ইভিএম নিয়ে সাতক্ষীরার ভোটারদের মধ্যে চলছে নানা জল্পনা কল্পনা

আসন্ন একাদশ সংসদ নির্বাচনে সাতক্ষীরা-২ আসনে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনের মাধ্যমে (ইভিএম) ভোট গ্রহণ করা হবে। এই ইভিএম নিয়ে যা ভাবছে সাতক্ষীরা ২ আসনের ভোটাররা। এই ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট দেয়া নিয়ে সাতক্ষীরার ভোটারদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখে গেছে অনেকের মধ্যে। তবে তরুণ প্রজন্মের ভোটারার ইভিএমকে ভালোভাবে নিচ্ছেন।
ইভিএম ব্যবহারে ভোট কারচুপি বা রাতে ভোট কাটার কোন সুযোগ নেই। এমনকি নির্ধারিত সময়ের আগে কিম্বা পরে ইভিএম চালু করা যাবে না। এটি হ্যাক করারও কোন সুযোগ নেই। কেউ ইভিএম মেশিন চুরি বা ছিনতাই করতে পারবে না। চুরি বা ছিনতাই করলেও তাতে কাজ হবে না। ইভিএম পরিচালিত প্রতিটি ভোট কেন্দ্রে থাকবে সেনাবাহিনী।

তবে অধিকাংশ বয়োজ্যেষ্ঠ ভোটার ইভিএম সম্পর্কে তাদের কোন ধারণা নেই। অনেকে আবার এ ব্যবস্থা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। এ ছাড়া ইভিএমে ভোট নেয়ার আগে যথেষ্ট প্রচারণা ও প্রশিক্ষণের দাবি করেছেন তারা। এদিকে সাতক্ষীরা-২ আসনে ইভিএম এর ব্যবহারকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন তরুণ ভোটাররা।

এই আসনে ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালে জামাতের কাজী শাসসুর রহমান বিজয়ী হয়। ২০০১ সালেও জেলা জামাতের সাবেক আমির যুদ্ধাপরাধ মামলায় আটক আব্দুল খালেক মন্ডল এই আসন থেকে নির্বাচিত হন। ২০০৮ সালের মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান এমএ জব্বার নির্বাচিত হন। সর্বশেষ ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগে প্রার্থী হিসেবে মীর মোস্তাক আহমেদ এমপি নির্বাচিত হন।

সাতক্ষীরা সদর-২ আসনটি একটি পৌরসভা ও ১৪টি ইউনিয়ন গঠিত। এই আসনে মোট তিন লাখ ৫৬ হাজার ২৫৮ জন ভোটার ইভিএমে ভোট দেবেন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার এক লাখ ৭৭ হাজার ২৯০ এবং নারী ভোটার এক লাখ ৭৮ হাজার ৯৭৮ জন।

শহরের মুনজিতপুর এলাকার বাসিন্দা সোনিয়া পারভীন বলেন, ‘আমি নতুন ভোটার হয়েছি। ‘জীবনের প্রথম ভোট দেব সেটা আবার ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনের মাধ্যমে (ইভিএম) সেজন্য অনেক ভালো লাগছে। আমি আশা করছি ইভিএম পদ্ধতিকে সবাই ইতবাচকভাবে নেবে। এখন উন্মুখ হয়ে অপেক্ষা করছি ৩০ ডিসেম্বরের জন্য।’

সদরের মাছখোলা এলাকার মোখলেছুর রহমান বলেন, ‘ইভিএম নিয়ে আমরা গোলক ধাঁধায় আছি। তবে জেনেছি জাতীয় পরিচয়পত্র বা স্মার্ট কার্ড ছাড়াও সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা তার আঙুলের ছাপে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত ব্যালট ইস্যু করতে পারবেন? এই অবস্থায় ভোট যে শতকরা শতভাগ নির্ভেজাল থাকবে কিনা সেটা নিয়ে সন্দেহ আছে।

স্কুল শিক্ষক আমিনুর রশিদ বলেন, ‘আমি বেশ কয়েকটি নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করেছি। একজন ভোটার ব্যালটে সিল মারার পর নিশ্চিত হয়ে বলতে পারেন ভোটটি তার পছন্দের প্রার্থীই পাচ্ছেন। কিন্তু প্রথমবার ইভিএমে ভোট একজন ভোটারের মনে প্রশ্ন হবে, তার প্রার্থী ভোটটি পাচ্ছেন তো? কিন্তু এই রকম সন্দেহ হওয়ার কোন কারণ নেই। আমার জানামতে এই সিস্টেমে ভোট কারচুপির কোন সুযোগ থাকবে না। তিনি অতীত অভিজ্ঞতা থেকে আরো বলেন, ইতোপূর্বে দেখা গেছে ব্যাটলেটর মাধ্যমে ভোট গ্রহণ শেষে গণনার সময় ভোটার সিল মারতে গিয়ে কয়েকটি প্রতীকে সিল মেরেছেন। এমনকি দুই প্রতীতের মাঝখানেও সিল মারতে দেখা যায়। সিলের কালি অস্পস্ট থাকে। এরকম নানা ত্রুটির কারণে অনেক ভোট বিনষ্ট হয়। কিন্তু ইভিএম পদ্ধতিতে সে সুযোগ নেই। এখানে একজন ভোটার শুধুমাত্র একটি ভোট প্রদানের সুযোগ পাবেন। প্রতীক দেখে ভোটার তার পছন্দের ব্যক্তিকে ভোট দিতে পারবেন। তিনি আরো বলেন, অনেক সময় ভোটের বাক্স চুরি হওয়ার আশঙ্কা থাকে কিন্তু এই পদ্ধতিতে কোন সুযোগ থাকবে না। এছাড়া প্রতিটি ইভিএম কেন্দ্রে সেনাবাহিনী থাকছে।

সাতক্ষীরা পৌর এলাকার ২নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা আইমান বিবির বয়স ৬৫ বছর। তিনি বলেন, ‘ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) কী জিনিস সেটা আমার জানা নেই।’

পৌর এলাকার রসুলপুল এলাকার বাসিন্দা আফরোজা রহমান বলেন, ‘ব্যালট পেপারে তিনবার ভোট দিয়েছি। কিন্তু এবার শুনছি আমাদের আসনে ইভিএম ভোট দিতে হবে। ইভিএম কি জিনিস সেটা আমার জানা নেই। তবে শুনেছি আঙ্গুলের ছাপ, স্মার্ট কার্ড ও ভোটার নাম্বার দিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে ভোট দিতে হবে। আশা করছি এই পদ্ধতি ভালোই হবে। তবে ব্যালট পেপারে ভোট দিতে যেয়ে আমাদের অনেক ভুল ভ্রান্তি হয়। প্রথমে ইভিএম অনেক ভুল ভ্রান্তি হবে। আশা করি, নির্বাচন কমিশন পর্যপ্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেবেন।’

সাতক্ষীরা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক তারিকুল ইসলাম বলেন, ‘ইভিএমকে আমি নিরাপদ মনে করছি না। ইভিএম সম্পর্কে কোন প্রচার প্রচারণা করা হয়নি এবং সচেতন করা হয়নি। এই ইভিএম পদ্ধতি নিয়ে অনেক বিতর্ক আছে। এর আগের বেশ কয়েকটি নির্বাচনে স্বল্প পরিসরে যে ইভিএম ব্যবহার করে সমস্যা দেখা দিয়েছে। কোথাও ইভিএম বাদ দিয়ে ব্যালট পেপারেও ভোটগ্রহণ সম্পন্ন করতে হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘প্রিজাইডিং ও সহকারী প্রিজাইডিং অফিসারা চাইলে নিজের বায়োমেট্রিকের মাধ্যমে ভোটার ছাড়াও ইভিএমকে ভোটদানের উপযোগী করতে পারে। ফলে অসাধু প্রিজাইডিং/সহকারী প্রিজাইডিং অফিসারের মাধ্যমে যেকোনো প্রার্থীর পক্ষে সহজেই ভোট দিয়ে ভোটের ফলাফল পাল্টে দিতে পারেন।’

সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুনসুর আহমেদ বলেন, ‘দেশ এখন ডিজিটাল হয়েছে। আমারা বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপন করেছি। সেখানে ভোটের পদ্ধিতে পিছিয়ে থাকার সুযোগ নেই। ইভিএমের মাধ্যমে ভোট গ্রহণ সারা বিশ্বে প্রশংসিত। ইভিএমের মাধ্যমে ভোট গ্রহণে কারচুপি করার সুযোগ থাকবে না। সাতক্ষীরা-২ আসনের সাধারণ ভোটারদের সচেতন করতে জেলা আওয়ামী ও ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’

প্রসঙ্গ, সোমবার (২৬ নভেম্বর) সন্ধ্যায় নির্বাচন কমিশন ভবনে দৈব চয়নের ভিত্তিতে নির্ধারিত আসনগুলো থেকে ছয়টি আসন লটারির মাধ্যমে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট গ্রহণের জন্য নির্বাচত করা হয়। লটারিতে ঢাকা-৬, ঢাকা-১৩, চট্টগ্রাম-৯, খুলনা-২, রংপুর-৩ এর পাশাপাশি সাতক্ষীরা-২ আসন নির্বাচিত হয়।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)