যশোরের সাগরদাঁড়িতে সাত দিনব্যাপী মাইকেল “মধু”মেলা শুরু

আজ ২২ শে জানুয়ারি মঙ্গলবার দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের বিনোদনের অন্যতম স্থান যশোর জেলায় অবস্থিত সাগরদাঁড়িতে জমে উঠবে মধুমেলা।আগামী ২৫ জানুয়ারি কবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের ১৯৫ তম জন্মজয়ন্তী এ উপলক্ষে প্রতিবারের মতো এবারও সপ্তাহব্যাপী ২২শে জানুয়ারি থেকে চলবে ২৮শে জানুয়ারি পর্যন্ত।১৯৭৩ সাল থেকে প্রতিবছর কবির জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে সপ্তাহব্যাপী এ মেলা বসছে।কবির জন্ম উৎসবকে মিলন মেলায় পরিণত করতে অধির আগ্রহে অপেক্ষা করছে হাজার হাজার মধুপ্রেমী।

মাইকেল মধুসূদন দত্ত ১৮২৪ সালের ২৫ জানুয়ারি যশোরের কপোতাক্ষ নদের তীরে সাগরদাঁড়ির বিখ্যাত দত্ত পরিবারে জন্ম নেন।তিনি ‘মেঘনাদ বধ’ মহাকাব্যের রচয়িতা ও চতুর্দশপদী অমিত্রাক্ষর ছন্দের প্রবর্তক মধুমেলা।যশোরের কেশবপুর উপজেলা সদর থেকে ১৩ কিলোমিটার দক্ষিণে সাগরদাঁড়ি গ্রামে জমিদার রাজনারায়ণ দত্ত ও মাতা জাহ্নবী দেবীর সংসারে ১৮২৪ সালে জন্মগ্রহণ করেন অমিত্রাক্ষর ছন্দের জনক মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত।নিজ গ্রামে মধু কবির শৈশব কাটে।উচ্চ শিক্ষা লাভের জন্য তিনি ১৮৩০ সালে সাগরদাঁড়ি ছেড়ে কলকাতায় খিদিরপুরে চলে যান মাইকেল মধুসূদন দত্ত।

লেখাপড়া চলাকালীন ফ্রান্সের সুদূর ভার্সাই নগরীতে বসে তিনি রচনা করেন চতুর্দশপদী কবিতা সনেট। লেখাপড়ার টানে তিনি বিদেশে থাকলেও তার নিজ গ্রাম জন্মভূমি সাগরদাঁড়ি আর পাশ দিয়ে বহমান কপোতাক্ষ নদকে তার সাহিত্য কর্ম আর শোত্ববোধ চির জাগরুক রয়েছে মধু পরিমণ্ডলে।১৮৭৩ সালের ২৯ জুন কলকাতার এক হাসপাতালে মাত্র ৪৯ বছর বয়সে মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।প্রতিবছর ২৫ জানুয়ারি সংস্কৃত মন্ত্রণালয় সপ্তাহব্যাপী মধু মেলার আয়োজন করে থাকে।এবার এস এস এস সি পরীক্ষার কারণে এ মেলা এগিয়ে নিয়ে ২২ জানুয়ারি থেকে শুরু হচ্ছে,চলবে ২৮ জানুয়ারি পর্যন্ত বলে জানান মেলা উদযাপন কমিটি।প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুতি অনুয়ারি ২০০১ সালে ১১ কোটি টাকা ব্যায়ে বাস্তবায়ন করা হয় মধুপল্লী নির্মাণ কাজ। সাগরদাঁড়ি মধুসূদন মিউজিয়াম, পিকনিক কর্নার,মধু মঞ্চ,সুদৃশ্য গেট নির্মিত হয়।এ ছাড়াও রয়েছে পর্যটন কেন্দ্র।প্রতিবছর শীতের শুরু থেকে বিভিন্ন পরিব্রাজক,শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষা ভ্রমণ ও পিকনিক পার্টিরও আগমন ঘটেথাকে সাগরদাঁড়িতে।দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের সর্ববৃহৎ মেলায় রূপ নেয় মধু মেলা।
৭দিন ব্যাপী মেলা চললেও এর আমেজ থাকে প্রায় মাস ব্যাপী।এলাকার মানুষ জামাইদের দাওয়াত করে নিয়ে আসেন। এছাড়াও বিভিন্ন অতিথির আগমন ঘটে মেলা উপলক্ষে।অতিথি সামলাতে তারা বিরক্ত হলেও উৎসব আনন্দে তাতে ভাটা পড়ে না।এ অঞ্চলের মানুষ অনেকটা ঈদের মতো এ উৎসব পালন করে।ঘরে ঘরে তৈরি হয় পিঠা-পায়েস।একে অন্যের ঘরে যায়।কুশল বিনিময় করে।সাগরদাড়ি!
সাগরদাঁড়ি স্মৃতিময়,কেবলই মাইকেলের স্মৃতি বিজড়িত বলে নয়,নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে চাইলেও আসতে হবে সাগরদাঁড়ি।যেখানে কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত বড় হয়েছেন, লিখেছেন কবিতা,দেখেছেন স্বপ্ন,গেয়েছেন গান আর অমৃত সুধা করেছেন পাণ যে স্থান কবির হাতে কলম তুলে দেয়,মানুষের মনকে করে তোলে স্বপ্নালু,সে স্থানটিতে একটিবার না বেড়িয়ে এলে যে অসম্পূর্ণই থেকে যাবে জীবনের খানিকটা অংশ।ঐতিহাসিক নিদর্শন আর সঙ্গে অপূর্ব প্রাকৃতিক দৃশ্য, এই নিয়েই বিখ্যাত সাগরদাঁড়ি, সাগরদাঁড়ি যশোরে অবস্থিত। যেখানে রয়েছে কবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের বাড়ি।এখানে যাওয়ার পথে গাড়ি থেকে দুপাশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যগুলো এক কথায় অবর্ণনীয়।আজ মঙ্গলবার বিকেলে স্থানীয় সরকার,পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্য প্রধান অতিথি হিসেবে মেলা উদ্বোধন করবেন। উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন সংসদ সদস্য ইসমাত আরা সাদেক,শেখ আফিল উদ্দিন,মেজর জেনারেল (অবঃ)ডাঃনাসির উদ্দিন,কাজী নাবিল আহমেদ,রণজিত কুমার রায়,সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃনাসির উদ্দিন আহমেদ, যশোর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সাইফুজ্জামান পিকুল,যশোরের জেলা প্রশাসক মোঃআব্দুল আওয়াল,পুলিশ সুপার মঈনুল হক, আওয়ামী লীগ যশোর জেলা শাখার সভাপতি শহিদুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক ও সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহীন চাকলাদার,কেশবপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এইচ এম আমির হোসেন, কেশবপুর পৌরসভার মেয়র রফিকুল ইসলাম,দৈনিক ইত্তেফাকের সিনিয়র রিপোর্টার শ্যামল সরকার।

আলোচনায় অংশ নেবেন যশোর ইন্সটিটিউটের প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক শেখ রবিউল আলম, যশোর সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি ডি এম শাহিদুজ্জামান,যশোর জেলা শিল্পকলা একাডেমীর সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাহমুদ হাসান বুলু,আওয়ামী লীগ কেশবপুর শাখার সভাপতি এস এম রুহুল আমীন,যশোরের পাবলিক প্রসিকিউটর(পিপি)অ্যাডভোকেট রফিকুল ইসলাম পিটু প্রমুখ।

স্বাগত বক্তব্য দেবেন কেশবপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মিজানুর রহমান।এবারের মেলায় কুটিরশিল্প,গ্রামীণ পসরার পাশাপাশি সার্কাসের আয়োজন থাকছে।এছাড়াও প্রতিদিন সাগরদাঁড়ীর মধুমঞ্চে আলোচনার পাশাপাশি নাটক, কবিতা আবৃতিসহ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজনও থাকছে।

কেশবুর থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃশাহিন জানান,মেলার মাঠ নিরাপত্তা চাদরে মোড়া হবে।মেলা উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব উপজেলা নির্বাহী অফিসার মিজানূর রহমান সাংবাদিকদের জানান,মেলায় মধু ভক্তদেরও নিরাপত্তা বিধানে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।সার্কাস,যাদু প্রদর্শনী, মৃত্যুকূপ,নাগরদোলা,বিসিকের কুঠির শিল্প স্টল,সার্কাস পুতুল নাচেসহ প্রতিদিন উন্মুক্ত মঞ্চে থাকছে মহাকবির সাহিত্য সৃষ্টির উপর বিষয় ভিত্তিক আলোচনা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান নাটক।এবারের মধু মেলা অশ্লিলতামুক্ত থাকবে। একটি স্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে।পাশাপাশি ডিবি ও র‌্যাব সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)