প্রতীক্ষিত সংলাপ, বরফ গলবে তো?
সপ্তাহখানেক আগেও ক্ষমতাসীন দলের নেতারা সংলাপের বিষয় উড়িয়ে দিয়ে বক্তব্য দিয়েছেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে নানারকম শঙ্কা আর অনিশ্চয়তার মাঝে আজ সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বহুল আলোচিত সংলাপ। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পক্ষে দলটির সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পক্ষে গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন এ সংলাপের নেতৃত্ব দেবেন। সন্ধ্যা ৭টায় গণভবনে অনুষ্ঠেয় এ সংলাপে ক্ষমতাসীনদের পক্ষে ২৩ নেতা এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পক্ষে ১৬ জন অংশ নেবেন।
আগামী নির্বাচন নিয়ে নানা জল্পনা-কল্পনা ও সন্দেহ-সংশয়ের মধ্যেই সরকার ও আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংলাপে বসার আগ্রহ দেখিয়ে গত রোববার সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর কাছে চিঠি পাঠান ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন। পরদিন সোমবার মন্ত্রিপরিষদ বৈঠকের অনির্ধারিত আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে সংলাপে বসার সম্মতির কথা জানালে পরিস্থিতি নাটকীয় মোড় নেয়। একই দিন বিকেলে সংবাদ সম্মেলন করে আওয়ামী লীগ সংলাপে বসবে বলে জানিয়ে দেন দলের সাধারণ সম্পাদক। পরে প্রধানমন্ত্রী মঙ্গলবার ড. কামাল হোসেনের কাছে চিঠি পাঠিয়ে সংলাপে বসার আমন্ত্রণ জানান।
প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণের চিঠিতে সংবিধানসম্মত সব বিষয়ে আলোচনার দ্বার উন্মুক্ত বলে জানানো হয়েছে। অন্যদিকে, নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক দলের মধ্যে সমঝোতা হলে নির্বাচন কমিশন সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেবে বলে জানিয়েছেন কমিশনার রফিকুল ইসলাম। সংলাপের এমন তোড়জোড়ের মধ্যে মঙ্গলবার উচ্চ আদালতে ঐক্যফ্রন্টের শরিক দল বিএনপির কারাবন্দি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাজা বাড়ায় হতাশ ও বিস্মিত হয়েছেন শীর্ষ নেতারা। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গতকাল রাজধানীতে এক মানববন্ধন কর্মসূচিতে বলেছেন, খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে সংলাপ ফলপ্রসূ হবে না। তবে অন্য এক অনুষ্ঠানে ড. কামাল হোসেন বলেছেন, দলের চেয়ে জাতীয় স্বার্থকেই গুরুত্ব দেওয়া জরুরি।
সংলাপের এজেন্ডা :সংলাপে আলোচনার জন্য আওয়ামী লীগ ও তার জোটের সুনির্দিষ্ট কোনো এজেন্ডা নেই। জোটের নেতারা বলছেন, ঐক্যফ্রন্ট ও বিকল্পধারার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতেই প্রধানমন্ত্রী তাদের সংলাপে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। কোনো পূর্বশর্ত দিয়ে এই সংলাপ হবে না। আলোচনা হবে খোলা মনে। সংলাপের ফল যা কিছুই হোক না কেন, আগামী নির্বাচন প্রশ্নে সংবিধানের বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
ইতিমধ্যেই ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ঐক্যফ্রন্ট তাদের চিঠির সঙ্গে সাত দফা দাবি এবং ১১টি লক্ষ্যের কপি সংযুক্ত করে দিয়েছে। এ নিয়ে আলোচনা হবে। সাত দফার মধ্যে কয়েকটি দফা আছে যা সংবিধান সম্পর্কিত। কয়েকটি আছে আইন-আদালত ও নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সম্পর্কিত। খালেদা জিয়ার সাজার রায় সংলাপের পথে বাধা হবে বলেও মনে করেন না ওবায়দুল কাদের।
তবে ঐক্যফ্রন্ট নেতারা মনে করেন, আওয়ামী লীগ আন্তরিক হলে সংবিধানের মধ্যে থেকেই সাত দফার দু’একটি ছাড়া প্রায় সব দাবিই মানা সম্ভব। এক্ষেত্রে দুটি বিকল্প আছে। সংবিধানের ১২৩-এর ৩(ক) অনুচ্ছেদে বলা আছে, সংসদ রেখে নির্বাচন করা যাবে। ১২৩-এর ৩(খ) অনুচ্ছেদে বলা আছে, সংসদ ভেঙে নির্বাচন করা যাবে। সরকার বলছে, সংসদ রেখে নির্বাচন করবে। ঐক্যফ্রন্ট বিকল্পটা চাচ্ছে।
এ ব্যাপারে গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন মঙ্গলবার বিবিসিকে বলেছেন, সরকার আন্তরিক হলে এক মিনিটে সমস্যার সমাধান সম্ভব। লক্ষ্য তো একটাই, সবার অংশগ্রহণে একটা সুষ্ঠু নির্বাচন।
আওয়ামী জোটের ২৩ নেতা : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সংলাপে ক্ষমতাসীন জোটের ২৩ নেতা অংশ নেবেন। আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের পাশাপাশি দলটির নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের শরিক নেতাদেরও এই টিমে রাখা হয়েছে। বুধবার আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ড. আব্দুস সোবহান গোলাপের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনার পাশাপাশি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যদের মধ্যে শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু ও বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ সংলাপে উপস্থিত থাকবেন। সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যদের মধ্যে কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম ও কাজী জাফর উল্যাহ, ১৪ দলের শরিকদের মধ্যে সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও সমাজকল্যাণমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, জাসদ একাংশের সভাপতি ও তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, জাসদ আরেক অংশের কার্যকরী সভাপতি মাঈনুদ্দিন খান বাদল সংলাপে অংশ নেবেন। এ ছাড়া থাকবেন আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক, অ্যাডভোকেট আব্দুল মতিন খসরু ও রমেশ চন্দ্র সেন, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, ডা. দীপু মনি, জাহাঙ্গীর কবির নানক ও আব্দুর রহমান, প্রচার সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, দপ্তর সম্পাদক ড. আব্দুস সোবহান গোলাপ এবং আইনবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট শ ম রেজাউল করিম।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ১৬ সদস্য: ঐক্যফ্রন্টের ১৬ সদস্যের প্রতিনিধি দলের নেতা হিসেবে থাকবেন গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন।
প্রতিনিধি দলের অন্য সদস্যরা হলেন, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার ও মির্জা আব্বাস; গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু ও কার্যকরি সভাপতি সুব্রত চৌধুরী; জেএসডি সভাপতি আ স ম আব্দুর রব, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালেক রতন এবং রবের স্ত্রী ও সহ-সভাপতি তানিয়া রব; নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না ও উপদেষ্টা এসএম আকরাম সংলাপে অংশ নিবেন।
এর বাইরে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার প্রতিনিধি হিসেবে সাবেক ছাত্রনেতা সুলতান মুহাম্মদ মনসুর ও আ ব ম মোস্তফা আমিন এবং গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী অংশ নিবেন।