সুন্দরবনে ২১নভেম্বর থেকে রাসমেলা শুরু
সুন্দরবনের পূর্ব বন বিভাগের দুবলার চরে আগামী ২১ নভেম্বর থেকে শুরু হচ্ছে দুলার মেলা। কিন্তু, আসলেই দুবলার মেলা নামে পরিচিতি থাকলেও এটি মূলত সনাতন ধর্মাবলম্বীদের রাস পূজা। তাই এ মেলার আরেক নাম রাসমেলা। যা আগামী ২১নভেম্বর থেকে শুরু হয়ে চলবে ২৩শে নভেম্বর পর্যন্ত। ইতিমধ্যে মেলায় যাওয়ার জন্য দর্শনার্থী ও পূনার্থীরা প্রস্তুতি নিচ্ছে।বেশ কয়েক বছর ধরে বন বিভাগের কঠোর অনুমতিসহ তাদের বেঁধে দেওয়া নির্দিষ্ট নৌ রোড মাফিক এ মেলায় যাওয়া এবং আসার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। মূলত মেলাটির দীর্ঘদিন ধরে আয়োজক ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা মেজর জিয়া। তিনি এবার মৃত্যুবরণ করায় তার ভাই এস,এম কামাল হোসেন এবার মেলাটির সার্বিক তত্ত্বাবধানে থাকবেন বলে বিভিন্ন সূত্রে এ তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে। দুবলার চর বাংলাদেশ অংশের সুন্দরবনের দক্ষিণে, কটকার দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং হিরণ পয়েন্টের দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত একটি দ্বীপ যা চর নামে হিন্দুধর্মের পুণ্যস্নান, রাসমেলা এবং হরিণের জন্য বহুল পরিচিত। কুঙ্গা ও মরা পশুর নদের মাঝে এটি একটি বিচ্ছিন্ন চর। এই চরের মোট আয়তন ৮১ বর্গমাইল। আলোরকোল, কোকিলমনি, হলদিখালি, কবরখালি, মাঝেরকিলা, অফিসকিলা, নারকেলবাড়িয়া, ছোট আমবাড়িয়া, মেহের আলির চর এবং শেলার চর নিয়ে দুবলার চর গঠিত।দুবলার চর মূলত জেলে গ্রাম। মাছ ধরার সঙ্গে চলে শুঁটকি শোকানোর কাজ। বর্ষা মৌসুমের ইলিশ শিকারের পর বহু জেলে চার মাসের জন্য সুদূর কক্সবাজার, চট্টগ্রামসহ, বাগেরহাট, পিরোজপুর, খুলনা, সাতক্ষীরা থেকে ডেরা বেঁধে সাময়িক বসতি গড়ে সেখানে। মেহেরআলীর খাল, আলোরকোল, মাঝেরচর, অফিসকেলা, নারিকেলবাড়িয়া, মানিকখালী, ছাফরাখালী ও শ্যালারচর ইত্যাদি এলাকায় জেলে পল্লী স্থাপিত হয়। এই চার মাস তারা মাছকে শুঁটকি বানাতে ব্যস্ত থাকেন। এখান থেকে আহরিত শুঁটকি চট্টগ্রামের আসাদগঞ্জের পাইকারী বাজারে মজুদ ও বিক্রয় করা হয়। সুন্দরবনের পূর্ব বিভাগের সদর দপ্তর বাগেরহাট থেকে মাছ সংগ্রহের পূর্বানুমতি সাপেক্ষে বহরদার ও জেলেরা দুবলার চরে প্রবেশ করে থাকেন। দুবলার চর থেকে সরকার নিয়মিত হারে রাজস্ব পেয়ে থাকে। প্রতি বছর বিএলসি বা বোট লাইসেন্স সার্টিফিকেট, ডিএফসি বা ডেইলি ফুয়েল (জ্বালানি কাঠ) কন্যাম্পশন ইত্যাদি প্রক্রিয়া বন বিভাগকে রাজস্ব প্রদান করে মৎস্য ব্যবসায়ীগণ সুন্দরবনে ঢোকার অনুমতি পান। এছাড়া আহরিত শুঁটকি মাছ পরিমাপ করে নিয়ে ফিরে আসার সময় মাছভেদে প্রদান করেন নির্ধারিত রাজস্ব। প্রতি বছর কার্ত্তিক মাসে (খ্রিস্টীয় নভেম্বর) হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের রাসমেলা এবং পুণ্যস্নানের জন্যও দ্বীপটি বিখ্যাত। যদিও বলা হয়ে থাকে, ২০০ বছর ধরে এ রাসমেলা হয়ে চলেছে , তবে জানা যায়, ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দে হরিচাঁদ ঠাকুরের এক বনবাসী ভক্ত, নাম হরিভজন (১৮২৯-১৯২৩), এই মেলা চালু করেন। প্রতিবছর অসংখ্য পুণ্যার্থী রাসপূর্ণিমাকে উপলক্ষ করে এখানে সমুদ্রস্নান করতে আসেন। দুবলার চরে সূর্যোদয় দেখে ভক্তরা সমুদ্রের জলে ফল ভাসিয়ে দেন। কেউবা আবার বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে ভজন-কীর্তন গেয়ে মুখরিত করেন চারপাশ। দুবলার চরের রাসমেলায় স্থানীয় লোকজন ছাড়াও দূর-দূরান্তের শহরবাসী এমনকি বিদেশি পর্যটকেরাও স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নিয়ে থাকেন। তিন দিনব্যাপী এ মেলায় অনেক বিদেশী পর্যটকেরও সমাগম হয়। বুড়িগোয়ালিনী স্টেশন কর্মকর্তা কে এম কবীর হোসেন জানান, দুবলার চরে রাস মেলা যেতে এবার ৩টি রুট নির্ধারণ করা হয়েছে। তন্মধ্যে বুড়িগোয়ালিনী থেকে কোবাতক হয়ে বাটুলিয়া নদী, বোয়াল নদী, পাটকোশটা খাল হয়ে হংসরাজ নদী দিয়ে দুবলার চর, ২য় কদমতলা থেকে ইছামতি নদী, দোবেকী, আড়পাংগাশিয়া ও কাকা দোবেকী হয়ে দুবলার চর এবং ৩য় কৈখালী থেকে মাদার গাং, কোবরা খালী খাল, ভারানী খাল, আড়পাংগাশিয়া ও কাকাদোবেকী হয়ে দুবলার চর। তিনি আরও জানান, চোরা শিকারীদের হরিন শিকার রোধে কঠোর নজরদারির ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে। সাতক্ষীরা রেঞ্জের আওতায় বুড়িগোয়ালিনী, কৈখালী, মুন্সিগঞ্জ, কদমতলা ও হরিনগর থেকে ২শতাধিক ট্রলার রাস মেলা উপলক্ষ্যে যাত্রা করবে। এসময়ে ৭০-৮০ হাজার পূর্ণাথী রাস মেলা পুজা উদযাপন করবে। বনবিভাগ, র্যাব, বিজিবি ও কোস্ট গার্ডের সমন্বয়ে কঠোর নিরাপত্তা বলায় গড়ে তোলা হবে।