কলাগাছের আঁশ থেকেও উৎপন্ন হচ্ছে সুতা
কলা রুয়ে না কেটো পাত, তাতেই কাপড় তাতেই ভাত- খনার সে বচন এখন সত্যে পরিণত হচ্ছে। এতদিন কলা চাষের পর কৃষক যে গাছগুলো কেটে ফেলে দিতেন, সে ফেলে দেয়া গাছই এখন তাদের জীবিকার মাধ্যম। শুধু তুলা আর পাট থেকেই নয়, এবার কলাগাছের আঁশ থেকেও উৎপন্ন হচ্ছে সুতা। আর এতে ভাগ্য খুলছে ঠাকুরগাঁওয়ের কৃষকদের।
কলা আর ছোট চারা বিক্রি করা ছাড়াও কলা উৎপন্ন হওয়ার পর গাছ কেটে ফেলে না দিয়ে কলাগাছ থেকে আঁশ তৈরি হচ্ছে। এখন আর ফেলনা নয় কলাগাছ। শিল্পের তালিকায় উঠেছে এ গাছ। ঠাকুরগাঁওয়ে কলাগাছের ডোঙ্গা ও ডাঁটা থেকে তৈরি হচ্ছে মূল্যবান আঁশ। এ আঁশ প্রক্রিয়াজাতের পর বিদেশে রফতানি করছে একটি প্রতিষ্ঠান।
এ বছরের শুরুতে ব্যক্তি উদ্যোগে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার সালন্দর তেলিপাড়া গ্রামে মাসহারুল হক সেতু ও হরিপুর উপজেলার গেদুরা ইউপির মন্নাটলী হাটপুকুর গ্রামের দুরুল হুদা কলাগাছের ডোঙ্গা ও ডাঁটা থেকে আঁশ উৎপাদন করছেন। এ আঁশ কিনছে ঢাকার ওয়েস্ট এগ্রো নামে একটি প্রক্রিয়াজাতকরণ প্রতিষ্ঠান।
প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান মো. খোরশেদ আলম ও মাহমুদুজ্জামান মৃদুল বলেন, কলাগাছের ডোঙ্গা ও ডাঁটা থেকে উৎপাদিত আঁশের তৈরি সুতার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এ সুতা দিয়ে তৈরি হচ্ছে দামি শাড়ি-কাপড়সহ বিভিন্ন বস্ত্র। এই সুতা ভারত হয়ে চীন, জাপান ও জার্মানিতে যাচ্ছে। দেশে তৈরি একটি মেশিনে আট ঘণ্টায় উৎপাদন করা যায় ৪০ কেজি আঁশ। প্রক্রিয়াজাতকরণ প্রতিষ্ঠান ওয়েস্ট এগ্রোর তত্ত্বাবধানে এ মেশিন তৈরি হচ্ছে দিনাজপুরে। প্রতিটি মেশিনের দাম পড়ে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা।
আঁশ উৎপাদনকারী দুরুল হুদা বলেন, সুতা ছাড়াও কলাগাছের আঁশ দিয়ে নানা বিলাসপণ্য, দোলনা, দড়ি ও তোষক তৈরি করা যায়। এ ছাড়া জৈব সার, পোল্ট্রি ও মাছের খাবার, কীটনাশক ও সাবান-সোডা, এসিড ওয়াটার তৈরির উপকরণ হিসেবেও কলাগাছের বিভিন্ন অংশ কাজে লাগানো যেতে পারে। আঁশ উৎপাদন করে এখন তার মাসিক আয় ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকায় দাঁড়িয়েছে বলে জানান এ শিক্ষক। তার সাফল্যে অনেকে এখন এ কাজে এগিয়ে আসছেন।
হরিপুর উপজেলার কৃষক আবদুর রশিদ ও কবিরুল বলেন, কলাগাছ থেকে আঁশ উৎপন্ন হয়, এর আগে কখনো শুনিনি। প্রথম জানার পর খুব অবাক হয়েছিলাম। কলাবাগান থেকে কলার কাঁদি কেটে নিয়ে এতদিন গাছ দূরে ফেলে দিতাম। কিন্তু এখন ‘অপ্রয়োজনীয়’ সে গাছগুলো বিক্রি করে বাড়তি আয়ের পথ সৃষ্টি হয়েছে। হরিপুর, রানীশংকৈল ও পীরগঞ্জ উপজেলায় অনেক কলার বাগান রয়েছে। প্রতি বছর হাজার হাজার কলাগাছ থেকে আঁশ তৈরি করে বিক্রি করা সম্ভব। কিন্তু আঁশ তৈরির মেশিনের দাম বেশি। লাখ টাকারও বেশি দামে এই মেশিন কেনা সবার পক্ষে সম্ভব নয়। তা ছাড়া মেশিন কিনে কলাগাছ থেকে আঁশ উৎপাদনের পর বিক্রির নিশ্চয়তা থাকতে হবে শতভাগ। কারণ এগুলো কিনে নেয়ার আরো প্রতিষ্ঠান তৈরি হতে হবে। তবে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে সম্ভাবনাময় এ শিল্পের প্রসার ঘটানো সম্ভব।
ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক কেএম মাউদুদুল ইসলাম বলেন, নিঃসন্দেহে এটি সম্ভাবনাময় শিল্প। সরকারের ইচ্ছে আছে এ ধরনের শিল্পকে সহযোগিতা করার।