খেজুর গাছ প্রস্তুত করতে ব্যস্ত সময় পার করছে সাতক্ষীরার গাছিরা

হেমন্তের শেষেই শীতঋতুর আগমন।হেমন্তের ফসল ঘরে উঠার পরপরই প্রকৃতির মাঝে এক ধরনের শূন্যতা বিরাজ করে, সেই শূন্যতার মাঝে আসলেই শীতঋতুর আগমন ঘটে। শীতের কনকনে ঠাণ্ডায় বাঙালির প্রথমেই স্মৃতিপটে ভেসে উঠে যেন খেজুর গাছের মিষ্টি রস।আবহমান বাংলার চাষিরা সে রসে নিজেকে ডুবিয়ে নেয়ার নান্দনিক দৃশ্য না দেখলে বাঙালির ইতিহাস, ঐতিহ্য একেবারেই বৃথা।

বাংলার জনপ্রিয় তরুবৃক্ষ খেজুর গাছের সঙ্গে ভূমিহীন চাষি, প্রান্তিক চাষি বা দারিদ্র ক্লিষ্ট মানুষের জন্য এই সময়টা হয় অনেক আনন্দদায়ক। শীত আমেজেই প্রকৃতির মাঝ হতে খেজুর রস সংগ্রহের জন্য গাছিরা যেন চষে বেড়ায় সকাল, বিকেল এবং সন্ধ্যার মেঠো পথ ধরে, তার বহিঃপ্রকাশে চমৎকার নান্দনিকতার সৃষ্টি কিংবা অপরূপ দৃশ্য পরিলিক্ষত হয়।

এদিকে শীত শুরুর সাথে সাথে খেজুর গাছ প্রস্তুত করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন সাতক্ষীরার গাছিরা। অনেকেই খেজুর গাছ প্রস্তুত করে রস আহরণ শুরু করেছে।

কালিগজ্ঞ উপজেলার রতনপুর ইউনিয়নের গ্রামের গাছি সামাদ আলী জানান, প্রায় এক সপ্তাহ ধরে খেজুর গাছ প্রস্তুত করছেন তিনি। খেজুর গাছ থেকে রস আহরণের জন্য দা ও কোমরে দড়ি বেঁধে খেজুর গাছে উঠে নিপুণ হাতে গাছ চাছা-ছেলা করতে হয়। পরে ছেলা স্থানে নল বসানো হয়। সেই নল বেয়ে নেমে আসে সুস্বাদু খেজুরের রস। কাকডাকা ভোর থেকে সকাল ৮-৯টা পর্যন্ত গাছ থেকে রস সংগ্রহ করে দুপুর পর্যন্ত রস জাল দিয়ে গুড় তৈরি করা হয়। গাছ থেকে রস সংগ্রহের সময় মৌমাছির কামড় ও সইতে হয়।

তিনি আরও বলেন ,এ বছরর প্রতিটি খেজুর গাছ প্রস্তুতের জন্য ৬০ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে। প্রতিদিন ১০-১৫টি গাছ প্রস্তুত করা সম্ভব হয়।

আশাশুনি উপজেলার শোভনালী ইউনিয়নের গাছি মো: লিয়াকাত আলী জানান,আগাম যে রস হয় তাকে বলা হয় নলিন গুড় ।এ গুড়ের দাম একটু বেশি দাম পাওয়া যায় । তাই চেষ্টা করছি যত তাড়াতাড়ি গাছ প্রস্তুত করে রস বের করা যায় ।

পাটকেলঘাটা এলাকার গাছি মুজিবর গাজী জানান, শীতকালে আগে শহর থেকে মানুষ দলে দলে ছুটে আসতো গ্রাম বাংলার খেজুর রস খেতে। সন্ধ্যাকালীন সময়ে গ্রামীণ পরিবেশটা খেজুর রসে মধুর হয়ে উঠতো। রস আহরণকারী গাছিদের প্রাণচাঞ্চল্য লক্ষ্য করা যেত সে সময়ে। এখন আর সেটি লক্ষ করা যায় না।

সাতক্ষীরা গুড় ব্যবসায়ী পলাশ মন্ডল বলেন,আমাদের জেলার গুড়ের চাহিদা রয়েছে অন্যান্য জেলাতেও । আমরা এখন থেকেই গুড় কেনার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি । এবং অন্যান্য জেলার ক্রেতারা এখন থেকেই গুড়ের জন্য অর্ডার দিচ্ছে।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)