বিরোধী জোটে বিএনপির ট্রাম কার্ড জামায়াত!
ঐক্যফ্রন্টের তিন দল একাদশ জাতীয় নির্বাচনে বিএনপির কাছে ১৮৬টি আসন দাবি করেছে। এরমধ্যে ড. কামাল হোসেনের গণফোরাম চেয়েছে ৮৬টি, আ স ম রবের জেএসডি ৪৫টি ও নাগরিক ঐক্য ৩৫ টি। তবে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ কয়টি আসন দাবি করেছে তা জানা না গেলেও এ দলটিসহ মোট চার দলকে ২৫ থেকে ৩৫টি আসন ছাড়তে পারে বলে জানা গেছে।
ঐক্যফ্রন্ট গঠনের আগে নেতারা জামায়াতকে না রাখার কথা বললেও কৌশলে রয়েই গেছে দলটি। নির্বাচনী মাঠে তারা বড় ধরণের ফ্যাক্ট। ভোট ব্যাংক আর অনুগত কর্মী বাহিনীই এ জোটের অন্যসব দল থেকে এগিয়ে থাকছে বিতর্কিত দলটিকে। এ জন্যই প্রথমে আপত্তি তুললেও পরে আর সমস্যা হয়নি কারোর।
আসন ভাগাভাগিতে কৌশলী জামায়াতকে নিয়ে শঙ্কায় ঐক্যফ্রন্ট। বিএনপি এবং শরিকদের সঙ্গে কোন ধরনের সমঝোতা ছাড়াই ৬১টি আসনের মনোনয়ন ফরম বিতরণ করেছে দলটি।
বিএনপি ব্যতীত যে আসনগুলোতে প্রার্থী দিতে চায় ঐক্যফ্রন্ট। এমন শক্তিশালী সবগুলো আসনে আগেই প্রার্থী ঘোষণা করেছে জামায়াতে ইসলামী। এ নিয়ে মহাসংকটে পড়েছে ঐক্যেফ্রন্টের শরিকরা।
জামায়াত মনে করছে, জামায়াতের প্রার্থী তৃণমূলে অবস্থান শক্তিশালী। রাজনৈতিক আদর্শ ও সাংগঠনিক শক্তিতে ঐক্যফ্রন্টের যেকোন দলের চেয়ে অধিক জনপ্রিয়। তাছাড়া ভোট ব্যাংকে জামায়াতের পাল্লাই ভারী। ভোটের লড়াইয়ে জামায়াতই ক্ষমতাসীনদের সাথে টিকে থাকতে পারবে বলে তাদের দাবি।
জামায়াতের এমন অবস্থানকে বিপদজনক মনে করছেন ঐক্যফ্রন্টের শরিকরা। বিএনপির কাছে জামায়াতের স্পষ্ট বার্তা তাদের চাহিদা পূরণ না হলে তারা স্বতন্ত্রই নির্বাচন করবে। যদিও বিএনপি জামায়াতকে ১৮ থেকে ২৪ টি আসনের চেয়ে বেশি ছাড় দিতে নারাজ।
তবে এতে দৃশ্যত বিএনপি কিছুটা লাভ হচ্ছে বলে ধারণা রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, জামায়াত যদি ঐক্যফ্রন্টের আসনগুলোতে প্রার্থী দেয়। তাহলে এটা বিএনপির জন্য ভালো। কারণ জামায়াত বা ঐক্যফ্রন্টের শরিকদের যে আসন দিবে বিএনপি সেটা অনেকটাই কম লাগবে। তবে আসন ভাগাভাগি নিয়ে এ দুই জোট সমঝোতায় পৌঁছতে না পারলে সমস্যায় পড়তে পারে বিরোধী এ জোট।
সংশ্লিষ্ট সূত্রের মত, জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বিএনপি মহাসচিবের নেতৃত্বে স্থায়ী কমিটির নেতাদের একাধিকবার অঘোষিত বৈঠক হয়েছে। তবে এখনও পর্যন্ত কোনো সুনির্দিষ্ট সমাধানে আসতে পারেনি তারা। এর আগে জামায়াতকে ১৮টি আসনে ধানের শীষ প্রতীক দিতে সবুজ সংকেত দিয়েছিল বিএনপি। কিন্তু তাতে মন ভরেনি দলটির। এখন জামায়াতকে বিএনপি একটি ঝুলন্ত সিদ্ধান্ত জানিয়েছে সর্বোচ্চ ১৮-২৪ আসনে জামায়াত স্বতন্ত্র নির্বাচন করলে এই আসনগুলোতে বিএনপি কোনো প্রার্থী দেবে না। তবে ধানের শীষ নিয়ে নির্বাচন করারও গুঞ্জন রয়েছে।
তবে এগুলোতে ঐক্যফ্রন্টের অন্য কোনো ব্যক্তি থাকবে কিনা বিষয়টি এখনো স্পষ্ট করেননি। এগুলো জানতে আরও ৫-৬ দিন অপেক্ষা করতে হবে।
এ নিয়ে ঐক্যফ্রন্টের এক শীর্ষ নেতার সঙ্গে আলাপ হয় প্রতিবেদকের। তিনি বলেন, আমরা শুধু এই সরকারের পরিবর্তে এক হয়েছি। কিন্তু সবারই রাজনৈতিক আদর্শ আছে। এ ক্ষেত্রে বিএনপিও অবশ্যই অনেক সমীকরণ হিসেব করবে। এ ক্ষেত্রে আমাদের (ঐক্যফ্রন্টের) শরিকদের ঠেকাতে জামায়াতকে মাঠে রাখাও বিএনপির কৌশল হতে পারে। আর আমাদেরও একটু জামায়াত নিয়ে শঙ্কা আছে। জোট হলেও আমাদের আদর্শ কখনোই জামায়াতের সঙ্গে যায় না।
আমাদের অধিকাংশ প্রার্থীই জাতীয় ব্যক্তি কিন্তু তৃণমূলে ততটা পরিচিত মুখ নয়। সে ক্ষেত্রে জামায়াত এখন ফ্রন্টের শরিকদের বড় বাধা।
এদিকে, জামায়াত ৬১ আসনে স্বতন্ত্র ফরম তুলেছে। বিএনপির কাছ থেকে ১৮-২৪ আসনে ছাড় পেতে পারে। লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমেদ বীরবিক্রমের চাওয়া ৪টি আসন। দুটি আসন বিএনপির বিবেচনায় রয়েছে। বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল ইব্রাহিম ১টি আসন বিএনপির কাছ থেকে পাচ্ছেন। বিজেপি চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থও ১ টি আসন পাচ্ছেন বলে একটি সূত্র জানায়। আর জোটের অন্যরা এখনো বিবেচনাধীন।