো।

রোনালদোর একটি ডায়মন্ডের ঘড়ি রয়েছে যেটি জ্যাকব অ্যান্ড কোম্পানির তৈরি। ঘড়িটের বাজার মূল্য প্রায় ২ দশমিক ৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এছাড়াও ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো চ্যারিটি ফাউন্ডেশনে টাকা দান করেন, এছাড়াও তার ২০১৩ সালের ফিফা ব্যালন ডি’অর ট্রফির রেপ্লিকা তৈরি করতে তিনি ব্যয় করেছিলেন ৭ লাখ ডলার। ২০১৬ সালে সিরিয়া চ্যারিটি ফাউন্ড ফাউন্ডেশনের মেডিকেল কেয়ার ফান্ডে দান করেছিলেন ব্যাপক অর্থ। রোনালদোকে ২০১৫ সালে বিশ্বের সবচেয়ে চ্যারিটেবল স্পোর্টসম্যান হিসেবে ঘোষণা দেয়া হয়। ক্রিশ্চিয়ানো বলেন তার এই দান করার গুণটি এসেছে তার বাবার কাছ থেকেই এবং তিনি মনে করেন যদি তুমি কাউকে কিছু দান করো তাহলে সৃষ্টিকর্তা তোমাকে তার দ্বিগুণ দান করবেন।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)