পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী মাদক ব্যবসায়ীরা
প্রাচীনকাল থেকেই নিষিদ্ধ বস্তুর জন্য মানবজাতির একটি বিশেষ আকর্ষণ কাজ করে। বিভিন্ন সময়ে মানুষের উপকারের জন্যই বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন রকম ড্রাগ তৈরি করেছেন। এরমধ্যে কিছু কিছু ড্রাগ মানুষের উপকারে এসেছে, আবার অনেক ড্রাগ ডেকে এনেছে ধ্বংসাত্মক পরিনতি। এমন মাদকদ্রব্যগুলো হয়েছে পৃথিবীব্যাপী নিষিদ্ধ। আর এসব নিষিদ্ধ বস্তু উৎপাদন এবং সাধারণ জনগনের কাছে পৌঁছানোর মাধ্যমে কিছু মানুষ হয়ে উঠেছে কুখ্যাত। এদেরকেই আমরা ড্রাগ লর্ড বা কার্টেল বস বলে থাকি। এসকল ড্রাগ লর্ডরা তাদের নৃশংস সব কাজের জন্য বিখ্যাত হলেও একই সাথে এরা নিষিদ্ধ সব ড্রাগ বিক্রি করে গড়ে তুলেছে সম্পদের পাহাড়। চলুন জেনে আসা যাক ইতিহাসের সবচেয়ে ধনী কয়েকজন মাদক ব্যবসায়ী সম্পর্কে-
এল চাপো: মেক্সিকান এই মাদক সম্রাটের সম্পদের পরিমাণ প্রায় ১বিলিয়ন বা ১০০ কোটি ডলার। এল চাপো বা জাকিন গুজমান লয়েরা মেক্সিকান সিনালোয়া ড্রাগ কার্টেল এর প্রধান। ফোর্বস ম্যাগাজিন তাকে বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী মাদক সম্রাট বলে আখ্যায়িত করে। এছাড়াও তিনি মেক্সিকোর শীর্ষ ১০ ধনী ব্যক্তিদের মধ্যে অন্যতম। দুইবার জেল থেকে পলাতক এই মাদকসম্রাট আমেরিকা, ইউরোপ তথা এশিয়ার অনেক কোকেন এর রূট নিয়ন্ত্রন করেন। এছড়াও তিনি আমেরিকায় হিরোয়িন, ক্রাক ও অন্যান্য মাদক পাচার করে থাকেন। এল চাপো এর সিনালোয়া কার্টেল প্রত্যক্ষ ভাবে প্রায় ১০০০ হত্যার পিছনে দায়ী। ২০১৬ সালে পুনঃরায় গ্রেফতারের পর মেক্সিকান কতৃপক্ষ এলো চাপোকে আমেরিকায় মেক্সিমাম সিকিউরিটি প্রিজনে ট্রান্সফার করা হয়।
গ্রিসেল্ডা ব্লাংকো: আমেরিকার মিয়ামি অঙ্গরাজ্যের এখন পর্যন্ত সবচেয়ে শক্তিশালী এবং ত্রাস সৃষ্টিকারী ড্রাগলর্ড ছিলেন গ্রেস্নডা ব্লাংকো। তার সম্পদের পরিমান প্রায় ২ বিলিয়ন ডলার। এই নারী মাদক সম্রাজ্ঞী ৭০ এবং ৮০র দশকে মিয়ামির ড্রাগ সম্রাজ্য নিয়ন্ত্রণ করতেন। ছোটবেলা থেকেই অপরাধের সঙ্গে জড়িত এই কলম্বিয়ান আমেরিকান আমেরিকার মেডেইন কার্টেলের প্রধান ছিলেন। ড্রাগের জগতে তার প্রভাবের জন্য তাকে কোকেইন গডমাদার বলা হত। তিনি ইতিহাসের সবচেয়ে শক্তিশালী নারী অপরাধীও বটে! এছাড়াও তিনি তার তিন স্বামীকে হত্যা করেছেন। ২০১২ সালে এক বন্ধুকযুদ্ধে ব্লাংকো নিহত হয়।
কার্লস লেডার: এই জার্মান কলম্বিয়ান ড্রাগ লর্ড বিখ্যাত মেডেইন কার্টেলের অন্যতম প্রতিষ্ঠা ছিলেন। কার্লসের সম্পদের পরিমান প্রায় ২ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার। ছোটবেলা থেকেই ধনী হতে চাওয়া কার্লস খুব অল্প বয়সেই ফ্লোরিডার অপরাধী জগতের সঙ্গে জড়িয়ে যায়। পাবলো এসকবারের মেডিইন কার্টেল শুরু করার প্রথম দিকে কার্লস খুব অল্প পরিমান কোকেন নিজের সঙ্গে করে আমেরিকায় পাচার করতেন। পরবর্তীতে মেডেইন কার্টেল-এর প্রসারের সাথে সাথে কার্লস এর প্রভাব ও বাড়তে থাকে। কার্লসের প্রাইভেট প্লেনের বহর খুব সহজেই মেডেইন কার্টেলের কোকেইন আমেরিকায় প্রচার করতো। এছাড়াও কার্লস মেডেইন কার্টেলের আমেরিকায় ড্রাগ ডিসট্রিবিউশান নিয়ন্ত্রণ করতেন। এমনকি কার্লোসের আটলান্টিক মহাসাগরে নিজস্ব দ্বীপও ছিল।
আমাডো কারিও ফুয়েন্টেস: মেক্সিকান এই মাদক সম্রাট জুয়ারেজ কার্টেলের সেকেন্ড ইন কমান্ড ছিলেন। ক্ষমতালোভে আমাডো তৎকালীন জুয়ারেজ কার্টেলের প্রধানকে হত্যা করে জুয়ারেজ কার্টেলের প্রধান হয়ে যান। তার দুটি ব্যক্তিগত উড়োজাহাজ ছিল। যার মাধ্যমে কলম্বিয়া থেকে মেক্সিকোতে কোকেইন পাচার করে তিনি রাতারাতি ধনী হয়ে যান। তার সম্পদের পরিমান ছিল ২৫ বিলিয়ন ডলার। এছাড়াও আমাডো সাধাসিধে ভাবে থাকতো। ফলে খুব সহজেই পুলিশের নজর এড়িয়ে যায়। এছাড়াও আমাডোর আমেরিকান এবং মেক্সিকান গোয়েন্দাদের সাথে কাজ করারো গুজব রয়েছে। তবুও আমাডোকে কলম্বিয়ায় হত্যা করা হয়।
পাবলো এস্কোবার: মাদক সম্রাটদের নিয়ে কোনো তালিকা হবে আর তাতে পাবলো এস্কবারের নাম থাকবে না, তা মোটামুটি অবাস্তবই! কলম্বিয়ান এই মাদক সম্রাট মেডেইন কার্টেলের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। তিনি নৃশংসতা থেকে শুরু করে অর্থ সব দিক থেকেই ইতিহাসের সব বড় বড় ক্রিমিনালদের থেকে এগিয়ে। পাবলোর সম্পদের পরিমান প্রায় ৩০ বিলিয়ন ডলার। ৮০ এর দশকে পাবলো পৃথিবীর ১০ জন ধনী ব্যক্তিদের মধ্যে সপ্তম অবস্থানে ছিলেন। ধারণা করা হয়, তৎকালীন পৃথিবীর শতকরা ৮০ ভাগ কোকেনই পাবলো নিয়ন্ত্রণ করতেন। এছাড়াও পাবলো তার দানশীলতার জন্য বিখ্যাত ছিল। মেডেইনে পাবলোকে সাধারণ জনগন রবিনহুড হিসেবেই দেখত। পাবলো নৃশংস হলেও তিনি তার পরিবারকে অনেক ভালবাসতেন। পলাতক অবস্থায় পাবলো তার মেয়েকে ঠাণ্ডার হাত থেকে বাঁচাতে ১ মিলিয়ন ডলার পুড়িয়ে দিয়েছিলেন। অন্যান্য বেশিরভাগ মাদকসম্রাটদের মতো পাবলোর ভাগ্যেও মৃত্যু ছিল।