কেন হারিয়ে যাচ্ছে কৌতুক অভিনেতার চরিত্র
অনেকদিন ধরেই খারাপ সময় পার করছে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র। যে দেশে এক সময় ১৩ শতাধিক প্রেক্ষাগৃহ ছিলো, ছিলো প্রেক্ষাগৃহে দর্শকের ভীর। অপরদিকে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশনের প্রতিটি ফ্লোর তখন ছিলো এ্যাকশন, লাইট, ক্যামেরা শব্দে মুখর।
এখন এসবই কালের অতীত। প্রেক্ষাগৃহের সংখ্যা এখন তিনশ’র নিচে দাঁড়িয়েছে। যা আছে সেগুলোতেও আর আগের মত দর্শক দেখা যায় না। এফডিসিতেও নেই চলচ্চিত্রের শুটিংয়ের সেরকম ভীর। সেখানকার বেশিরভাগ ফ্লোরগুলো এখন বেসরকারি টেলিভিশনের কাছে ভাড়া দেয়া। চলচ্চিত্রের শুটিংয়ের চাপ না থাকায় কর্তৃপক্ষ সেগুলোকে ভাড়া দিতে বাধ্য হয়েছেন বলে যানা যায়।
কিন্তু চলচ্চিত্রের সোনালি দিনগুলো কালের গর্ভে হাড়িয়ে গেল কেন? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজলে অনেকগুলো কারণই সামনে আসে। একটি চলচ্চিত্র নির্মাণে যেমন প্রযোজন হয় একজন দক্ষ পরিচালক, একটি ভালো গল্প, উন্নত প্রযুক্তি ও প্রযোজনীয় বাজেট। অপরদিকে গল্পের প্রতিটি চরিত্রকে বাস্তবে রুপ দিতে প্রযোজন মানসম্পন্ন নায়ক, নায়িকা ও খলনায়কের পাশাপাশি কৌতুক অভিনেতা একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
এই কৌতুক অভিনেতারই সিনেমা দর্শকদের বিনোদনের খোরাকের সিংহভাগ পূরণ করে থাকেন। এই সময়ের চলচ্চিত্রগুলোতে কৌতুক অভিনেতার চরিত্র দেখা যায় না বললেই চলে, কিন্তু কেন?
জানতে চেয়েছিলাম বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সভাপতি মুশফিকুর রহমান গুলজারের কাছে, তিনি বলেন, ‘এখন আগের মত চলচ্চিত্র নির্মাণ হয় না। এর প্রধাণ কারণ হচ্ছে, প্রযোজকের সংকট। আসলে টাকা ছাড়া চলচ্চিত্র হবে কিভাবে। এরপর রয়েছে ভালো গল্পের অভাব, বেশিরভাগ গল্পগুলো একজনকে কেন্দ্র করে লেখা হয়। এছাড়া দিলদারের মৃত্যুর পর থেকে টেলিসামাদও অসুস্থ। যারা আসছে তারা কেউ এই দুই শিল্পীর জায়গাটা পূরণ করতে পারেনি। ফলে দূর্বল হচ্ছে চলচ্চিত্রের মান।’
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সভাপতি মুশফিকুর রহমান গুলজারের সঙ্গে একমত পোষণ করেন তিনবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রাপ্ত নায়িকা সাদিকা পারভীন পপি। তিনি বলেন, ‘চলচ্চিত্রে যখন প্রবেশ করেছি তখন ১৩ শতাধিক প্রেক্ষাগৃহ ছিলো, বছরে শতাধিক চলচ্চিত্র নির্মাণ হতো। সেই চলচ্চিত্রগুলোতে দর্শকপ্রিয় নায়ক-নায়িকার পাশাপাশি মা-বাবার চরিত্রে কাজ করতেন শক্তিমান অভিনেত্রা অভিনেত্রীরা, তারে বিপরীতে থাকতেন বাঘা বাঘা খলনায়ক ও বিনোদনের খোরাক যোগাতে দিলদার ও টেলিসামাদের মত কৌতুক অভিনেতারা। এখন সেই চিত্র পাল্টে গেছে। আমাদের অনেক সিনিয়র শিল্পীকে আমরা হারিয়েছি, কিন্তু পরবর্তীতে সেই জায়গাটা ঠিক ওভাবে পূরণ হয়নি। এর অন্যতম হচ্ছে কৌতুক অভিনেতার সংকট।’
কিন্তু মুশফিকুর রহমান গুলজার ও পপির সঙ্গে দ্বিমত করলেন শীর্ষস্থানীয় চলচ্চিত্র প্রোযোজনা প্রতিষ্ঠান জাজ মাল্টিমিডিয়ার কর্ণধার আব্দুল আজিজ। তার কথায়, ‘এখন চলচ্চিত্রের ধরণ পরিবর্তন হয়েছে। বেশিরভাগ চলচ্চিত্র বাস্তব গল্প অবলম্বনে নির্মাণ হয়। এছাড়া দর্শক আর আগের মত ভরামি দেখতে পছন্দ করেন না। তাই এখন গল্প ও চিত্রনাট্য তৈরির সময়েই ওই চরিত্রগুলোকে বাদও দেয়া হয়।’