বাংলাদেশের ভৌতিক স্থান
ভূত বলে কিছু না থাকলেও এ বিষয়ে মানুষের কৌতূহলের কমতি নেই! বিজ্ঞান যেখানে ভূতের উপস্থিতি অস্বীকার করছে সেখানে মানুষের ভূত-প্রেতের উপর আগ্রহ বাড়ছে। অনেকের জীবনেই ভৌতিক কোন না কোন ঘটনার অভিজ্ঞতা রয়েছে! পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই ছড়িয়ে রয়েছে ভূতুরে স্থান। আর ভূতুড়ে জায়গা বলতে ‘ক্লাব ৯৯’ বা ‘কিউবান হাউজ’ এর কথাই সবারই মনে পরে। কিন্তু আমাদের দেশের বেশ কিছু স্থান রয়েছে যেগুলো লোকমুখে ভৌতিক স্থানের তকমা পেয়েছে। যেসব স্থান সম্পর্কে আমাদের অনেকেরই অজানা। নিচে এমনই কিছু স্থানের কথা উল্লেখ করা হল-
১. ঝালকাঠির জমিদার বাড়ি: বরিশালের ঝালকাঠি জেলার কৃত্তিপাশা নামক স্থানে একটি ঐতিহাসিক জমিদার বাড়ি রয়েছে। এর সঠিক সময়কাল সম্পর্কে কেউ অবগত নয়। শত বছরের পুরানো এ রাজবাড়িতে দিনের বেলাও গা ছমছমে। এ জমিদার বাড়ি নিয়ে অনেক রটনা রয়েছে। বিশেষ করে এর “বায়জি কক্ষ” নিয়ে। রাতে রাজবাড়ি থেকে নাচের শব্দ শোনার দাবি করেন অনেকে। বলা হয়ে থাকে তৎকালীন জমিদার জোর করে মেয়েদেরকে ধরে অত্যাচার করত। অতিরিক্ত অত্যাচারের ফলে তারা মারাও যেত।
২. নো ম্যানস ল্যান্ডের রহস্য: বাংরাও নামের গ্রামটি আমাদের কাছে একেবারেই অজানা। গ্রামটা বাংলাদেশ-বার্মা নো ম্যানস ল্যান্ডে। এখানে কিছু অদ্ভুত ঘটনা রয়েছে যার কোনো ব্যাখা পাওয়া যায়নি। দিনের বেলাতে বার্কিং ডিয়ার আর ভাল্লুকের ডাকের শব্দ ভেসে আসে। কাছের মুরং গ্রামের আদিবাসীদের মতে প্রতিবছর নাকি (দিনটা নির্দিষ্ট না) হঠাৎ করে বনের ভিতর রহস্যময় কিছু শব্দ শুনতে পায় তারা। শিকারী এবং কাঠুরীরা আওয়াজটা শুনলেই সবাই যে যার মত দৌড়ে বন থেকে পালিয়ে আসে। কিন্তু প্রতিবছরেই কয়েকজন পিছে পড়ে যায় বা যে সব কাঠুরে একা থাকে তারা বের হতে পারে না। যারা পিছনে পড়ে বা দলবদ্ধভাবে থাকতে না পারে তারা আর ফিরে আসে না। কয়েকদিন পরে বনে তাদের মৃত দেহ পাওয়া যায়। শরীরে আঘাতের চিহ্ন নেই। শুধু চেহারায় ভয়ঙ্কর আতঙ্কের ছাপ। এ রহস্যময় মৃত্যুর কোন ব্যাখা মেলেনি।
৩. আলিয়াপুর: চুয়াডাঙ্গার আলিয়াপুর নামক গ্রামে নাকি প্রতি আমাবস্যায় রাত ১২-৩টা পর্যন্ত একদল কুকুর দলবেঁধে গ্রামটি ঘিরে চক্কর দেয়। অনেকেই সেই কুকুরের দলকে দেখতে পেয়েছেন। আশ্চর্যের বিষয় হলো, তারা শুধুমাত্র প্রতি অমাবস্যার রাতেই উপস্থিত হয়। কয়েক যুবক মিলে একবার রাত করে তাদের দেখার জন্য প্রস্তুতি নেয়। তাদের মাঝে ২ জন কুকুরের কামড়ে মারাত্মক ভাবে আহত হয়। ঘটনার পর যুবকরা স্বীকারোক্তি দেয় যে, সেসব কুকুরগুলো কালচে বর্ণের ছিলো সে কারণে অন্ধকারে তাদের স্পষ্ট দেখা যায়নি। তারা একটা ছন্দ মিলিয়ে এক লাইনে হাঁটছিলো এবং তাদের প্রত্যেকের চোখ থেকেই এক প্রকার নীলচে আভা বের হচ্ছিল।
৪. মিষ্টির দোকান ও জ্বিন: পুরান ঢাকার কিছু মিষ্টির দোকান রয়েছে যেখান থেকে কয়েকদিন পর পর রাতের বেলায় কিছু মানব আকৃতির লোক এসে প্রচুর পরিমানে মিষ্টি কিনে নিয়ে যায়। তারা যখনই দোকানে ঢুকে সেই দোকানের মালিককে লাইট নিভিয়ে দিতে বলে। দোকানিরা অনেকেই এই বিষয়টি জানে বিধায় তারাও আপত্তি করেনা। অন্ধকারে তারা আসে, অন্ধকারেই চলে যায়। এই লোকগুলো আকারে অনেক লম্বা এবং তাদের চেহারা আজ পর্যন্ত কেউ ভালো করে দেখতে পারেনি। ধারণা করা হয়, এরা জ্বিন। পুরান ঢাকার বেশিরভাগ মিষ্টির দোকানদার তাদের বিষয়টি জানেন। তবে যেসব দোকানদার তাদেরকে দেখেছেন তারাও তাদের সম্পর্কে বা তাদের চেহারা নিয়ে কিছু বলতে চায়নি।
৫. লালবাগ কেল্লার সুড়ঙ্গ: লালবাগ কেল্লার নীচ দিয়ে অনেকগুলো সুড়ঙ্গ রয়েছে। যেগুলো জমিদার আমলের। জমিদাররা বিপদ দেখলে সেসব পথে পালিয়ে যেতো। তেমনই একটা সুড়ঙ্গ রয়েছে, যার ভেতরে কেউ প্রবেশ করলে সে আর ফিরে আসেনা। এর কারণ উন্মোচনের জন্য পরীক্ষামূলকভাবে ২টা কুকুরকে চেইনে বেঁধে সেই সুড়ঙ্গে নামানো হয়েছিলো। চেইন ফেরত আসলেও পরবর্তীতে কুকুর দুটো ফিরে আসেনি। বলা হয়ে থাকে এই সুড়ঙ্গের ভেতরে জ্বিনদের বসবাস। তারা চায় না যে এখানে কেউ সেখানে প্রবেশ করুক।
৬. সাঁওতাল উপজাতির উপসনা: বাংলাদেশের সাঁওতাল উপজাতিরা অনেক দেব-দেবীর পূজা করে। এসব দেব দেবীর মাঝে কিছু আছে যারা অপদেবতা। তেমনি এক ধরণের অপদেবতার পূজা করে সাঁওতালরা যাদের “গদ্রবঙ্গা” বলা হয়। এসব দেবতারা সাইজে ২-৩ ফিট হয়। চেহারাও ছোট বাচ্চাদের মতো। ওরা বিভিন্ন সাঁওতাল পরিবারে পালিত হয়। তাদেরকে লালন, পালন, আর পূজা দেয়ার কারণ হলো, এসব দেবতারা যেসব পরিবারে পালিত হয় তাদেরকে অনেক ধনী করে দেয়। তারা অন্য বাড়িঘর থেকে স্বর্ণ চুরি করে তা নিজ পালিত ঘরের মালিককে দেয়। তবে, এর বিনিময়ে তারা যা দাবি করে তা খুবই ভয়ঙ্কর। স্বর্ণ দেয়ার বদলে এসব অপদেবতারা যে বাড়িতে পালিত হয়, সেই বাড়ির মালিকের ছোট ছোট ছেলে সন্তানগুলোকে চায়। তারা এইসব ছোট ছেলেদেরকে মেরে ফেলে (কথিত আছে, খেয়ে ফেলে, কারণ সেসব ছোট বাচ্চাদের আর পাওয়া যায়না)। আর বাড়ির মালিক যদি তাদের এই চাহিদা পূরণ করতে না পারে, তাহলে “গদ্রবঙ্গা”রা ঐ পরিবারকে ধ্বংস করে দেয়। এসব জানার পরও এখনো সাঁওতাল অনেক পরিবারই ধনী হবার লোভে এইসব অপদেবতা পালন করে আসছে।
৭. খ্রিস্টান বাড়ি: ঢাকার তেজগাঁও এর মনিপুরীপাড়া এলাকায় একটা পুরনো খ্রিস্টান বাড়ি রয়েছে। এই বাড়ির ভাড়াটিয়ারা বিভিন্ন সময়ে অদ্ভুত বা ভূতুড়ে কাণ্ড-কারখানার সম্মুখীন হন। গভীর রাতে (রাত১-২টার দিকে) বাড়ির উঠানের দোলনায় কাউকে দুলতে দেখা যায়। ঘটনাটি দেখেছেন এমন লোকের সংখ্যা কম নয়। এছাড়াও বাড়ির ছাদে নাকি গভীর রাতে কারা হইচই করে। কিন্তু তৎক্ষণাৎ ছাদে গেলে আর কারও দেখা মেলে না। এই বাড়িটি ঘিরে লোক মনে কৌতূহলের শেষ নেই। শোনা যায়, উক্ত বাড়িওয়ালার মেয়ে প্রায় ১৬ বছর আগে গলায় ফাঁস দিয়ে নিজ ঘরে মারা যায়। মেয়েটি মানসিকভাবে অসুস্থ ছিলো। এই আত্মহত্যার পর থেকেই এমন অদ্ভুতুড়ে কার্যকলাপ শুরু হয়।
৮. বগা লেক:
রুপসী বগা লেক নামেও পরিচিত এই লেকটি। বম ভাষায় বগা মানে ড্রাগন। বমদের রূপকথা অনুযায়ী অনেক আগে এই পাহাড়ে এক ড্রাগন বাস করতো। ছোট ছোট বাচ্চাদের ধরে খেয়ে ফেলতো। গ্রামের লোকেরা ড্রাগনকে হত্যা করলে তার মুখ থেকে আগুন আর প্রচন্ড শব্দ হয়ে পাহাড় বিস্ফোরিত হয়।
রুপকথার ধরণ শুনে মনে হয়, এটা একটা আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুতপাত। উপজেলা পরিষদের লাগানো সাইনবোর্ডে সরকারিভাবে এ রহস্যের কথা লেখা। এখনো এর গভীরতা কেউ বলতে পারেনা। ইকো মিটারে ১৫০+ পাওয়া গেছে। প্রতিবছর রহস্যময় ভাবে এ লেকের পানির রঙ কয়েকবার পাল্টে যায়। যদিও কোন ঝর্ণা নেই তবুও লেকের পানি পরিবর্তন হলে আশপাশের লেকের পানিও পরিবর্তন হয়। হয়তো আন্ডার গ্রাউন্ড রিভার থাকতে পারে। রহস্য ভেদ হয়নি এখনো। এখানে যারা ঘোরাঘুরি করতে আসে তারা অনেকেই নৌকায় থাকাকালীন নৌকা অদ্ভুতভাবে ঘুরতে শুরু করে,অনেক সময় ডুবেও যায়।