সাতক্ষীরায় শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতিস্তম্ভটি রাজাকারে নাম নিয়ে দাঁড়িয়ে এক যুগ
স্বাধীন দেশে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে নির্মিত সাতক্ষীরা একমাত্র স্মৃতিস্তম্ভটি এখনো অবহেলিত। রাজাকার আর অমুক্তিযোদ্ধাদের নাম নিয়ে স্তম্ভটি দাঁড়িয়ে আছে জেলা কালেক্টরেট চত্বরে। এমনকি ফলকে ঠায় হয়নি অনেক মুক্তিযোদ্ধাদের নাম।
এছাড়া স্বাধীনতার অর্ধশত বছর পার হলেও জেলা শহরে গড়ে ওঠেনি আর কোনো শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতিস্তম্ভ। বর্তমান প্রজন্ম জানে না কোথায় ফুল দিয়ে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণ করতে হয়।
২০০৫ সালের ২৬ এপ্রিল তৎকালীন জামায়াত ও বিএনপি সরকারের শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী আমান উল্লাহ আমান স্মৃতিস্তম্ভের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। গণপূর্ত বিভাগ ১২ লাখ টাকা ব্যয়ে ফলকটি নির্মাণ করে। ২০০৫ সালে ফলকটির নির্মাণ কাজ শেষ হয়।
ফলকে ৩১ জন শহীদ মুক্তিযুদ্ধার নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে ওই স্মৃতিফলকে একজন রাজাকার ও পাঁচজন অমুক্তিযোদ্ধার নাম স্থান পাওয়ায় সে সময় জেলার সব মুক্তিযোদ্ধারা তীব্র নিন্দা জানিয়ে ফুঁসে ওঠেন। এক পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধাদের বাধার মুখে ফলকটির উদ্বোধন বন্ধ হয়ে যায়।
এরপর ২০১২ সালের বিজয় মাসে মুক্তিযোদ্ধা ও সাধরণ মানুষ প্রতিবাদ সভায় নামফলকে লেখা রাজাকার ও অমুক্তিযোদ্ধাদের নাম কালি দিয়ে মুছে দেয়। একই সঙ্গে কালো কাপড় দিয়ে স্মৃতিস্তম্ভটি ঢেকে দেন তারা।
রাজাকারদের নাম বাদ না দেয়া পর্যন্ত ওই স্মৃতিফলকে মুক্তিযোদ্ধারা শহীদ যোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি জানাতে যাবেন না বলে সাফ জানিয়ে দিলেও আজ পর্যন্ত রাজাকারদের নাম বাদ দেয়া হয়নি।
এ বিষয়ে জেলা মুক্তিযোদ্ধা সুধাংশু সরকার জানান, শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে নির্মিত ওই স্মৃতিফলকে কলারোয়ার বাগডাঙ্গা গ্রামের গোলাম রহমানের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তিনি একজন চিহ্নিত রাজাকার।
এ ছাড়া একই উপজেলার এমএম এন্তাজ আলী, অজিয়ার রহমান এবং তালা উপজেলার সৈয়দ আবুল হোসেন ও বেদার বখত নদর উপজেলা ক্যাপ্টেন কাজীর নাম স্থান পেয়েছে। তারা সবাই অমুক্তিযোদ্ধা।
তাছাড়া সাতক্ষীরা শহরের পলাশপোল গ্রামের শহীদ এবিএম নাজমুল আরেফিন কাজল, কাটিয়া গ্রামের শহীদ আব্দুস সাত্তার ও সদর উপজেলার কায়োনডাঙ্গা গ্রামের শহীদ মুনসুর আলী এবং দেবহাটার কুলিয়া গ্রামের শহীদ গুলজারসহ বেশ কয়েকজন শহীদ মুক্তিযোদ্ধার নাম স্মৃতিফলকে অর্ন্তভুক্ত হয়নি।
মুক্তিযোদ্ধা অরুণ কুমার ব্যানার্জী জানান, সাবেক ডিসি আবুল কাশেম মহিউদ্দি তিন বলেন এটি মন্ত্রণালয়ের ব্যাপার। মন্ত্রণালয়ের অনুমতি সাপেক্ষে এটি পুনর্নির্মাণের ব্যাবস্থা করা হবে। পরে ডিসি বরাবর একটি স্মারকলিপি দেয়া হয় । কিন্তু আজ পর্যন্ত এটি পুনর্নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়নি।
সাতক্ষীরা জেলার নাগরিক মঞ্চের সভাপতি ফাহিমুল হক কিসলু জানান, দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের দায়িত্ব অবহেলা ও প্রশাসনের সুদৃষ্টি না থাকায় একাত্তরের রাজাকাররা বিভিন্ন ভাবে আমাদের ইতিহাস বিকিৃতি করছে। তবে এতদিনেও কালেক্টরেট ভবনের ফলকটি সংস্কার না হওয়ার ঘটনা লজ্জাজনক।
এ বিষয়ে সাতক্ষীরা ডিসি এসএম মোস্তফা কামাল জানান, অল্প কিছুদিন আগে যোগদান করেছি। এ সময়টা নির্বাচনের জন্য বেশি কাজ করতে হচ্ছে। নির্বাচন শেষ হলে একটি রেজুলেশনের মাধ্যমে মন্ত্রণালয় থেকে অনুমতি নিতে হবে।