নির্বাচনী প্রচারণা চলে বঙ্গভবনেও!
রাষ্ট্রপতির সরকারি বাসভবন বঙ্গভবন থেকে দলীয় কার্যক্রম ও নির্বাচনী প্রচারণা চালানো হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছে বিএনপি। সেই সঙ্গে নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিব, প্রধানমন্ত্রীর মূখ্য সচিব ও জননিরাপত্তা বিভাগের সচিবের বিরুদ্ধে পক্ষপাতমূলক আচরণের অভিযোগও তুলেছে দলটি। এসব কারণে নির্বাচনে লেভেল প্লেযিং ফিল্ড হচ্ছে না জানিয়ে নির্বাচন কমিশনকে অতিদ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের অনুরোধ জানানো হয়েছে।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলালের নেতৃত্বে বিএনপির তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল বৃহস্পতিবার বিএনপির ১৩টি অভিযোগ সম্বলিত একটি চিঠি হস্তান্তর করে ইসিতে। প্রতিনিধি দলের অপর দুই সদস্য হলেন- খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা বিজন কান্তি সরকার ও বিএনপির প্রেসউইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান।
অভিযোগে বলা হয়, রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সন্তান, বর্তমান সংসদ সদস্য ও আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন প্রত্যাশী রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক রাষ্ট্রপতির সরকারি বাসভবন বঙ্গভবনকে দলীয় কার্যক্রম ও নির্বাচনী প্রচারণার কাজে ব্যবহার করেছেন। তৌফিকের নেতৃত্বে বঙ্গভবনে দলীয় সভা ও আপ্যায়ন অনুষ্ঠান এর আগে অনুষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু তফসিল ঘোষণার পর বঙ্গভবনকে দলীয় কার্যক্রমে ব্যবহার করা যায় না। এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছে বিএনপি।
বিএনপি অভিযোগ করে বলছে, নির্বাচনের লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করার দায়িত্ব সরকার ও নির্বাচন কমিশনের। কিন্তু চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে চট্টগ্রামের বিভাগীয় রিটার্নিং কর্মকর্তা (জেলা প্রশাসক) ও পুলিশ সুপারদের নিয়ে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেছেন ইসি সচিব, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ও জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব।
এই বৈঠককে আচরণবিধির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন অভিহিত করে ইসিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে আহ্বান জানিয়েছে বিএনপি। দলটির অভিযোগ, মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ ও জমাদানের জন্য বিএনপি কার্যালয়ের সামনে গণজমায়েতে পুলিশ হামলা চালিয়েছে ও নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করেছে। কিন্তু ইসি এ বিষয়ে নির্বিকার ভূমিকা পালন করেছে। এ ঘটনায় ইসিকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছে বিএনপি।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে তৈরি প্রামাণ্যচিত্র এবং প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়াতে তাকে নিয়ে তৈরি বিজ্ঞাপন প্রচার নিয়েও আপত্তি জানিয়েছে বিএনপি। এছাড়া, সিটি করপোরেশন ও সরকারি মালিকানাধীন ইলেকট্রনিক ডিসপ্লে বোর্ড ও ডিজিটাল বিলেবোর্ডের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের ছবি ব্যবহার করে বিভিন্ন প্রচারণা বন্ধেরও দাবি জানিয়েছে দলটি।
বিএনপির পক্ষ থেকে জমা দেয়া ১৩ দফা দাবিতে আরো বলা হয়- একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে পুলিশ বিভাগের দলবাজ ও রাজনৈতিক মতাদর্শের অনুসারী কর্মকর্তাদের প্রত্যাহার করতে হবে; নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে থানা পুলিশের দেয়া তথ্য অনুযায়ী ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেয়া যাবে না; এক থানা বা নির্বাচনী এলাকায় কর্মরতদের নির্বাচনি কর্মকর্তা হিসেবে অন্য থানা বা নির্বাচনী এলাকায় পদায়ন করতে হবে; জনপ্রশাসনের দলবাজ ও রাজনৈতিক মতাদর্শের অনুসারী কর্মকর্তাদের প্রত্যাহার করতে হবে; পুলিশ বিভাগেরও দলবাজ ও রাজনৈতিক মতাদর্শের অনুসারী কর্মকর্তাদের প্রত্যাহার করতে হবে; গণহারে আওয়ামীপন্থি কর্মকর্তা ও শিক্ষকদের নির্বাচন কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ বন্ধ করতে হবে।
পরে মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল সাংবাদিকদের বলেন, খুলনার হরিণটানা থানায় পলিশের বিশেষ শাখা থেকে নির্বাচনে প্রিজাইডিং ও পোলিং অফিসারদের যে তালিকা তৈরি করা হয়েছে, তাতে থাকা ৮৫ ভাগ কর্মকর্তাই আওয়ামী লীগের অনুসারী। গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এখনও মোবাইল নেটওয়ার্ক ও ইন্টারনেট সংযোগ সম্পূর্ণরুপে বিচ্ছিন্ন। এসব তৎপরতার মাধ্যমে নির্বাচনের লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির সুযোগ বন্ধ করা হচ্ছে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, বিএনপির পক্ষ থেকে বিভিন্ন বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে দলীয় নেতাকর্মীদের মামলা ও হয়রানির তথ্য ইসিতে দেয়া হয়েছে। সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতেই পুলিশ সদস্যদের বদলির দাবি জানানো হয়েছে। কিন্তু ইসির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, আমরা নাকি ঢালাওভাবে অভিযোগ করছি। আমরা ঢালাওঅভিযোগ করি না। আজ লিখিতভাবে সব তথ্যপ্রমাণ দিয়ে গেলাম।