ভূমি ব্যবস্থাপনায় দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর সরকার
ভূমি ব্যবস্থাপনায় জড়িত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ বহু আগে থেকেই। কোন উদ্যোগই যেন কাজে আসছিল না। সম্প্রতি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এরই মধ্যে দুর্নীতি প্রতিরোধে কঠোর অবস্থানের কথা জানিয়েছে সরকার। সেই ধারাবাহিকতায় এবার ভূমিমন্ত্রণালয়ও কঠোর অবস্থান নিয়েছে।
ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ গত ১২ জানুয়ারি চট্টগ্রামে এক অনুষ্ঠানে আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে মন্ত্রণালয় ও মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট দফতর, অধিদফতরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব নেয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন।
এদিন তিনি বলেন, মন্ত্রণালয়কে দুর্নীতিমুক্ত করার জন্য একদম শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা থেকে শুরু করে ইউনিয়ন পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব নেবো। আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে তাদেরকে সম্পদের বিবরণ দিতে হবে। এখন আমি মৌখিক সিদ্ধান্ত আপনাদের মাধ্যমে জানিয়ে দিচ্ছি। মন্ত্রণালয়ে যাওয়ার পর তাদের সবাইকে লিখিতভাবে নির্দেশনা দেয়া হবে।
মন্ত্রী আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে সততার পুরস্কার দিয়েছেন। তিনি আমাকে মন্ত্রী করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর আস্থার প্রতিদান দিতে আমি ভূমি মন্ত্রণালয়কে দুর্নীতিমুক্ত করবো। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার মধ্য দিয়ে আমি এই মন্ত্রণালয়কে শীর্ষ ৫ মন্ত্রণালয়ের মধ্যে নিয়ে আসবো।
এ ঘোষণার চারদিন পর ১৭ জানুয়ারি মন্ত্রণালয় থেকে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের হিসাব নেয়ার জন্য চিঠি ইস্যু করা হয়। চিঠিতে বলা হয়, মন্ত্রণালয়ের প্রশাসন বিভাগ কর্মরত তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব সংগ্রহ করবে। এ লক্ষ্যে মন্ত্রণালয় থেকে সংশ্লিষ্ট ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদফতর, ভূমি সংস্কার বোর্ড, ভূমি আপিল বোর্ড, ল্যান্ড কমিশন, হিসাব নিয়ন্ত্রক (রাজস্ব), ভূমি প্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের প্রধান, সব বিভাগীয় কমিশনার, সব ডিসি ও সারাদেশের জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসারদের কাছে স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের হিসাবের ফরমসহ চিঠি পাঠানো হয়েছে। ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে এ হিসাব মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে হবে।
জানা গেছে, এ চিঠি পাঠানোর পরপরই মন্ত্রণালয়ে সম্পদের হিসাব পাঠাতে শুরু করেছেন তারা। এছাড়াও অনেকের মধ্যে দুর্নীতিবিরোধী মনোভাবও গড়ে উঠছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভূমি মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা ডেইলি বাংলাদেশকে বলেন, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী দুর্নীতিমুক্ত করতে যে উদ্যোগ নিয়েছে তা প্রশংসনীয়। এই উদ্যোগ সফল হলে অনেক দুর্নীতিবাজের আসল চেহারা উন্মুক্ত হবে। এতে করে দুর্নীতিও বন্ধ হবে।
তিনি আরো বলেন, সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন কয়েক ধাপে বাড়িয়েছে সরকার। এরপরেও দুর্নীতি বন্ধ হচ্ছে না। তবে ভূমিমন্ত্রী যে উদ্যোগ নিয়েছেন অন্যান্য মন্ত্রীরাও সেরকম উদ্যোগ নিলে দুর্নীতি অনেকাংশেই কমে আসবে। দুর্নীতি বন্ধ করতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার প্রয়োজন।
এর আগে মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নিয়েই ভূমি ব্যবস্থাপনায় দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণা করেন সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ।
তিনি বলেন, ভূমি ব্যবস্থাপনায় দুর্নীতির ক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করা হলো। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দক্ষ, স্বচ্ছ ও জনবান্ধব ডিজিটাল ভূমি ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা হবে। টিম ওয়ার্কের মাধ্যমে মন্ত্রণালয়ের কাজে চমক সৃষ্টি করে ভূমি মন্ত্রণালয়কে অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের কাজের মানের দিক থেকে টপ-টেন এ পৌঁছাতে হবে। আগামী দুই বছরের পরিকল্পনা আমরা নেব। মাঠ পর্যায়ের ভূমি অফিসগুলোকে অটোমেশনের আওতায় আনা এবং প্রত্যেক অফিসে সিসি ক্যামেরা বসানো হবে। গুড গভর্নেন্স, কর্পোরেট নিশ্চিত করা হবে। সবাই সঠিকভাবে যার যার অর্পিত দায়িত্ব সম্পন্ন করলে আর কোন চ্যালেঞ্জ অবশিষ্ট থাকে না।
কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উদ্দেশ্যে মন্ত্রী বলেন, আমি বারবার বলছি, জনগণের সেবাকে গুরুত্ব দিতে হবে। এখনো মাঠ পর্যায়ে হয়রানি হচ্ছে। যারা দুর্নীতি করছেন তারা সতর্ক হয়ে যান। পাশাপাশি দুর্নীতি ছেড়ে দেশের উন্নয়নে ভালোভাবে কাজ করেন।