এক নজরে আওয়ামী লীগের ইশতেহার
‘সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ’ স্লোগানে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইশতেহার-২০১৮ ঘোষণা করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। ইশতেহারে ২১টি অঙ্গীকার করেছে দলটি।
সরকার পরিচালনায় দুই মেয়াদে সাফল্য ও অর্জন এবং আগামী ৫ বছরের লক্ষ্য ও পরিকল্পনা হবহু তুলে ধরা হলো।
গণতন্ত্র, নির্বাচন ও কার্যকর সংসদ: গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রার সাথে রাষ্ট্র ও সমাজ-জীবনের সবক্ষেত্রে উন্নয়ন ওতপ্রোতভাবে জড়িত। জাতির রাজনৈতিক অর্থনৈতিক তথা সার্বিক মুক্তির লক্ষ্য সামনে রেখে প্রতিষ্ঠার লগ্ন থেকে আওয়ামী লীগ গত প্রায় সাত দশক যাবৎ বাঙালির গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় নিরবচ্ছিন্নভাবে সংগ্রাম করে চলেছে। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বেই বারবার বাংলার জনগণ সামরিক ও স্বৈরশাসনের অবসান ঘটিয়েছে। আজ বঙ্গবন্ধু-কন্যার নেতৃত্বে দেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা পেয়েছে। এগিয়ে চলছে গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ। গণতন্ত্রের অবিচ্ছেদ্য অংশ নির্বাচন। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর অবৈধ ক্ষমতা দখলকারীরা তাদের ক্ষমতাকে কুক্ষিগত ও দীর্ঘস্থায়ী করতে নির্বাচনী-ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দিয়েছিল। বর্তমানে জাতীয় চার নীতির অন্যতম নীতি গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রার পথকে ষড়যন্ত্র-চক্রান্তের মাধ্যমে রোধ করার সাধ্য কারও নেই।
সাফল্য ও অর্জন: বিগত ১০ বছরে জাতীয় সংসদই ছিল সকল রাষ্ট্রীয় কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দু। প্রয়োজনীয় নির্বাচনী আইন ও বিধিমালা এবং যথাযথ বাজেট বরাদ্দ ও জনবল নিয়ে শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন পরিচালনায় সকল ব্যবস্থা সম্পন্ন করেছে। সংবিধান ও আইন অনুযায়ী এবং বিশ্বের অন্যান্য গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানে মহামান্য রাষ্ট্রপতি কর্তৃক সকল দল ও সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের মতামতের ভিত্তিতে সার্চ কমিটি দ্বারা স্বচ্ছ ও স্বাধীন প্রক্রিয়ায় নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে।
আওয়ামী লীগ সরকার দেশে ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারী-পুরুষ কিংবা জন্মস্থানভিত্তিক সকল বৈষম্য নিরসনে কাজ করছে।রাজনীতিতে ধর্মের অপব্যবহার বন্ধ করা, বিদ্বেষ দূরীকরণ, তৃতীয় লিঙ্গসহ সকল প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে উন্নয়নের প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্তিকরণ, নাগরিক অধিকার ও সুবিধা জনগণের কাছে সহজলভ্য করার লক্ষ্যে কর্মতৎপরতা চলছে।
তথ্য অধিকার আইন, স্বাধীন তথ্য কমিশন, ৪৪টি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল, অসংখ্য কমিউনিটি রেডিও, অনলাইন নিউজ পোর্টালসহ প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক গণমাধ্যম, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, দেশব্যাপী ইন্টারনেট সুবিধা আজ অবাধ তথ্যপ্রবাহ সৃষ্টি করে মানুষের তথ্য অধিকার নিশ্চিত করেছে, যা অভূতপূর্ব।
জনগণের মৌলিক চাহিদা পূরণ করে তাদের মৌলিক অধিকার সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি, চাহিদা প্রকাশ ও প্রাপ্তি এবং এর সুরক্ষার উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে। সংবিধান অনুযায়ী মানুষের মত প্রকাশের স্বাধীনতা, স্বাধীন মানবাধিকার কমিশন, স্বাধীন দুর্নীতি দমন কমিশন, স্বাধীন গণমাধ্যম, স্বাধীন ও শক্তিশালী বিচার বিভাগ, জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল জনগণের মৌলিক অধিকার সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।
সরকারের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিতকরণে স্থায়ী কমিটিসমূহের সক্রিয় দায়িত্ব পালন এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও অন্যান্য মন্ত্রীবর্গের প্রশ্নোত্তর পর্বে নিয়মিত অংশগ্রহণ, জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে সংসদে প্রাণবন্ত আলোচনা, সরকার ও বিরোধী দলের সংসদে গঠনমূলক দায়িত্ব পালন, অশ্লীল ও অগ্রহণযোগ্য এবং অসংসদীয় আচরণ থেকে সংসদকে মুক্ত রাখা হয়েছে।
দশম জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী কমনওয়েলথ রাষ্ট্রসমূহের সকল জাতীয় ও স্থানীয় সংসদের স্পিকার ও সংসদ সদস্যদের সমন্বয়ে গঠিত কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি অ্যাসোসিয়েশন (সিপিএ)-এর চেয়ারপারসন নির্বাচিত হন এবং দশম জাতীয় সংসদের অন্যতম সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরী বিশ্বের সকল সংসদের স্পিকার ও সংসদ সদস্যদের সমন্বয়ে গঠিত ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়নের (আইপিইউ) প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। বাংলাদেশের দশম সংসদ ও শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের প্রতি গণতান্ত্রিক বিশ্বের অবিচল আস্থার এ এক অভূতপূর্ব নিদর্শন।
সব ধরনের ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত ও বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ঊর্ধ্বে তুলে ধরেন এবং সকল দলের অংশগ্রহণের ভিতর দিয়ে আগামী ৩০ ডিসেম্বর ২০১৮, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।
লক্ষ্য ও পরিকল্পনা: গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও চেতনাকে ঊর্ধ্বে তুলে ধরা হবে এবং সংবিধান হবে রাষ্ট্র পরিচালনার সর্বোচ্চ দলিল।
আইনের শাসন ও মানবাধিকার সুরক্ষা: আইনের শাসনের মূল বক্তব্যই হচ্ছে আইনের দৃষ্টিতে সকলেই সমান; কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়। এই নীতির আরেকটি অর্থ হচ্ছে কেবলমাত্র সংবিধান ও নির্বাচিত সংসদ কর্তৃক প্রণীত আইনসমূহের ভিত্তিতেই রাষ্ট্র পরিচালিত হবে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর থেকে একটা দীর্ঘ সময় হত্যা, ক্যু ও ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে সংবিধান লঙ্ঘন করে দেশ পরিচালিত হওয়ায় আইনের শাসন ভূ-লুণ্ঠিত হয়েছিল। জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ দেশে আইনের শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠার দীর্ঘ সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছে। এযাবৎ তিন মেয়াদে সরকারে এসে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রের সকল পর্যায়ে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করেছে।
সাফল্য ও অর্জন: দেশের সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের ভিত্তিতে ২০১১ সালে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীতে সাংবিধানিক সুরক্ষাকরণের বিশেষ বিধান অন্তর্ভুক্ত করা হয়। সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৭(ক) ও ৭(খ), অনুচ্ছেদ ১৫০ ও চতুর্থ তফসিলের বিধান অনুযায়ী বর্তমানে সংবিধানের বাইরে বা সংবিধান পরিপন্থী কোনো অবৈধ পদক্ষেপ গ্রহণ করে পরবর্তীতে সেটিকে বৈধতা দেওয়ার কোনও আইনি সুযোগ নেই।
বিচার বিভাগের অবকাঠামোগত উন্নয়ন, বিচারক নিয়োগের পদ্ধতির স্বচ্ছতা নিশ্চিতকরণ, বিচারকদের জন্য যৌক্তিক বেতন কাঠামো ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নির্ধারণ, তৃণমূল মানুষের বিচার প্রাপ্তির নিশ্চয়তা বিধানে গ্রাম আদালত প্রতিষ্ঠা, বিরোধ নিরসনে বিকল্প পদ্ধতির (এডিআর) ব্যবহার, আইনি সহায়তার জন্য জেলায় জেলায় লিগ্যাল এইড প্রতিষ্ঠা, বিচারকদের উন্নততর প্রশিক্ষণ প্রদানের ব্যবস্থা করার মধ্য দিয়ে বিচার বিভাগের দক্ষতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং সাধারণ মানুষের জন্য ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার কাজ এগিয়ে চলছে।
অবৈধ ক্ষমতা দখলদারেরা আইনের শাসনের পথ রুদ্ধ করে দিতে হত্যাকারীদের দায়মুক্তি দিয়েছে, এমনকি পুরস্কৃতও করেছে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ দায়মুক্তির এ অপসংস্কৃতি রোধ করেছে।
বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের বিচার, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার বিচার, বিডিআর হত্যাকাণ্ডের বিচার এবং দণ্ডিত যারা আটক ছিলেন তাদের বিচারের রায় কার্যকর করা হয়েছে। পলাতক আসামিদের স্বদেশে ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
লক্ষ্য ও পরিকল্পনা: প্রত্যেক নাগরিকের আইনের আশ্রয় ও সাহায্য-সহায়তা লাভের সুযোগ-সুবিধা অবারিত করা হবে। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা সংরক্ষণ ও মর্যাদা সমুন্নত রাখা হবে।
সার্বজনীন মানবাধিকার সুনিশ্চিত করার পাশাপাশি মানবাধিকার লঙ্ঘনের যে কোনো প্রচেষ্টা প্রতিহত করার ব্যবস্থা সুনিশ্চিত করা হবে। মানবাধিকার কমিশনের স্বাধীনতা এবং কার্যকারিতা সুনিশ্চিত করার ব্যবস্থা অব্যাহত থাকবে।
দক্ষ, সেবামুখী ও জবাবদিহিতামূলক প্রশাসন: মানসম্মত সেবা প্রদানের মাধ্যমে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। রূপকল্প-২০২১ এবং ২০৪১-এর উন্নত বাংলাদেশের লক্ষ্যসমূহ অর্জনে একটি দক্ষ ও জবাবদিহিতামূলক সেবামুখী প্রশাসন গড়ে তোলার লক্ষ্যে পরিকল্পনা ও পদক্ষেপ গ্রহণের বিকল্প নেই। সরকারের প্রচেষ্টা, তথ্যপ্রযুক্তির উৎকর্ষতা এবং আধুনিক প্রশিক্ষণের ফলে সরকারি দপ্তরে কাজের দক্ষতা ও পরিধি বৃদ্ধি পেয়েছে।
সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে বর্তমানে বিজ্ঞানভিত্তিক পদ্ধতি প্রয়োগের মাধ্যমে অহেতুক কালক্ষেপণ এবং কাজের জটিলতা হ্রাসে বিভিন্নমুখী উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য এই ধারাকে অগ্রসর করে নিতে হবে।
সাফল্য ও অর্জন: ইতোমধ্যে প্রশাসনের সর্বস্তরে ই-গভর্নেন্স চালুর উদ্যোগ বাস্তবায়িত করা হয়েছে। সরকারি সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানসমূহের সেবা সম্পর্কিত প্রয়োজনীয় তথ্য প্রদানের বাধ্যবাধকতা সৃষ্টির লক্ষ্যে ‘তথ্য অধিকার আইন-২০০৯’ কার্যকর করা হয়েছে।
প্রজাতন্ত্রের কর্মবৃত্তে নিয়োগ, পদায়ন ও পদোন্নতির মাপকাঠি শুধু জ্যেষ্ঠতা নয়; যোগ্যতা, দক্ষতা, সততা, নিষ্ঠা, ন্যায়পরায়ণতা, শৃঙ্খলাবোধ এবং জনগণ ও সংবিধানের প্রতি শর্তহীন আনুগত্য বিবেচনায় রাখা হচ্ছে। এজন্য জনপ্রশাসন সংস্কারসহ প্রয়োজনীয় আইন ও বিধিমালা প্রণয়ন এবং কার্যকর করা হচ্ছে।
সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের উন্নত কাজের পরিবেশ, জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন ও সৎভাবে সম্মানজনক জীবন ধারণের জন্য মূল্যস্ফীতির নিরিখে বেতন-ভাতা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি করা হয়েছে। গত ১০ বছরের মধ্যে ২০০৯ ও ২০১৫ সালে দুবার প্রায় সাড়ে তিন গুণ (৩৪৪ শতাংশ পর্যন্ত) বেতন বৃদ্ধি করা হয়েছে।
সরকারি কর্মচারীরা ব্যাংক থেকে ৭৫ লাখ টাকা পর্যন্ত গৃহ নির্মাণ ঋণ নিতে পারবেন; পাঁচ ধাপে এই পরিমাণ বৃদ্ধি করা হয়েছে (৩০ জুলাই ২০১৮ প্রজ্ঞাপন)।
উপসচিব পদমর্যাদা পর্যন্ত সামরিক ও অসামরিক সকল কর্মচারী গাড়ি কেনার জন্য ৩০ লাখ টাকা সুদবিহীন ঋণ পাবেন এবং পরিচালনা বাবদ পাবেন মাসিক ৫০ হাজার টাকা।
শতভাগ পেনশন সমর্পণকারী প্রজাতন্ত্রের অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারীদের মাসিক পেনশন পুনঃস্থাপন করা হয়েছে। যারা এককালীন পেনশনের অর্থ উত্তোলন করেছেন, তাদের ১৫ বছর অতিবাহিত হওয়ার পর পেনশন সুবিধা পুনঃস্থাপনের আদেশ জারি করা হয়েছে। অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী এবং তাদের পরিবার এই সুবিধার আওতায় আসবে।
লক্ষ্য ও পরিকল্পনা: একটি আধুনিক, প্রযুক্তিনির্ভর, দক্ষ দুর্নীতিমুক্ত দেশপ্রেমিক গণমুখী প্রশাসনিক ব্যবস্থা গড়ে তোলার কাজ অব্যাহত থাকবে।
নিশ্চিত করা হবে প্রশাসনের স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, ন্যায়পরায়ণতা এবং সেবাপরায়ণতা। প্রশাসনের দায়িত্ব হবে নির্ধারিত নীতিমালা ও নির্বাহী নির্দেশাবলি বাস্তবায়ন।
সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রতা, দুর্নীতি, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা এবং সর্বপ্রকার হয়রানির অবসান ঘটানোর কাজ অব্যাহত থাকবে। বিশেষভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণের নানা স্তর কঠোরভাবে সংকুচিত করা হবে। নিয়মানুবর্তী এবং জনগণের সেবক হিসেবে প্রশাসনকে গড়ে তোলার কাজ অগ্রসর করে নেওয়া হবে।
জনবান্ধব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গড়ে তোলা: আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিয়ে পূর্বে জনমনে এক ধরনের ভীতি বিরাজ করত। সেটা দূর করে একটি জনবান্ধব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ করছে আওয়ামী লীগ সরকার। একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও জনগণের জীবন-জীবিকা সুরক্ষার পূর্বশর্ত হলো স্থিতিশীল আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি। এরই ধারাবাহিকতায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীতে ব্যাপক উন্নয়নমূলক কার্যক্রম সম্পাদিত হয়েছে।
সাফল্য ও অর্জন: ২০০৯ সালের জনসংখ্যার সাথে পুলিশের অনুপাত ১:১৩৫৫ হতে বর্তমানে ১:৮০১-এ দাঁড়িয়েছে। পুলিশের সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই), ট্যুরিস্ট পুলিশ, নৌ পুলিশ, স্পেশাল সিকিউরিটি অ্যান্ড প্রটেকশন ব্যাটালিয়ন, রংপুর রেঞ্জ, রংপুর আরআরএফ, ময়মনসিংহ রেঞ্জ, দুটি র্যাব ব্যাটালিয়ন, সাইবার পুলিশ এবং গাজীপুর ও রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ, এন্টি টেররিজম ইউনিট (এটিইউ) এবং কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি)-সহ বিভিন্ন বিশেষায়িত পুলিশ ইউনিট গঠন করা হয়েছে।
শিল্পক্ষেত্রে সুষ্ঠু পরিবেশ রক্ষার্থে ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ গঠন করা হয়। এতে শিল্পপ্রতিষ্ঠান বিশেষ করে গার্মেন্ট সেক্টরে শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। পুলিশ ইন্সপেক্টরদের জন্য বিশেষ ভাতা প্রবর্তন করা হয়েছে। তারা বছরে একবার এক মাসের মূল বেতনের সমপরিমাণ ভাতা পাচ্ছেন। কারারক্ষী, কোস্টগার্ড এবং আনসার-এর দশম গ্রেড ও নিম্নপদের কর্মচারীদের ঝুঁকি ভাতা প্রদান করা হচ্ছে।
বিগত ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর হতে দেশে উগ্র এবং জঙ্গি তৎপরতার বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করা হয়েছে। সরকারের দৃঢ় অবস্থানের ফলে জঙ্গি অপতৎপরতা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়েছে।
সুন্দরবনের দস্যুবাহিনীসমূহের আত্মসমর্পণ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় ও উপকূলীয় অঞ্চলের নিরাপত্তা ও শান্তিশৃঙ্খলার উন্নয়ন সরকারের এক যুগান্তকারী মাইলফলক। সুন্দরবনকে জলদস্যুমুক্ত করা হয়েছে। মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করা হয়েছে। বিপুল পরিমাণ মাদক উদ্ধার করা হয়েছে এবং বহু সংখ্যক মাদক ব্যবসায়ীদের আইনের আওতায় আনা হয়েছে। এ অভিযান অব্যাহত থাকবে। পুলিশকে জনবান্ধব করার লক্ষ্যে যে কোনো প্রয়োজনে পুলিশি সহায়তার জন্য ‘৯৯৯’ সেবা চালু করা হয়েছে। পুলিশ সদস্যদের কল্যাণের জন্য ‘পুলিশ কল্যাণ ট্রাস্ট’ ও ‘কমিউনিটি ব্যাংক’ গঠন করা হয়েছে। আনসার ও ভিডিপি সদস্যদের মাসিক ভাতা প্রবর্তন করা হয়েছে।
লক্ষ্য ও পরিকল্পনা: আগামী পাঁচ বছরে প্রয়োজনীয় সংখ্যক জনবল পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীতে নিয়োগ করা হবে। সাংগঠনিক কাঠামো সংস্কারের কাজ আগামীতে অব্যাহত থাকবে।
পুলিশসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আধুনিক ও যুগোপযোগী করার কাজ চলমান থাকবে। সেবা প্রদানের জন্য দ্রুত সাড়াদানের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় যানবাহন- সরঞ্জামাদি সরবরাহ, সন্ত্রাস ও সাইবার অপরাধ দমনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন, প্রয়োজনীয় ভূমি ও অবকাঠামোর সংস্থান, প্রশিক্ষণ সক্ষমতা বৃদ্ধিসহ সদস্যদের কল্যাণমূলক কার্যের পরিধি বিস্তারে কৌশলগত পরিকল্পনার আলোকে বহুমুখী কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে।
দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ: দুর্নীতি একটি বহুমাত্রিক ব্যাধি। পেশিশক্তির ব্যবহার ও অপরাধের শিকড় হচ্ছে দুর্নীতি। যার ফলে রাষ্ট্র ও সমাজ-জীবনে অবক্ষয় বা পচন শুরু হয় এবং অর্থনীতি, রাজনীতি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, প্রশাসন প্রভৃতি কোনো ক্ষেত্রেই ইস্পিত লক্ষ্য অর্জন সম্ভব হয় না। দুর্নীতি দমনে রাজনৈতিক অঙ্গীকার ও আইনের প্রয়োগ মুখ্য হলেও তা শুধু সরকারের দায় নয়, জনগণেরও দায় রয়েছে। আমরা মনে করি, দুর্নীতি দমনে প্রয়োজন সরকার ও জনগণের সমন্বিত পদক্ষেপ।
সাফল্য ও অর্জন: মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছেন। ফলে জনগণ এর সুফল ভোগ করছে।
দুর্নীতি প্রতিরোধে দুর্নীতি দমন কমিশনকে স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে কার্যপরিচালনা করার জন্য সার্বিক সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে। দুর্নীতি সংক্রান্ত অভিযোগ জনগণ যাতে সহজে দাখিল করতে পারে, সেজন্য দেশের সকল জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ‘অভিযোগ গ্রহণ বাক্স’ স্থাপন করা হয়েছে।দুর্নীতি দমন কমিশন চাহিদা নিরূপণ করে সরকারের নিকট বাজেট বরাদ্দ চেয়ে থাকে এবং কমিশনের চাহিদা মোতাবেক সরকার বাজেট বরাদ্দের মাধ্যমে অর্থায়ন করে আসছে।
লক্ষ্য ও পরিকল্পনা: দুর্নীতি দমন কমিশনকে কর্ম পরিবেশ ও দক্ষতার দিক থেকে যুগোপযোগী ও আধুনিকায়ন করা হবে। সেক্ষেত্রে দুর্নীতি দমনের ক্ষেত্রে আধুনিক তথ্য ও প্রযুক্তির সহজলভ্যতায় এবং প্রায়োগিক ব্যবহারে সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।
বিভিন্ন মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিগুলো সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রমের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে পর্যালোচনা, পর্যবেক্ষণ ও তদারকি ভবিষ্যতে আরও জোরদার করা হবে।
দুর্নীতি প্রতিরোধে আইনি ব্যবস্থার পাশাপাশি রাজনৈতিক, সামাজিক এবং প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগ জোরদার করা হবে। ঘুষ, অনোপার্জিত আয়, কালো টাকা, চাঁদাবাজি, ঋণখেলাপি, টেন্ডারবাজি ও পেশিশক্তি প্রতিরোধ এবং দুর্নীতি-দুর্বৃত্তায়ন নির্মূলে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, সাম্প্রদায়িকতা ও মাদক নির্মূল: সাম্প্রদায়িকতা, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও মাদক মানবতা ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা এবং শান্তি, গণতন্ত্র, উন্নয়ন ও প্রগতির পথে অন্তরায়। স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি পূর্বাপর পরাজয়ের প্রতিশোধ ও ক্ষমতা দখল করতে সন্ত্রাস-সহিংসতা, সাম্প্রদায়িকতা ও জঙ্গিবাদকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। বিএনপি-জামাত জোট আমলে ‘সন্ত্রাসী রাষ্ট্র’ হিসেবে আমরা নিন্দিত হয়েছিলাম। কিন্তু দেশ এখন জঙ্গিবাদ দমনে বিশ্বসমাজে প্রশংসিত।
সাফল্য ও অর্জন: মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ় নেতৃত্বে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবিরোধী কার্যক্রম বিশ্বসম্প্রদায়ের কাছে বিশেষভাবে জাতিসংঘের ৭১তম অধিবেশনে প্রশংসিত হয়েছে। উগ্র-সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর তৎপরতা এবং জঙ্গিবাদের হাত থেকে দেশ ও জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকাজ সম্পন্ন ও তা বানচালের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সকল অপচেষ্টা প্রতিহত করেছে আওয়ামী লীগ সরকার।
অবৈধ অস্ত্র আমদানি, অস্ত্র ও মাদক চোরাচালান, বেচাকেনা ও ব্যবহার কঠোর হস্তে দমন করা হচ্ছে।দেশব্যাপী জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস ও মাদক রোধকল্পে সাম্প্রদায়িকতা ও মাদকবিরোধী প্রতিবাদ, তৎপরতা ও সচেতনতা বৃদ্ধির পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।
লক্ষ্য ও পরিকল্পনা: আগামীতে জঙ্গিবাদ, সাম্প্রদায়িকতা, সন্ত্রাস ও মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতির প্রতি সরকারের দৃঢ় অবস্থান থাকবে। সন্ত্রাসী-গডফাদারদের এবং তাদের আশ্রয়-প্রশ্রয়দাতাদের চিহ্নিত করে গ্রেফতার এবং বিচারের মাধ্যমে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে। সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, দখল, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই বন্ধে সর্বোচ্চ গুরুত্বারোপ করা হবে।
মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি ও চলমান অভিযান অব্যাহত থাকবে। মাদকাসক্তদের পুনর্বাসনের জন্য সরকারি অর্থায়নে সংশোধনাগারের সংখ্যা বৃদ্ধি করা হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, জননিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনের জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আধুনিকায়নের মাধ্যমে সক্ষমতা বৃদ্ধি করা হবে।
স্থানীয় সরকার : জনগণের ক্ষমতায়ন: তৃণমূলের জনসাধারণের নানামুখী চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে কার্যকর স্থানীয় সরকারের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। দারিদ্র্য নিরসন ও বৈষম্য হ্রাস করে উন্নয়ন প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের জন্য দরকার স্বায়ত্তশাসিত কার্যকর ও শক্তিশালী স্থানীয় সরকার। ইতোমধ্যে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ করে ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলা পরিষদসহ পৌরসভা ও সিটি কর্পোরেশনকে শক্তিশালী করা হয়েছে, দেয়া হয়েছে অধিকতর স্বায়ত্তশাসন, ক্ষমতা ও দায়িত্ব। এই প্রক্রিয়াকে অগ্রসর করে নিতে আওয়ামী লীগ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
সাফল্য ও অর্জন:
– স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানসমূহকে অধিকতর আর্থিক ও প্রশাসনিক ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে।
– নির্বাচিত জেলা পরিষদ গঠন করা হয়েছে।
– ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, জেলা পরিষদ, পৌরসভা ও সিটি কর্পোরেশনসমূহে রাজনৈতিক দলের প্রার্থী মনোনয়নের মধ্যদিয়ে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিগণের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক অধিকার সমুন্নত রাখা হয়েছে।
– সিটি করপোরেশন এবং পৌরসভাসমূহের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিদ্যুৎ, যাতায়াতসহ অন্যান্য নাগরিক সুযোগ-সুবিধা উন্নত ও প্রসারিত করার জন্য সরকারের সাহায্য ও উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে। শহরভিত্তিক বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পসমূহ বাস্তবায়নাধীন রয়েছে।
আধুনিক স্থাপত্যের নিদর্শন:
– দৃষ্টিনন্দন হাতিরঝিল ঢাকা শহরের সৌন্দর্য বর্ধন করেছে এবং চিত্ত বিনোদনের কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।
– ইউনিয়ন পরিষদের আর্থিক সক্ষমতা বৃদ্ধি ও উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে জনগণকে সরাসরি সম্পৃক্ত করার জন্য লোকাল গভর্ন্যান্স সাপোর্ট প্রজেক্ট-৩ (এলজিএসপি-৩)-এর কার্যক্রম দেশের মোট ৪ হাজার ৫৭০টি ইউনিয়ন পরিষদে বাস্তবায়িত হচ্ছে।
– গ্রাম পুলিশের বেতন ও ভাতা বৃদ্ধি করা হয়েছে।
– শুদ্ধাচার কৌশল প্রণয়ন, প্রত্যেক অফিসেই ইনোভেশন টিম গঠন, ই-ফাইল সিস্টেম, ই-মোবাইল কোর্ট সিস্টেম, ই-সার্ভিস রোডম্যাপ প্রণয়ন এবং জেলা-ব্র্যান্ডিং কৌশল-২০১৮ প্রণয়ন করা হয়েছে।
– সরকারের ২৫ হাজার তথ্য বাতায়ন হালনাগাদ করা হচ্ছে।
– মাঠ পর্যায়ের অভিযোগ সরাসরি নিষ্পত্তির লক্ষ্যে নির্দিষ্ট দিনে গণশুনানির ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে।
লক্ষ্য ও পরিকল্পনা: সুষম উন্নয়নের লক্ষ্যে জনসংখ্যা ও ভৌগোলিক অবস্থানকে বিবেচনায় নিয়ে জেলাভিত্তিক বাজেট প্রণয়ন করা হবে। বিভিন্ন স্তরে স্থানীয় সরকারের জন্য বাজেট প্রণয়ন করা হবে। জেলা পরিষদ, উপজেলা পরিষদ ও ইউনিয়ন পরিষদের মধ্যে দায়িত্ব বিভাজন সুনির্দিষ্ট করা হবে। স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানসমূহের উপযোগী সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে। নগর ও শহরে ভূমি ব্যবহার পরিকল্পনা, পরিকল্পিত উন্নয়ন এবং নগর ব্যবস্থাপনায় অধিকতর স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও জনগণের অধিকতর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হবে। সামষ্টিক অর্থনীতি : উচ্চ আয়, টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন
২০০৭-০৮ সালে বৈশ্বিক মন্দা, অর্থনৈতিক শ্লথ ও সংকট পরবর্তী একটি কঠিন সময়ে জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার গঠন করে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। বিগত সময়ে বিএনপি-জামাত
জোটের দুঃশাসন এবং ১/১১ সরকারের জোরজবরদস্তি ও অবিমৃশ্যকারী পদক্ষেপের ফলে সৃষ্ট অর্থনৈতিক বন্ধ্যত্ব এবং দুই মেয়াদে ১০ বছর বিভিন্ন প্রতিকূলতাকে মোকাবিলা করে বর্তমানে উন্নয়নের ক্ষেত্রে যে সাফল্য ও অর্জন, তা দেশের ইতিহাসে অনন্য এবং আন্তর্জাতিক বিশ্বে অনুকরণীয় উদাহরণ সৃষ্টি করেছে। সামষ্টিক অর্থনীতিতে এই ধারাকে অগ্রসর করে নেওয়াই আগামী দিনগুলোর চ্যালেঞ্জ।
সাফল্য ও অর্জন: ২০১৭-১৮ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে ৭.৮৬ শতাংশ হারে, যা উন্নয়নশীল দেশগুলোর তুলনায় অনেক বেশি। সাম্প্রতিক প্রবৃদ্ধির ঊর্ধ্বহার হতে ধারণা করা যায়, ২০২৫-৩০ সালে প্রবৃদ্ধি ১০ শতাংশে উন্নীত হতে পারে।
ক্রয়ক্ষমতার সমতার জিডিপির ভিত্তিতে বিশ্ব অর্থনীতিতে বাংলাদেশ আজ ৩৩তম স্থান অধিকার করেছে। মাথাপিছু আয় বর্তমানে উন্নীত হয়েছে ১ হাজার ৭৫১ মার্কিন ডলারে, যা ২০০৬ সালে ছিল ৪২৭ ডলার। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে জিডিপি হয়েছে ২২ লাখ কোটি টাকা, যা ২০০৫-০৬ অর্থবছরে ছিল ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা, অর্থাৎ ২০০৫-০৬ অর্থবছরের তুলনায় এখন প্রায় পাঁচ গুণ। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বাজেটের আকার ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৫৭১ কোটি টাকা, ২০০৫-০৬ অর্থবছরে ছিল ৬১ হাজার ৫৮ কোটি টাকা। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে উন্নয়ন বাজেট প্রাক্কলিত হয়েছে ১ লাখ ৭৩ হাজার কোটি টাকা, ২০০৫-০৬ অর্থবছরে ছিল ২২ হাজার কোটি টাকা।
বাজেট ঘাটতি আশানুরূপভাবে জিডিপির ৫ শতাংশে সীমিত রাখা হয়েছে গত ১০ বছর। অতীতের তুলনায় বিনিয়োগ বেড়েছে, বর্তমানে প্রায় ৬ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকা। এটা জিডিপি-র ৩১.০ শতাংশ, যা ২০০৫-০৬ অর্থবছরে ছিল ২৫.৮ শতাংশ। সরকারি বিনিয়োগবেড়ে হয়েছে জিডিপি-র ৭.৬ শতাংশ, ২০০৫-০৬ অর্থবছরে ছিল ৪.১৩ শতাংশ।
রফতানি আয় ২০১৭-১৮ অর্থবছরে সাড়ে তিন গুণ বেড়ে হয়েছে ৩৬.০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, ২০০৫-০৬ অর্থবছরে ছিল ১০.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকার বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখা সম্ভব হয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এখন প্রায় ৩৪ বিলিয়ন ডলার, যা সাত মাসের বেশি সময়ের আমদানি ব্যয় মেটাতে সক্ষম। রাজস্ব সংগ্রহের প্রবৃদ্ধি বজায় রাখা হয়েছে, যার ফলে উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করতে ক্রমবর্ধমান বাজেট বাস্তবায়ন করা সম্ভবপর হচ্ছে। মোট রাজস্ব আয় ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ২ লাখ ৫৯ হাজার ৪৫৪ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে, ২০০৫-০৬ অর্থবছরের ছিল ৪৪.২ হাজার কোটি টাকা।
চলতি অর্থবছরে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ৫.৪৩ শতাংশের নিচে নেমে আসে। খাদ্য মূল্যস্ফীতি ৫.১ শতাংশ, যা সার্বিক মূল্যস্ফীতি হ্রাসের প্রধান কারণ। আয়বর্ধক কর্মসৃজন, শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি বৃদ্ধি, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতা সম্প্রসারণ, নতুন বেতন স্কেল ও মহার্ঘ ভাতা প্রদান ইত্যাদি কার্যক্রমের ফলে মানুষের প্রকৃত আয় ও ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে।
বিগত ২০০৯-১৮ সময়কালে বেতন ৩৪৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ শতকরা ১২৩ হারে বেতন বৃদ্ধি পেলেও মুদ্রাস্ফীতির ওপর কোনো প্রভাব ফেলেনি।
সার্বিক অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে অব্যাহত উচ্চহারে প্রবৃদ্ধির স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক মূল্যায়নে ২০১৬ সালে বিশ্বব্যাংক কর্তৃক নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশ হয়েছে এবং ২০১৮ সালে জাতিসংঘ কর্তৃক নিম্ন আয়ের দেশ (এলডিসি) থেকে উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতি পেয়েছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার হ্রাস (২০১৫-৩০) এবং ঋণাত্মক (২০২৫-৩০) হওয়ার ফলে সার্বিক জাতীয় আয়ের তুলনায় মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির হার হবে উচ্চতর।
লক্ষ্য ও পরিকল্পনা : স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ২০২১ থেকে স্বাধীনতার ৭০ বছর ২০৪১
বিগত ১০ বছরে আওয়ামী লীগ শাসনামলে উন্নয়নের সূচকগুলোর বিস্ময়কর অগ্রগতি এবং আপামর মানুষের জীবন-জীবিকার উন্নতি গণমনে আত্মবিশ্বাস ও সাহস এমন পর্যায়ে উন্নীত করেছে যে, ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত ও সমৃদ্ধশালী দেশে রূপান্তর সম্ভব।
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর লক্ষ্য অর্জন করতে হবে এবং পর্যায়ক্রমে স্বাধীনতার ৭০ বছরের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের দিকে অগ্রসর হতে হবে। এ লক্ষ্য বাস্তবায়নে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ উন্নয়ন পরিকল্পনা, সুদূরপ্রসারি কৌশল ও ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে।
এই পরিকল্পনায় অঙ্গীকার অনুয়ায়ী ২০১৯-২৩ সময়কালের লক্ষ্যমাত্রা ও কর্মসূচির সাথে সাথে ভবিষ্যৎ উন্নয়ন পরিকল্পনা ও লক্ষ্যমাত্রাকে এমনভাবে সমন্বয় করা হবে, যাতে দেশ ধারাবাহিকভাবে সুদূরপ্রসারি লক্ষ্য অভিমুখে অগ্রসর হয়। বাংলাদেশ স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ২০২১ পালনকালে হবে মধ্যম আয়ের দেশ, ২০৩০ সালে উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালে উন্নত দেশ হিসেবে বিশ্বের বুকে মাথা তুলে দাঁড়াবে।
এই পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০৩০ সালে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় হবে ৫ হাজার ৪৭৯ ডলারেরও বেশি। এই পরিকল্পনায় ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশের সার্বিক দারিদ্র্যের হার শূন্য শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা স্থির করা হয়েছে।
২০২১ থেকে ২০৪১, অর্থাৎ ২০ বছর বাংলাদেশকে প্রকৃত জিডিপি প্রবৃদ্ধির গড় হার ১০ শতাংশ ধরে রাখতে হবে। গত অর্থবছরে ৭.৮৬ শতাংশের প্রবৃদ্ধির হার প্রমাণ করে, জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে পরিচালিত সরকার এ লক্ষ্য অর্জনে সঠিক পথেই এগিয়ে যাচ্ছে।
কৌশল ও পদক্ষেপ:
-বেসরকারি খাতে নতুন মূলধন সৃষ্টির হার বৃদ্ধির লক্ষ্যে
-২০৪১ সালের মধ্যে বিনিয়োগের হার জিডিপি-র ৪০ শতাংশে উন্নীত করতে হবে।
-পর্যাপ্ত অবকাঠামো সেবা সরবরাহ করতে হবে।
-রফতানি বাজারে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়াতে হবে।
-ব্যাংক ও বীমা খাতের সেবা সম্প্রসারণ, দক্ষতা ও দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করতে হবে।
-পুঁজিবাজারের সম্প্রসারণ ও গভীরতা এবং পুঁজিপণ্য সরবরাহ ও বৈচিত্র্য বাড়াতে হবে। ইতোমধ্যে চীনা কনসোর্টিয়াম ঢাকা পুঁজিবাজারে কৌশলগত বিনিয়োগ করেছে।
-প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধি করা হবে।
-ক্ষুদ্র ও মাঝারি মূলধনী কোম্পানির শেয়ার এবং ভেঞ্চার ক্যাপিটালে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান- সমূহের লেনদেন দ্রুত নিষ্পন্ন করা হবে।
-দেশব্যাপী বিনিয়োগ প্রশিক্ষণ কার্যক্রম সম্প্রসারণ করে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি করা হবে। জনসংখ্যায় বয়স কাঠামোর সুবিধাকে কাজে লাগানোর লক্ষ্যে
– ২০১৫ সালে বাংলাদেশে কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর অনুপাত ছিল ৬৬ শতাংশ, ২০৩০ সালে যা বৃদ্ধিপেয়ে হবে ৭০ শতাংশ। ২০৩০-এর পর থেকে এই হার কমতে থাকবে। এই জনমিতিক সম্ভাবনার সুফল বাস্তবায়নের জন্য সকল পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
– শোভন কাজের পরিসর বৃদ্ধি করা হবে, শ্রমের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধিতে প্রশিক্ষণ ও নতুন প্রযুক্তির বিকাশে গুরুত্বারোপ করা হবে, ব্যবস্থাপনাগত দক্ষতা বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হবে। বয়স্ক জনগোষ্ঠীর সঞ্চয়কে বিনিয়োগে রূপান্তরের সুযোগ তৈরি করা হবে।
– কারিগরি শিক্ষা প্রসারের লক্ষ্যে ১১৯ উপজেলায় টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ প্রতিষ্ঠা প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে, অতিরিক্ত ৩৮৯টি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ স্থাপন করা হবে।
– শুধু ভৌত উপকরণের ওপর নির্ভর করে অব্যাহত প্রবৃদ্ধি সম্ভব নয়। শিল্পনির্ভর প্রবৃদ্ধির জন্য জ্ঞান ও প্রযুক্তিভিত্তিক উৎপাদন ব্যবস্থা সুনিশ্চিত করা হবে।
রফতানি আয় বৃদ্ধির লক্ষ্যে: – রফতানি পণ্যের বৈচিত্র্য বৃদ্ধি এবং নতুন বাজার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সীমিত সংখ্যক পণ্য ও বাজারের ওপর নির্ভর করে রপ্তানি সম্প্রসারণ দুঃসাধ্য। রফতানি বহুমুখীকরণের জন্য খাতভিত্তিক সমস্যাবলি সমাধানের পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
– রফতানি বৃদ্ধির জন্য সরকার যে সকল সহায়তা দেয়, যথা শুল্ক-কর-মূসক রেয়াৎ, নগদ প্রণোদনা ইত্যাদির সামগ্রিক কার্যকারিতা বিশ্লেষণ করে প্রয়োজন অনুসারে সংস্কার ও সমন্বয় করা হবে। জ্ঞান ও প্রযুক্তিভিত্তিক শিল্প বিকাশের জন্য শুল্ক-কর সুবিধা ও প্রণোদনা বিশেষ বিবেচনা পাবে, যা প্রশিক্ষিত তরুণ ও যুবকদের শিল্পের প্রতি আকৃষ্ট করবে এবং দক্ষ উদ্যোক্তা-শ্রেণি সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখবে।
প্রবৃদ্ধি ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে: ২০৩০ সালের মধ্যে দেশকে উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করার জন্য সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার (২০১৬-২০) কালপর্বে গড় প্রবৃদ্ধি ৭.৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে এবং অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার (২০২১-২৫) কালপর্বে এই হার গড়ে ১০.০ শতাংশ ছুঁয়ে যাবে।
কাঙ্ক্ষিত রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যে: – আয়কর, ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্কের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সংস্কার করে রাজস্ব সংগ্রহ বাড়ানো হবে।
– মূসক আইন যুক্তিযুক্ত ও বাস্তবায়নযোগ্য করে বিদ্যমান ইস্যুগুলোকে সমাধান করা হবে। ভ্রান্ত পৌনঃপুনিক কর আরোপ (কাসকেডিং) পরিহার করা হবে। বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির (এডিআর) ব্যবহার বৃদ্ধি করা হবে। নিরীক্ষা প্রতিবেদন ও বিরোধ নিষ্পত্তির সাফল্য বিবেচনায় নিয়ে কর কর্মকর্তাদের পুরস্কার বা প্রণোদনা প্রদান কার্যক্রমকে অধিক কার্যকর করা হবে।
– আয়ের সাথে সংগতি রেখে আয়করের পরিধি ক্রমান্বয়ে বাড়ানো হবে।
– কর কর্মকর্তাদের ব্যবসায়িক অর্থায়ন, হিসাববিজ্ঞান, বাণিজ্যিক আইন, ব্যাংকিং আইন, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য প্রভৃতি বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে। বাজেট প্রক্রিয়ার প্রয়োজনীয় সংস্কার করার লক্ষ্যে
– বিনিয়োগ ও কল্যাণমুখী পরিকল্পনার অংশ হিসেবে দক্ষতা প্রশিক্ষণ চলাকালীন প্রশিক্ষণার্থীদের মাসিক ভাতা প্রদান করা হবে।
– সামাজিক সুরক্ষা বেষ্টনীর জন্য প্রয়োজন অনুসারে বরাদ্দ বৃদ্ধি করা হবে, যার মধ্যে বয়স্ক পুরুষ জনগোষ্ঠীও অন্তর্ভুক্ত হবেন। দুস্থ, বিধবা ও বয়স্ক নারীদের জন্য বিদ্যমান কর্মসূচির আওতা ও ব্যয় বৃদ্ধি করা হবে।
– বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) দ্বিগুণ করার জন্য অর্থাৎ জাতীয় আয়ের ৯ শতাংশ এডিপি-তে খরচ করার উদ্দেশ্যে বাজেট কৌশলে সমন্বয় করা হবে। বিদেশি অর্থায়নের কার্যকরী ব্যবহার নিশ্চিত করা হবে। ব্যাংক হতে ঘাটতি অর্থসংস্থান নিয়ন্ত্রণে রাখা হবে।
– একটি শক্তিশালী বেসরকারি খাত যাতে অধিক রাজস্ব প্রদান করার সক্ষমতা অর্জন করতে পারে, সে-লক্ষ্য সামনে রেখে পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হবে।
– বিশেষজ্ঞ জ্ঞান ও প্রশাসনিক ক্ষমতা সমন্বিত করে পিপিপি ও বিডা-র প্রধান নির্বাহী নিয়োগ করা হবে, যা প্রতিষ্ঠান দুটির কর্মদক্ষতা বাড়াবে। বিশেষজ্ঞ ও প্রশাসনিক প্রধান ও সর্বোচ্চ অনুমোদন ক্ষমতা দুটির মধ্যে আমলাতান্ত্রিক স্তর কমিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করা হবে।
– ব্যবসার পরিচালনা ব্যয় ক্রম-উন্নয়নের জন্য সর্বপ্রকার উদ্যোগ নেওয়া হবে।
ব্যাংকিং ও আর্থিক খাতের উন্নয়নের লক্ষ্যে: – বাণিজ্যিক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ওপর বাংলাদেশ ব্যাংকের চলমান তদারকি ও নিয়ন্ত্রণ অধিকতর কার্যকর ও শক্তিশালী করা হবে।
– ঋণসহ ব্যাংক জালিয়াতি কঠোর হস্তে দমন এবং সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্মকর্তা-কর্মচারী, ঋণ গ্রাহক ও দোষীদের আইনের আওতায় এনে শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।
– খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমিয়ে আনার এবং দেউলিয়া আইন বাস্তবায়নের টেকসই ও কার্যকর পদ্ধতি নির্ণয় করা হবে। বাজার-ব্যবস্থাকে ক্ষতিগ্রস্ত না করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিচক্ষণতার সাথে নির্দিষ্ট পদ্ধতি ব্যবহার করে সুদের হার নিয়ন্ত্রণে রাখবে। ঋণ অনুমোদন ও অর্থ ছাড়ে দক্ষতা এবং গ্রাহকের প্রতি ব্যাংকের দায়বদ্ধতা পরিবীক্ষণের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক পদক্ষেপ নেবে।
অর্থপাচার রোধ করার লক্ষ্যে: বিদেশে অর্থ বা পুঁজিপাচার ও সম্পদ গচ্ছিত রাখা সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানোর লক্ষ্যে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে। অপরাধীদের আইনের আওতায় আনার জন্য সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছে এবং অপরাধ দৃঢ়ভাবে দমনে সক্রিয় থাকছে। পুঁজিপাচার ও সন্ত্রাসী অর্থসংস্থান দমনের ক্ষেত্রে বিশ্ব সংস্থা এগমন্ট গ্রুপের সদস্য হিসেবে বাংলাদেশ গ্রুপের ১৫৯টি সদস্য রাষ্ট্র এবং অন্যান্য কয়েকটি দেশের সাথে মানি-লন্ডারিং ও সন্ত্রাস সমর্থনে অর্থসংস্থান সম্পর্কিত তথ্য আদান-প্রদান এবং অপরাধ নিরোধ কার্যক্রম সমন্বয় করে। অর্থপাচার ও জঙ্গি সহায়তায় অর্থসংস্থান দমনের জন্য সরকার প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি করেছে। বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইনটেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) একটি স্বতন্ত্র সংস্থা হিসেবে বিশ্বসংস্থা ও বিদেশি সংস্থাসমূহের সাথে যোগাযোগ রাখছে। অর্থপাচার রোধ এবং পাচারকৃত অর্থ পুনরুদ্ধারের জন্য ‘বিদেশে পাচারকৃত সম্পদ ফেরত আনার লক্ষ্যে গঠিত আন্তঃসংস্থা টাস্কফোর্স’ কাজ করছে।
মানি-লন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধ বিষয়ক জাতীয় কৌশলপত্র ২০১৫-১৭ সংশ্লিষ্ট অপরাধ দমনের আবশ্যিক কৌশল নির্ধারণ করা হয়েছে। অপরাধ ও শুল্ক-কর ফাঁকি দিয়ে অর্জিত সম্পদ পাচার রোধ এবং পাচারকৃত সম্পদ পুনরুদ্ধার কৌশলের ওপর সর্বাধিক গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। অর্থপাচার রোধে সকল কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।
অবকাঠামো উন্নয়নে বৃহৎ প্রকল্প (মেগা প্রজেক্ট): দেশের উন্নয়নে নতুন গতি সঞ্চারের জন্য বড় ধরনের বিনিয়োগ প্রকল্পের প্রয়োজন অপরিহার্য। মেগা প্রজেক্ট বাস্তবায়নের ফলে অবকাঠামো খাতে বাধা দূর এবং সার্বিক অর্থনীতিতে যুগান্তকারী পরিবর্তন সাধিত হবে। দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো মেগা প্রজেক্ট গ্রহণ করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে পদ্মাসেতু, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, গভীর সমুদ্রবন্দর, ঢাকায় দ্রুত গণপরিবহনের জন্য অবকাঠামো নির্মাণ, এলএনজি ফ্লোটিং স্টোরেজ অ্যান্ড রিগ্যাসিফিকেশন ইউনিট, মহেষখালী-মাতারবাড়ী সমন্বিত অবকাঠামো উন্নয়ন কার্যক্রম, পায়রা সমুদ্রবন্দর, পদ্মাসেতু রেল সংযোগ এবং চট্টগ্রাম হতে কক্সবাজার পর্যন্ত ১২৯.৫ কিলোমিটার রেললাইন স্থাপন। আওয়ামী লীগ এসব মেগা প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়নের উদ্যোগ ও ভূমিকা পালনে দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ। এসব মেগা প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে দেশের যোগাযোগ-ব্যবস্থা, বিদ্যুৎ সরবরাহ ও ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে প্রভূত উন্নতি সাধিত হবে এবং সেই সাথে মানুষের কর্মসংস্থান, আয় ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়বে বহুগুণ।
সাফল্য ও অর্জন: – প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করার জন্য ৮টি বৃহৎ প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য সর্বাত্মক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
– গণবিরোধী শক্তির শত বাধা-বিপত্তি শক্ত হাতে মোকাবিলা করে নিজস্ব অর্থায়নে বহু প্রত্যাশিত পদ্মাসেতুর কাজ ২০১৮ সালের প্রথমার্ধ্বেই ৬২ শতাংশ সমাপ্ত হয়েছে।
– রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে। এই বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে ২৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে।
– মেট্রোরেল স্থাপনের কাজ উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ডিসেম্বর ২০১৯ এবং বাংলাদেশ ব্যাংক পর্যন্ত ডিসেম্বর ২০২০ সালে শেষ হবে।
– চট্টগ্রাম ও মোংলা সমুদ্রবন্দরের ওপর নির্ভরতা কমানোর জন্য পটুয়াখালীর পায়রাতে একটি গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। পায়রা বন্দরের পরিপূর্ণ উন্নয়নের জন্য ১৯ প্রকার কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এই বন্দরের মাধ্যমে ২০১৬ সালে প্রাথমিকভাবে মালামাল উঠানো-নামানো শুরু হয়েছে।
– সোনাদিয়া গভীর সমুদ্রবন্দর, রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্প, মাতারবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। এলএনজি টার্মিনাল বাস্তবায়িত হয়েছে। ইতোমধ্যে জাতীয় গ্রিডে এলএনজি গ্যাস সরবরাহ শুরু হয়েছে।
লক্ষ্য ও পরিকল্পনা: -অবকাঠামো রূপান্তরের লক্ষ্যে বৃহৎ প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নের পরিকল্পনা অব্যাহত রাখা হবে।
-পদ্মা রেলসেতু সংযোগ এবং কক্সবাজার-দোহাজারী-রামু-গুনদুম রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ ত্বরান্বিত করা হবে।
-মাতারবাড়ী কয়লা বন্দর, ভোলা গ্যাস পাইপ লাইন ও উপকূলীয় অঞ্চলে একটি পেট্রোকেমিক্যালস কারখানা স্থাপন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে।
‘আমার গ্রাম, আমার শহর’ : প্রতিটি গ্রামে আধুনিক নগর সুবিধা সম্প্রসারণ
গ্রামকে আওয়ামী লীগ উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির কেন্দ্রীয় দর্শন হিসেবে বরাবরই বিবেচনা করে এসেছে। স্বাধীন দেশে জাতির পিতা সংবিধানের ১৬ অনুচ্ছেদে নগর ও গ্রামের বৈষম্য ক্রমাগতভাবে দূর করার উদ্দেশ্যে কৃষিবিপ্লবের বিকাশ, গ্রামাঞ্চলে বৈদ্যুতিকরণের ব্যবস্থা, কুটির শিল্প ও অন্যান্য শিল্পের বিকাশ এবং শিক্ষা, যোগাযোগ-ব্যবস্থা ও জনস্বাস্থ্যের উন্নয়নের মাধ্যমে গ্রামাঞ্চলের আমূল রূপান্তর সাধনের জন্য রাষ্ট্র কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে অঙ্গীকার যুক্ত করেছিলেন। বর্তমান সরকার প্রতিটি গ্রামকে শহরে উন্নীত করার কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করবে।
সাফল্য ও অর্জন: বর্তমান সরকারের দুই মেয়াদে বহুমাত্রিক তৎপরতা যেমন শিক্ষা সম্প্রসারণ, কৃষি ও অকৃষি খাতে দক্ষ জনবল বাড়াতে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা-প্রশিক্ষণের সুযোগ বৃদ্ধি, স্বাস্থ্যসেবার সম্প্রসারণ, গ্রামাঞ্চলে আর্থিক সেবা খাতের পরিধি বিস্তার, কৃষি প্রযুক্তির সম্প্রসারণ, বিদ্যুতায়ন, গ্রামীণ অবকাঠামো ও যোগাযোগ-ব্যবস্থার উন্নয়ন ইত্যাদি গ্রামোন্নয়ন প্রয়াসকে ত্বরান্বিত করেছে। প্রবাসীদের প্রেরিত অর্থের প্রবাহ বৃদ্ধি গ্রামীণ অর্থনীতির এই বিকাশ প্রক্রিয়ায় সহায়ক হচ্ছে।
গ্রামীণ অর্থনীতিতে বৈচিত্র্য এসেছে। কৃষিজ ও অকৃষিজ উভয় ক্ষেত্রে কর্মকাণ্ড বহুগুণ সম্প্রসারিত হয়েছে। বর্তমান সরকার কৃষিক্ষেত্রে অসামান্য গুরুত্ব প্রদানের পাশাপাশি অকৃষি খাত যেমনÑ গ্রামীণ অবকাঠামো নির্মাণ, গ্রামীণ পরিবহন ও যোগাযোগ এবং গ্রামীণ ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসারের জন্য বিনিয়োগ বৃদ্ধি করে চলেছে। ফলে গ্রামীণ পরিবারের আয় ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধিতে অকৃষি খাতের অবদান বেড়ে চলেছে।
লক্ষ্য ও পরিকল্পনা: উন্নত রাস্তাঘাট, যোগাযোগ, সুপেয় পানি, আধুনিক স্বাস্থ্যসেবা ও সুচিকিৎসা, মানসম্পন্ন শিক্ষা, উন্নত পয়ঃনিষ্কাশন ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহ বৃদ্ধি, কম্পিউটার ও দ্রুতগতিসম্পন্ন ইন্টারনেট সুবিধা, বৈদ্যুতিক সরঞ্জামসহ মানসম্পন্ন ভোগ্যপণ্যের বাজার সম্প্রসারণের মাধ্যমে প্রতিটি গ্রামকে আধুনিক শহরের সকল সুবিধাদি দেওয়ার ব্যবস্থানেওয়া হবে।
গ্রামে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহ আরও বাড়ানো ও নির্ভরযোগ্য করার লক্ষ্যে গ্রুপভিত্তিতে বায়োগ্যাস প্লান্ট ও সৌরশক্তি প্যানেল বসানোর উৎসাহ ও সহায়তা দেওয়া হবে।
গ্রাম পর্যায়ে কৃষিযন্ত্র সেবাকেন্দ্র, ওয়ার্কশপ স্থাপন করে যন্ত্রপাতি মেরামতসহ গ্রামীণ যান্ত্রিকায়ন সেবা সম্প্রসারণ করা হবে এবং এসবের মাধ্যমে গ্রামীণ যুবক ও কৃষি উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে উৎপাদনশীল কর্মসংস্থান করা হবে। অকৃষি খাতের এসব সেবার পাশাপাশি হাল্কা যন্ত্রপাতি তৈরি ও বাজারজাত করতে বেসরকারি খাতের প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের ঋণ সুবিধাসহ প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়া হবে।
তরুণ যুবসমাজ : ‘তারুণ্যের শক্তি বাংলাদেশের সমৃদ্ধি’
যুবসমাজ দেশের মূল্যবান সম্পদ। বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশ যুবসমাজ, যা প্রায় ৫ কোটি ৩০ লাখ। ‘সোনার বাংলা’র স্বপ্ন বাস্তবায়ন ও ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রধানতম শক্তি হচ্ছে যুবশক্তি। দেশের এই যুবগোষ্ঠীকে সুসংগঠিত, সুশৃঙ্খল এবং উৎপাদনমুখী শক্তিতে রূপান্তরের লক্ষ্য অর্জনে আওয়ামী লীগ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। যুব উন্নয়নে আমাদের অগ্রাধিকার যুবদের মানসম্মত শিক্ষা, দক্ষতা বৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান, শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য, সুস্থ বিনোদনের ব্যবস্থা, রাজনৈতিক ও নাগরিক ক্ষমতায়ন এবং সন্ত্রাস, সাম্প্রদায়িকতা, জঙ্গিবাদ ও মাদকমুক্ত যুবসমাজ।
সাফল্য ও অর্জন: বিগত ১০ বছর ধরে যুবদের শিক্ষা, কর্মসংস্থান, তাদের মেধা ও প্রতিভা বিকাশের সুযোগ অবারিত করতে সম্ভাব্য সবরকম ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। প্রশিক্ষণ, ঋণ সুবিধা, অনুদান ও কর্মসংস্থানের জন্য বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে যুবসমাজকে করে তোলা হচ্ছে শিক্ষিত, দক্ষ, কর্মমুখী ও আত্মনির্ভরশীল।
বাংলাদেশের যুবসমাজের সার্বিক উন্নয়নের স্বার্থে প্রণয়ন করা হয়েছে যুগোপযোগী জাতীয় যুবনীতি-২০১৭। ১১টি জেলায় নতুন যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। কর্মসংস্থান ও আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে উপজেলা পর্যায়ে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে। ২৪ লাখ তরুণ-তরুণীদের প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে গত ১০ বছরে।যুব সংগঠনগুলোর কাজ অনুপ্রাণিত করতে ১,২১৯ লাখ টাকা অনুদান প্রদান করা হয়েছে।
২০০৯-১০ অর্থবছর থেকে ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচি বাস্তবায়নের কাজ অগ্রসর করা হচ্ছে। এ পর্যন্ত সাত পর্বে মোট ৩৭টি জেলার ১২৮টি উপজেলায় এই কর্মসূচি বাস্তবায়নের মধ্যদিয়ে ১ লাখ ৯৩ হাজার ৯৮৫ যুবককে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ১ লাখ ৯১ হাজার ৬৫০ জন বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থায় দুই বছরের অস্থায়ী কর্মে নিযুক্ত হয়েছে। অস্থায়ী কর্মশেষে তাদের মধ্যে মোট ৮৩ হাজার ১৪ জন আত্মকর্মসংস্থানে নিয়োজিত হয়েছে।
লক্ষ্য ও পরিকল্পনা:
প্রশাসন, নীতি ও বাজেট প্রণয়ন একটি সুচিন্তিত কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নের মাধ্যমে জাতীয় যুবনীতি পুরোপুরিভাবে বাস্তবায়ন করা হবে। তরুণদের কল্যাণ ও উন্নয়ন কাজে প্রশাসনিক গতি আনতে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের আওতায় গঠন করা হবে পৃথক যুব বিভাগ।
জাতীয় বাজেটে বাড়ানো হবে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের আর্থিক বরাদ্দ। জেন্ডার বাজেটের আলোকে প্রণয়ন করা হবে বার্ষিক যুব বাজেট।
তরুণদের সাথে সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয়ে গবেষণা করার জন্য গঠন করা হবে যুব মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন ‘যুব গবেষণা কেন্দ্র’।
শিক্ষা, দক্ষতা ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধি : স্কুল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত শিক্ষাকে একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় যুগোপযোগী করতে কারিগরি শিক্ষা, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতে অধিকতর বিনিয়োগ করা হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গবেষণার জন্য আর্থিক ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করা হবে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি অগ্রাধিকার পাবে।
তরুণদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচি পর্যায়ক্রমে দেশের প্রতিটি উপজেলায় প্রসারিত করা হবে।
সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর বিষয়ে মেধা ও দক্ষতা বিবেচনায় রেখে বাস্তবতার নিরীখে যুক্তিসংগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
প্রতিটি উপজেলায় ‘যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র’ স্থাপন করা হবে। বিভিন্ন ট্রেডে প্রশিক্ষণ দেওয়ার পাশাপাশি এই কেন্দ্রগুলোকে পর্যায়ক্রমে ‘তরুণ কর্মসংস্থান কেন্দ্র’ হিসেবে গড়ে তোলা হবে।
দক্ষতা বৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য দুটি নতুন প্রকল্প হাতে নেওয়া হবে। ‘কর্মঠ প্রকল্প’র অধীনে ‘স্বল্প শিক্ষিত/স্বল্প দক্ষ/অদক্ষ’ শ্রেণির তরুণদের শ্রমঘন, কৃষি, শিল্প ও বাণিজ্যের উপযোগী জনশক্তি হিসেবে গড়ে তোলা হবে।
‘সুদক্ষ প্রকল্প’র অধীনে দক্ষ শ্রমিকের চাহিদা ও জোগানের মধ্যে যে ভারসাম্যহীনতা রয়েছে, তা দূর করতে নানামুখী কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে। জাতীয় পর্যায়ে স্বল্প, মধ্যম ও উচ্চ শিক্ষিত তরুণদের তথ্য সম্বলিত একটি ইন্টিগ্রেটেড ডাটাবেইজ তৈরি করা হবে। এর মাধ্যমে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের প্রয়োজন ও তরুণদের যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরির জন্য আবেদন করার আহ্বান জানাতে পারবে।
কর্মসংস্থানে কৃষি, শিল্প ও সেবার অংশ যথাক্রমে ৩০, ২৫ ও ৪৫ শতাংশে পরিবর্তন করা হবে। ২০২৩ সাল নাগাদ অতিরিক্ত ১ কোটি ৫০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টির পদক্ষেপ গৃহীত হয়েছে। এছাড়া উক্ত সময়ে নতুনভাবে ১ কোটি ১০ লাখ ৯০ হাজার মানুষ শ্রমশক্তিতে যুক্ত হবে।