সনাতন ধর্মালম্বিদের ভাইফোঁটা
বাঙালি হিন্দুদের আরেকটি জনপ্রিয় উৎসব হচ্ছে ভাইফোঁটা। ভাই-বোনের মধ্যেকার অনিন্দ্য সুন্দর সম্পর্ক ঘিরেই প্রচলিত হয়েছে এই উৎসবটি।
প্রথা অনুযায়ী শুক্লা তিথির দ্বিতীয়াতে ভাইফোঁটা উদযাপিত হয়। পঞ্জিকার হিসেব মতে, কালীপূজার দুইদিন পরে ভাইফোঁটা অনুষ্ঠিত হয়। ‘ভ্রাতৃদ্বিতীয়া’ বা ‘ভাইফোঁটা’ উৎসব কেন করা হয় তার পেছনে অনেক পৌরাণিক ব্যাখ্যা বা কাহিনি রয়েছে। বলা হয়ে থাকে যে, কার্তিক মাসের শুক্লা দ্বিতীয়া তিথিতে যমুনা দেবী তার ভাই যমরাজের মঙ্গলকামনায় আরাধনা করেন; যার পূণ্যপ্রভাবে যমদেব অমরত্ব লাভ করেন। বোন যমুনাদেবীর পূজার ফলে ভাই যমের এই অমরত্ব লাভের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে বর্তমান কালের বোনেরাও এই সংস্কার বা ধর্মাচার পালন করে আসছে।
ভিন্ন এক কাহিনি মতে, একদা প্রবল পরাক্রমশালী বলির হাতে বিষ্ণু পাতালে বন্দি হন। দেবতারা পড়েছেন মহাবিপদে, কারণ কোন মতেই তারা নারায়ণকে বলির কবল থেকে বের করে আনতে পারছেন না। শেষপর্যন্ত এগিয়ে এলেন স্বয়ং লক্ষ্মী। তিনি বলিকে ভাই হিসেবে স্বীকার করেন। সেই উপলক্ষে তাঁর কপালে তিলক এঁকে দেন। ভ্রাতৃত্বের বন্ধন স্বীকার করে বলি লক্ষ্মীকে উপহার দিতে চাইলে লক্ষ্মী চেয়ে নেন ভগবান বিষ্ণুকে। সেই থেকেই ভাইফোঁটা উৎসবের সূচনা।
আরেক সূত্র মতে, এই দিনে নরকাসুর নামে এক দৈত্যকে বধ করার পর যখন কৃষ্ণ তার বোন সুভদ্রার কাছে আসেন, তখন সুভদ্রা তাঁর কপালে ফোঁটা দিয়ে তাঁকে মিষ্টি খেতে দেন। সেই থেকে ভাইফোঁটা উৎসবের প্রচলন হয়। এই সকল পৌরাণিক ব্যাখ্যা বা কাহিনি যাই থাকুক না কেন, বর্তমানে ভাইফোঁটা একটি সামাজিক উৎসব। এই উৎসবে পারিবারিক সম্পর্কগুলো আরও পোক্ত হয়। তাই, ভাইফোঁটার ধর্মীয় গুরুত্ব অপেক্ষা সামাজিক ও পারিবারিক গুরুত্ব অনেক বেশি, যেখানে ভাই-বোনের মধ্যে কার প্রীতি ও ভালোবাসার সম্পর্কটিই মুখ্য। ভাইয়ের মঙ্গলকামনায় ঈশ্বরের কাছে বোনের আকুতি, ভাইয়ের সাফল্য, দীর্ঘায়ু লাভের জন্য বোনের প্রার্থনাই ‘ভাইফোঁটা’কে মহিমান্বিত করেছে।
ভাইফোঁটা এমনই এক উৎসব যা ভাই-বোনের মধ্যেকার ভালোবাসা এবং স্নেহের সম্পর্ক খুব দৃঢ় করে। ভাই-বোনে সারা বছর ঝগড়া-ঝাঁটি থাকলেও, দুজনেই বছরের এই একটি দিনের অপেক্ষায় থাকে। বোনের কাছ থেকে