জনগণের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী
টানা তৃতীয়বার এবং মোট চতুর্থবারের মত প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর তিনি কতগুলো বিষয়ে সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। আজকে ভাষণেও তিনি অনেকগুলো কর্মপরিকল্পনা জাতির সামনে উপস্থাপন করেছেন এবং তাঁর প্রধান লক্ষ্য হলো উন্নয়নের অগ্রযাত্রাকে অব্যাহত রাখা। দুর্নীতি, মাদক, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদমুক্ত একটি বাংলাদেশ বিনির্মাণের পথে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। এই কাজ করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী যে দৃশ্যমান পদক্ষেপ নিয়েছেন তারসঙ্গে একটি নতুন পদক্ষেপের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে যে, প্রধানমন্ত্রী সরাসরি জনগণের সঙ্গে জনসংযোগ বৃদ্ধি করার বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একটি সেল এই নির্দেশনা অনুযায়ী ইতিমধ্যে কাজ শুরু করেছে।
যে বিষয়গুলো নিয়ে পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে সেগুলো হচ্ছে –
প্রথমত: সরাসরি প্রধানমন্ত্রীকে টেলিফোন, ইমেইল অথবা চিঠি দেওয়া। এটি প্রধানমন্ত্রী প্রথম মেয়াদে শুরু করেছিলেন কিন্তু কিছুদিন চলার পর তেমন অগ্রগতি হয়নি। এইবার এই ব্যবস্থাটিকে পরিবর্তন করা হচ্ছে। পরিবর্তন করে দেখা যাচ্ছে কয়েকটি টেলিফোন নাম্বার দেওয়া থাকবে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কর্মকর্তারা টেলিফোনে মানুষের সমস্যা, অভিযোগ ইত্যাদি লিপিবদ্ধ করবেন এবং সেগুলোর একটি সংক্ষিপ্ত স্মারক প্রধানমন্ত্রীর কাছে উপস্থাপন করবেন। যে সমস্যা এবং অভিযোগগুলো গুরুত্বপূর্ণ এবং সঠিক মনে হবে সেগুলোর ব্যাপারে তাৎক্ষনিকভাবে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় বা সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের কাছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে নির্দেশনা জারি করা হবে।
দ্বিতীয়ত: প্রথম মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী জনগণের সঙ্গে সাক্ষাতের একটা কর্মসূচি গ্রহণ করেছিলেন। কর্মসূচিটি ব্যাপক জনপ্রিয় হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রীর ব্যস্ততার জন্য কর্মসূচিটি আর এগোয়নি। এই মেয়াদে কর্মসূচিটি পুনরায় চালু করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী মাসে বা তিনমাসে একটি নির্দিষ্ট দিনে সাধারণ মানুষের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। এই সাধারণ মানুষ যারা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চান তাঁদের সাক্ষাতের কারণ এবং সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র নিয়ে আগেই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে জমা দিতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সেগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে যাদের সাক্ষাৎ করা প্রয়োজন বলে মনে করবে তাদেরকে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের ব্যবস্থা করা হবে। তবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সূত্রগুলো বলছে, যারা দুস্থ,দরিদ্র, চিকিৎসার অভাব বা অন্যকোনো গুরুতর সমস্যা তাদেরকেই এধরনের সাক্ষাৎকার দেয়ার ক্ষেত্রে প্রাধান্য দেওয়া হতে পারে।
তৃতীয়ত: নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রী তরুণদের সঙ্গে একটি মতবিনিময় করেছিলেন। এই মতবিনিময়টি সাধারণ মানুষের কাছে ব্যপকভাবে প্রশংসিত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী এই ধারায় শুধু তরুণদের সঙ্গে নয় বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের সঙ্গে খোলামেলা মতবিনিময় করতে চান। প্রধানমন্ত্রী চিকিৎসক, আইনজীবী, শিক্ষকসহ বিভিন্ন পেশার মানুষের সঙ্গে আলাদা আলাদাভাবে মতবিনিময় করতে চান। যেখানে তিনি বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখার ক্ষেত্রে আরও কি কি করা যায় তাঁদের পরামর্শ এবং মতামতগুলো তিনি শুনতে চান। এধরণের মতবিনিময় সাধারণ মানুষকে উৎসাহিত করবে এবং সরকার কি কার্যক্রম করছে, না করছে সে সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা দেওয়া সম্ভব হবে বলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় মনে করছে।
চতুর্থত: এছাড়াও প্রধানমন্ত্রী প্রথম মেয়াদে ‘দেশবাসীর মুখোমুখি’ শিরোনামে একটি অনুষ্ঠাণ করেছিলেন যেখানে প্রধানমন্ত্রী জনগণের মুখোমুখি হয়েছিলেন এবং জনগণের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিয়েছিলেন। সেরকম একাধিক অনুষ্ঠান করার বিষয়টিও বিবেচনা করা হচ্ছে।
পঞ্চমত: প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে একটি অভিযোগ সেল গঠনেরও চিন্তাভাবনা চলছে। সেখানে বিভিন্ন সরকারী কাজে যারা হয়রানি হচ্ছেন বা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন তাঁরা সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অভিযোগ সেলে অভিযোগ করতে পারবেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এবিষয়গুলো দ্রুত তদন্ত করবে এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে যদি কোন গাফিলতি থাকে সে ব্যাপারে ব্যবস্থা নিবে।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে একাধিক কর্মকর্তা বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী মনে করছেন এবারের নির্বাচনের বিজয়টা হলো জনগণের ক্ষমতায়নের বিজয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি রাষ্ট্রদর্শন যে জাতিসংঘে সর্বসম্মতভাবে ২০১১ সালে গৃহীত হয়েছে সেই রাষ্টদর্শনটির নাম হলো ‘জনগণের ক্ষমতায়ন’। সেই রাষ্ট্রদর্শনের আলোকেই এই পাঁচ বছর মেয়াদে তাঁর নির্বাচনী ইশতেহার পূর্নাংগ বাস্তবায়ন করতে চান। এজন্য তিনি জনগনকে ক্ষমতার কেন্দ্রে আনতে চান এবং সেজন্য তিনি সরাসরি জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে চান। সেজন্যই এই পরিকল্পনা ও উদ্যোগগুলো নেওয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে।