মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্র বোঝাই দু’টি ল নদীতে ডুবিয়ে দিয়েছিল পাকসেনারা
মুক্তিযুদ্ধের একটি স্মরণীয় রাতের ঘটনা দেশবাসীকে জানাতে শনিবার দুপুরে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছেন শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা ইউনিয়নের ১৯৭১ সালের যুদ্ধকালীন কমান্ডার মুক্তিযোদ্ধা জি,এম নূরুল হক।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের ৯নং সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার মেজর এম,এ জলিল ভারতের বসিরহাটে মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে সৈনিকদের নিয়ে ট্রেনিং করার মাঝামাঝি সময় সিদ্ধান্ত নেন ভারত সীমান্ত পার হয়ে প্রথমে তিনি বাংলাদেশের খুলনা জেলার পাক সেনাদের ক্যাম্পে আক্রমণ করবেন। সে মোতাবেক ১৯৭১ সালের ৬ই মে অস্ত্র বোঝাই ২টি লঞ্চ নিয়ে মেজর এম এ জলিল তার সাথীদের নিয়ে বাংলাদেশের সুন্দরবনের মধ্য দিয়ে খুলনাকে পাক সেনাদের হাত থেকে মুক্ত করার উদ্দেশ্যে রওনা দেন। এ সময় লঞ্চ দু’টিতে মেজর জলিলের সাথে সাব-সেক্টর কমান্ডার মেজর মঞ্জু, মেজর জিয়া উদ্দীন(জিয়া), গেরিলা বাহিনী প্রধান ক্যাপ্টেন মাহফুজ আলম বেগ, লেফট্যানেন্ট মইনুল ইসলাম, লেফট্যানেন্ট তোফাজ্জেল হক, ক্যাপ্টেন বাসার, সুবিদার সেলিম এবং তথ্য সরবরাহকারী জি.এম নূরুল হক নিজেসহ প্রায় ৫০ জনের মত মুক্তিযোদ্ধা। ল দু’টিতে প্রায় ২০ কোটি টাকা মূল্যের বিভিন্ন ধরনের আগ্নেয়াস্ত্র ছিল। কিন্তু লঞ্চ দু’টি শ্যামনগরের গাবুরা ইউনিয়নের খোলপেটুয়া নদীতে পৌছালে পাকসেনারা বিধ্বস্ত করে দেয়।
তিনি বলেন, মেজর জলিল অস্ত্র বোঝাই দু’টি লঞ্চ নিয়ে ভারত থেকে বাংলাদেশে আসছে এই খবর জানতে পেরে গাবুরার এক প্রভাবশালী ব্যক্তি খুলনার পাক সেনাদের ক্যাম্পে সংবাদ পৌছে দেয়। খবর পেয়ে পাক সেনারা দু’টি গানবোর্ড নিয়ে ১৯৭১ সালের ৬ই মে বেলা ১০ টারা দিকে গাবুরার দক্ষিণে খোলপেটুয়া নদীতে অবস্থান নেয়। পাকসেনারা সন্ধ্যায় গান বোর্ডের আলো নিভিয়ে মেজর এম.এ জলিলের অস্ত্র বোঝাই ল দু’টির জন্য অপেক্ষা করছিল। অস্ত্র বোঝাই লঞ্চে দু’টি রাত একটার দিকে গাবুরার চাঁদনীমুখা এলাকায় খোলপেটুয়া নদীতে পৌছালেই পাকসেনারা গানবোর্ড থেকে আক্রমণ শুরু করে। এ সময় মুক্তিযোদ্ধারা তাদের লঞ্চে দু’টি চাঁদনীমুখা গ্রামের ওয়াবদার গেটে লাগিয়ে দিয়ে তারা ডাঙ্গায় উঠে বেড়িবাঁধের আড়াল থেকে পাকসেনাদের উপর পাল্টা আঘাত হনে। পাকসেনা ও মুক্তি বাহিনীর সঙ্গে সারারাত সম্মুখ যুদ্ধ চলে। যুদ্ধ চলাকালিন পাক সেনাদের সেলিংয়ের গুলিতে অস্ত্র বোঝাই লঞ্চে দু’টিতে আগুন ধরে নদীর কিনারায় অর্ধ ডুবো অবস্থা থাকে। পরদিন ভোর হওয়ার আগেই মেজর. জলিল তার সাথী মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে শ্যামনগরের কৈখালীর কালিন্দী নদী পার হয়ে ভারতের বসিরহাটে নিজ ক্যাম্পে চলে যান।
মুক্তিযোদ্ধা নূরুল হক আরো বলেন, বীরত্বপূর্ণ এই যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের ৪/৫ জন্য সামান্য আহত হয়েছিলেন। পাকসেনারা সকাল ৮ থেকে ১০ টা পর্যন্ত গান বোর্ড হতে অনর্গল সেলিং চালাতে থাকে। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি উত্তর না পেয়ে তারা গানবোর্ড নিয়ে ঘটনাস্থলে আসে এবং নদীর ধারে অর্ধডোবা লঞ্চ হতে ৪/৫ হাজারেরও বেশি বিভিন্ন ধরনের আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করে নিয়ে খুলনায় চলে যায়। পরে যুদ্ধের ঘটনাস্থল হতে ৪/৫ শতাধিক হাতিয়ার উদ্ধার করে নিজ বাড়িতে এনে মাটিতে পুতে রেখে তিনি আত্মগোপন করেন এবং ১৯৭১ সালের ১৫ই জুন ভারতের বসিরহাটে ট্রেনিং ক্যাম্পে চলে যান। ৪/৫ দিন পর মেজর এম.এ জলিলও তিনি (নুরুল হক)সহ ১০/১৫ জন মুক্তিযোদ্ধা ¯প্রীডবোর্ডসহ ঘটনাস্থলে পৌছে পুতে রাখা অস্ত্রপাতি উদ্ধার করে ফের ভারতের ক্যাম্পে চলে যান। চাঁদনীমুখা গ্রামের জি.এম আতিয়ার রহমান, জি এম লুৎফর রহমান গাজী, গাগমারি গ্রামের মোঃ সামছুর রহমান জোর্দ্দার, নাপিতখালী গ্রামের মোঃ সাহাজুদ্দিন মোড়ল সেদিন মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিল। তাদের ভয়স্কর দাটটে এখনও কেউ মুখ খুলতে সাহস পায় না। তিনি নিজেও তাদের ভয়ে ভীতসন্ত্রস্ত। তারা আজও মুক্তিযোদ্ধাদের হক নষ্ট করে গায়ের জোরে প্রচন্ড দাপটে স্বীয় কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। তিনি এদের বিরুদ্ধে যাতে আইনগত ও আদালতের সহযোগিতা পেতে পারেন তার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেন।