স্বামীকে ভালো না লাগলে কী করবেন?
প্রায় দুই যুগ পেরিয়েছে হামিদ আর মৌ (ছদ্মনাম) এর বিবাহিত জীবনের। দুজনেই চাকরিজীবী, কর্মস্থলে যথেষ্ট প্রতিষ্ঠিত। এরই মধ্যে সংসারে এসেছে দুই সন্তান। খুব গতানুগতিক জীবন চলছে তাদের। ব্যস্ততা, সময়ের অভাব, সাংসারিক অভিযোগ-উৎকণ্ঠা, কখনো বেড়ানো, একত্রে সময় কাটানো- সবমিলিয়েই চলছিল জীবন। এতটা দিন পার করে হঠাৎ করে মৌ এর মনে হতে লাগলো এই সংসার জীবন তেমন সুখকর মনে হচ্ছে না। আসল কথা স্বামীর প্রতি বিভিন্ন কারণে রাগ, অভিমান আর অভিযোগের ভিড়ে একঘেয়েমি চলে এসেছে, তাকে আর ভালোই লাগছে না।
এমন চিত্র কিন্তু হতেই পারে। অনেক সংসারেই এমনটা হয়। স্বামী আর স্ত্রী গুমরে গুমরে নিজেদের ভেতরে বিষয়গুলো আটকে রাখে। সমাজ বিবেচনায় সংসারটাকে বেঁধে রাখতে হয়, কিন্তু ভেতরে কোনো শান্তি থাকে না। সংসারে স্ত্রীকে মনে রাখতে হবে যে, আপনার আর আপনার স্বামীর সমান প্রয়োজন রয়েছে সংসারে। তাই ‘ভালো লাগে না’ বিষয়টিকে উতরে যেতে হবে। আগে জেনে নিতে হবে কেন এই ভালো না লাগার সূত্রপাত-
অভিযোগের ঝুলি যখন ভরে যায়
সম্পর্কই পুরোপুরি মনের মতো হবে না। অনেক ব্যাপার মেনে নিতে হয়, ত্যাগ স্বীকার করতে হয়। সংসারজীবনে পা দেওয়ার আগেই মেনে নিতে হবে যে স্বামীর দোষ বা ভুল থাকবে, কারণ সে তো একটা মানুষ। সংসারে সমস্যা থাকবেই। সংসারে এতদিন কি কি হয়েছে বা এটা-ওটা নেই বলে সারাদিন অভিযোগ করতে থাকলে সম্পর্কের দূরত্ব তৈরি হবে। স্বামীকে অপরাধী মনে হবে।
ব্যক্তিত্ব বজায় রাখুন
আপনার স্বামীর কাছে নিজের সব প্রাইভেসি বা ব্যক্তিত্বকে সপে দেবেন না। মনে রাখবেন আপনার নিজের তো একটা জগৎ আছে। আপনি স্বামীর প্রতি বেশি নির্ভরযোগ্য হলে সমস্যা বাড়বে। আপনার নিজের কোনো সত্ত্বা থাকে না। আবার মনে হবে আপনার স্বামীও বোধহয় এরকম নির্ভরযোগ্য হবে আপনার প্রতি। এটা থেকে টানাপোড়েন শুরু হবে সম্পর্কে।
আর স্বামীকে বার বার জবাবদিহি করতে গেলেও বিপদ। তাকে কিছুটা স্বাধীনতা না দিলে তো একঘেয়েমি ভাব আসা স্বাভাবিক।
অন্যের সঙ্গে তুলনার অভ্যাস
এটা সংসারে একটি বড় সমস্যা। অনেক স্ত্রীরাই অন্যের সংসারজীবনের সঙ্গে নিজের সংসারের তুলনা করে। আশেপাশের বন্ধু, আত্মীয়, সহকর্মী, প্রতিবেশীদের সাফল্যের সঙ্গে নিজেদের অবস্থান তুলনা করা উচিত নয়। এতে করে নিজের স্বামী, সংসারের প্রতি কোনো টান থাকে না। সবসময় মনের মধ্যে অশান্তি বিরাজ করে।
কোনো বিষয়ে জোর খাটানো
যেকোনো কারণে আপনার সঙ্গী কিছু এড়িয়ে যেতে চাইতে পারে। এটা কোনো সমস্যার জন্যে হতে পারে। তাই তাকে সুস্থ মাথায় জিজ্ঞেস করুন। কিন্তু কখনো কোনো জোর খাটাতে গেলে হিতে বিপরীত হয়। দেখা যায় আপনার স্বামী এতে বেশি ক্ষিপ্ত হয়ে যেতে পারে। ঝগড়াও শুরু হতে পারে।
সিদ্ধান্ত গ্রহণে সমস্যা
পরিবারে অনেক জরুরি সিদ্ধান্ত নিতে হয়। সেক্ষেত্রে একজনের সিদ্ধান্ত আরেকজনের ওপর চাপিয়ে দিলেই বিপদ। আবার সন্তানদের বিষয়ে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নিতে গেলে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সংকট তৈরি হয়। সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে স্বামীদের প্রতি বেশি নির্ভর করে স্ত্রীরা। ফলে এতে গড়বড় হলে বাধে বিপত্তি।
এই সমস্যাগুলো আস্তে আস্তে প্রকট হলে কেউ কাউকে সহ্য করার মানসিকতায় থাকে না। সমাধানের পরিস্থিতিটাও নষ্ট হয়ে যায়। একসঙ্গে থাকতেও ভালো লাগে না, আবার বিচ্ছেদের কথাও ভাবা যায় না সংসার, সন্তান আর নিজের ভবিষ্যতের কথা ভেবে। তবে সমাধানটা আপনার হাতেই আছে।
১. সবার আগে সময় দিন। একে অপরকে সময় দেবেন, তা নয়। স্বামীকে তার মতো করে থাকতে দিন। আপনার প্রয়োজনীয়তাও যাতে সে বুঝতে পারে। এই মানসিকভাবে একা থাকার সময়টাতে দুজনের আনন্দের স্মৃতিগুলো মনে করুন। তাকে ছাড় দিতে হবে- এর জন্য প্রস্তত হন।
২. আপনাদের দুজনেরই হয়তো অনেক ভুল আছে। সেই ভুলগুলো থেকে বের হন। সবার আগে নিজের ভুল স্বীকার করুন। এতে বিবাদের কোনো শঙ্কা থাকে না। রাগের সময় নিজেকে সামলে নিন। সেসময় এমন কিছু বলবেন না যাতে আপনার স্বামী পরেও আপনাকে ভুল বোঝে।
৩. আপনার স্বামী কোনো ভুল করে যদি অনুতপ্ত হয়, ভুল স্বীকার করে তাহলে সেটা মেনে নিতে শিখুন। মনে রাখুন ভুলের মধ্যেই মানুষের বাস। তাকে ভুলটা শুধরে নেওয়ার সময় দিন। বার বার দোষ ধরিয়ে দিতে গেলে সম্পর্কের আরও সর্বনাশ হয়।
৪. সবচেয়ে ভালো উপায় হলো নিজেরা যদি খোলামেলা আলোচনা করতে পারেন। একে অপরকে তো আপনারাই ভালো চিনবেন এবং জানবেন। তাই সমস্যা এবং সমাধান আপনারই হাতে। কিছু ভালো না লাগলে সেটা জানিয়ে দিন।
৫. আপনাদের সমস্যার ব্যাপারে কাউকে বলতে যাবেন না। এতে করে আপনার সঙ্গী বরং আরও বেশি অপমান হবে। সমস্যাগুলো তৃতীয় কোনো পক্ষকে না বলাই ভালো। তৃতীয় পক্ষ দ্বারা প্রভাবিত না হয়ে নিজেরাই আলোচনা করুন, ফল পাবেন।
৬. কোনো অবস্থাতেই স্বামীর প্রতি বিশ্বাস হারিয়ে ফেলবেন না। ঝগড়া, বিবাদ হলে সেই সমস্যাগুলোকে সমস্যা হিসেবে না দেখে সাধারণ ঘটনা হিসেবে দেখুন। আর বিবাদের সময়ে জিততেই হবে, এটা ভাববেন না। সমাধানে আসুন।