রহস্যে ঘেরা সেন্টিনেল দ্বীপ!
আধুনিক স্যাটেলাইট প্রযুক্তির যুগে বিভিন্ন আবিষ্কারের সুযোগ সুবিধা থেকে পিছিয়ে থাকা কোনো স্থান সম্পর্কে কি কারো ধারনা আছে? যেখানে বিশ্বের আনাচে কানাচে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ছোঁয়ায় জীবনমান উন্নত হচ্ছে সেখানে এমন কিছু জায়গা আছে যেগুলো মানুষ আধুনিক প্রযুক্তি দিয়েও জয় করতে পারেনি। সেন্টিনেল দ্বীপ তেমনি এক জায়গা। বঙ্গোপসাগরে অবস্থিত এই সেন্টিনেল দ্বীপ সম্পর্কে কিছু চমকপ্রদ তথ্য জেনে নেয়া যাক-
সেন্টিনেল দ্বীপ কাগজে-কলমে বাংলাদেশের না হলেও এর প্রকৃত মালিকানা ভারতে থাকা সত্ত্বেও ভারত সরকারের পক্ষে এ দ্বীপে বসবাসকারী মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। বহুবার চেষ্টা করেও ভারত সরকার এ দ্বীপ সম্পর্কে বেশি তথ্য উদ্ধার করতে পারেনি। এর কারণ হলো এই দ্বীপের অধিবাসীরা বাইরের জগতের কাউকে স্বাগত জানায় না। তারা এতটাই হিংস্র যে, নৌকা, ট্রলার, জাহাজ বা উড়োজাহাজ দ্বীপটির কাছে যাওয়ার চেষ্টা করলেই তারা তীর, বল্লম ছুড়ে মারে।
ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বা ব্রিটিশদের হাত থেকেও এই দ্বীপটি রক্ষা পায়নি। ১৮৮০ সালে এই দ্বীপটি দখলের কৌশল হিসেবে ব্রিটিশরা এই দ্বীপের কিছু মানুষকে অপহরণ করে এবং তাদের উদ্দেশ্য ছিল অপহরণ করা অধিবাসীদের ভালো খাবার দিয়ে আপ্যায়ন করে তাদের মন জয় করার পর দ্বীপ দখল করে তাদের গোলাম করে রাখবে। কিন্তু ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সে চেষ্টা ব্যর্থ হয় অপহরণ করার পরপরই। ওই দ্বীপের অধিবাসীরা কোনো এক কারণে খুব দ্রুতই মারা যায়। এর কারণ হিসেবে সে সময় ধারণা করা হয়েছিল তাদের দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সেইসময়ের মহামারী মৃত্যুর কারণ ছিল। দীর্ঘকাল মানববসতি থেকে আলাদাভাবে বসবাস করার হেতু তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এতই কম যে সর্দি, কাশি, জ্বরের মতো সাধারণ রোগের কারণেই তারা মারা যেতে পারে।
৬০ বর্গকিলোমিটারের এই দ্বীপটিতে আনুমানিক ৫০০ থেকে ৬০০ জন মানুষ থাকতে পারে বলে ধারণা করা হয়। তবে দিন দিন এই দ্বীপের অধিবাসীদের সংখ্যা ক্রমেই কমে আসছে। এই দ্বীপটি দৈর্ঘ্যে ৭ দশমিক ৮ কিলোমিটার এবং প্রস্থে ৭ দশমিক ১ কিলোমিটার। এই দ্বীপের অধিবাসীদের সেন্টিনেলস বলে আবার কেউ কেউ এদের জাড়োয়া উপজাতিও বলে থাকে। আফ্রিকা থেকে আসা এই উপজাতিরা প্রায় ৬০ হাজার বছর পূর্ব থেকে এই দ্বীপে বসবাস করে আসছে। মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেটের যুগ হওয়ার পরেও এই যুগের মানুষজন সেই প্রাগৈতিহাসিক যুগেই বসবাস করে। সেন্টিনেল দ্বীপের মানুষ খুব বেশি কাজ করতে শেখে নি অর্থাৎ তাদের ভালোভাবে জীবনধারণের ব্যবস্থাও তারা করতে পারে না। এমনকি তারা আগুন জ্বালাতে সক্ষম নয়।
২০০ সালের সৃষ্ট সুনামিতে দ্বীপটির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয় এবং অধিবাসীরা বেঁচে আছে কিনা তা পর্যবেক্ষণ করতে সেই সময় ভারত সরকার হেলিকপ্টার পাঠায়। কিন্তু আশ্চর্যের কথা এটি যে দ্বীপটির লোকজন হেলিকপ্টারটিকে দেখা মাত্রই তীর, বল্লম ছুড়ে এটি জানান দেয় যে তারা সৃষ্ট ভয়াবহ সুনামির পরেও অক্ষত অবস্থায় রয়েছে। তাদেরকে বিরক্ত করার কোনো মানে নেই৷ এরপর ২০০৬ সালে আন্দামান দ্বীপের দুই জেলে তাদের নৌকা নিয়ে এ দ্বীপের কাছাকাছি মাছ ধরতে যায়। কিন্তু অত্যধিক মদ্যপানের ফলে তারা নৌকায়ই ঘুমিয়ে পড়ে এবং রাতের বেলায় সমুদ্র স্রোতে ভেসে সেন্টিনেল দ্বীপে চলে যায়।
অতঃপর দ্বীপের অধিবাসীরা সেই ২ জেলেকে নৃশংসভাবে হত্যা করে। এমনকি ভারতীয় কোস্টগার্ড তাদের লাশ উদ্ধার করতে গেলে তারা কোস্টগার্ডদেরকে লক্ষ্য করেও তীর ছুঁড়তে শুরু করে এবং শেষ পর্যন্ত লাশ উদ্ধার না করতে পেরেই কোস্টগার্ডদের হেলিকপ্টার ফিরে চলে আসে। ২০১৮ সালে মার্কিন এক ধর্মপ্রচারককে বীভৎসতার সঙ্গে হত্যা করে। তাই পরবর্তীতে ভারত সরকার এই দ্বীপের মানুষদের জীবনযাত্রা বাইরের প্রভাব থেকে মুক্ত রাখার সিদ্ধান্ত নেয় এবং আইন করা হয় এই দ্বীপের ৩ কিলোমিটার কাছাকাছি পর্যন্তও কেউ যেতে পারবে না।