সাতক্ষীরায় কৃষকদের স্বপ্ন দোল খাচ্ছে আমন ধানের সোনালী শীষে
সাতক্ষীরার বিভিন্ন মাঠে এখন আমন ধানের সোনালী শীষ দোল খাচ্ছে। পোকামাকড় ও বিভিন্ন ধরনের রোগ-বালাইয়ের আক্রমণ ছাড়াই বেড়ে ওঠা সোনালী ধানের শীষে ভরে গেছে মাঠ। দিগন্তজোড়া সোনালী ফসলের মাঠ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে আরও বিকশিত করে তুলেছে। তবে ভালো ফলনের সম্ভাবনা থাকলেও স্বস্তিতে নেই কৃষক। সেচ, কীটনাশক, শ্রম খরচ মিটিয়ে লাভের মুখ দেখতে পারবেন কী না তা নিয়ে কৃষকের মাঝে রয়েছে শঙ্কা।
সাতক্ষীরা জেলা কৃষি বিভাগের হিসেব মতে চলতি বছরে সাতক্ষীরার ৭টি উপজেলায় ৮৪ হাজার ৯৫৭ হেক্টর জমিতে আমন আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে সাতক্ষীরা সদর উপজেলায় ১৮ হাজার ৩৫০ হেক্টর, কলারোয়ায় ১১ হাজার ১৫০ হেক্টর, তালায় ৭ হাজার ৯৫০ হেক্টর , দেবহাটায় ৫ হাজার ২৮০ হেক্টর ,কালিগঞ্জে ১৬ হাজার ৯২০ হেক্টর , আশাশুনিতে ৯ হাজার ১৩০ হেক্টর ও শ্যামনগর উপজেলায় ১৬ হাজার ১৭৭ হেক্টর জমিতে। তবে জেলা সদরসহ প্রত্যেকটি উপজেলায় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশী ধান আবাদ হয়েছে।
এ বছর বৃষ্টি একটু কম হলেও ক্ষেতে পোকামাকড় এবং রোগ-বালাই নেই বললেই চলে। যে কারণে কৃষি বিভাগ আমনের বাম্পার ফলনের আশা করছে। মাঠ ভরা সোনালী ফসল দেখে কৃষকের চোখে-মুখে ফুটে উঠেছে আনন্দের ছোঁয়া। তাদের স্বপ্ন এখন আমন ধানের সোনালী শীষে।
কৃষকরা বলছেন, এর মধ্যে যদি কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ না ঘটে তাহলে এবার আমন আবাদে তারা বেশ লাভবান হবেন। তবে ধানের দাম নিয়ে তাদের শঙ্কাও রয়েছে।
কৃষকরা আরো বলছেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে গত বোরো আবাদ ঠিকমতো ঘরে তুলতে পারেননি তারা। তাই সিংহভাগ কৃষক ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে আমন ধান চাষাবাদ করেছেন। তাছাড়া এ বছর আমন মৌসুমে বৃষ্টি না হওয়ায় সেচের পানি দিয়ে ক্ষেত রক্ষা করতে হয়েছে। এর জন্য বাড়তি শ্রম খরচও গুনতে হয়েছে তাদের। যে কারণে তাদের সকল স্বপ্ন এখন আমন ধানের উপর। তাই মাঠের সোনালী ফসল দেখে হতাশ কৃষককুল অনেকটা আশান্বিত। তবে উৎপাদিত ধান ঘরে তোলার পর কাঙ্খিত দাম পাবেন কী না তা নিয়ে চরম অনিশ্চয়তায় রয়েছেন কৃষকরা।
জেলার বিভিন্ন উপজেলা ঘুরে দেখা গেছে, মাঠে এখন সোনালী ধান দোল খাচ্ছে। কিছু এলাকার সামান্য জমিতে ধান কাটা শুরু হয়েছে। এসব ধান আগাম জাতের হওয়ায় কৃষক আগেই ঘরে তুলছেন। তবে কয়েকদিন পরেই পুরোদমে ধানকাটা শুরু হবে।
কলারোয়া উপজেলার ওফাপুর মাঠের কৃষক মফিজুল ইসলাম জানান, ক্ষেতের চাষাবাদকৃত আমন ধান গতবারের চেয়ে এবার ভালো হয়েছে। আর কয়েকদিন পর ধান কাটা শুরু করা যাবে। যদি কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না আসে তবে এবার আমন ধানের বাম্পার ফলন হবে বলে তিনি আশা করেন।
সদর উপজেলার বলাডাঙ্গা বিলের কৃষক রুস্তম আলী বলেন, গত বোরো মৌসুমে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়ে আমরা চরম লোকসানে পড়েছি। তাই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে আমন আবাদ করেছি। তবে বাড়তি সেচ, শ্রম খরচ ও কীটনাশক প্রয়োগে উৎপাদন খরচ বেড়েছে। এ অবস্থায় সামনে ধান বাজারে ওঠার উপযুক্ত সময়ে যদি সঠিক দাম না পাই তাহলে আমরা সামনে আমন আবাদ করবো কী না সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
তালা উপজেলার ধানদিয়া বিলের কৃষক সহিদুল ইসলাম বলেন, ক্ষেতের ফসল আপাতত ভালো দেখা যাচ্ছে। তবে আকাশের গুমোটভাব দেখে হৃদয় কেঁপে উঠছে। আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করছি যেনো ঝড়-বৃষ্টি না দেয়। ঝড়-বৃষ্টি না হলে সুষ্ঠুভাবে ফসল ঘরে তুলতে পারলে আশা করছি লাভের মুখ দেখতে পাবো।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ আব্দুল মান্নান বলেন, আমন ধানের বাম্পার ফলন ও উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্য নিয়ে আমরা মাঠ পর্যায়ে বিভিন্ন ধরনের কাজ করে আসছি। তাই আশা করি বিগত মৌসুমের মতো এবারও আমন ধানের বাম্পার ফলন হবে। এতে কৃষকরা অনেকটা লাভবান হবেন। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে জেলার বিভিন্ন উপজেলার কিছু জমির ধানকাটা শুরু হয়েছে। আশা করছি আর কয়েকদিনের মধ্যে কৃষক কোনো ঝুটঝামেলা ছাড়াই ক্ষেতের ধান ঘরে তুলতে পারবেন।