কলারোয়ার মেয়েকে বিয়ের প্রলোভনে ভারতের পতিতালয়ে বিক্রি

বিয়ের ফাঁদে ভারতীয় নাগরিক মোহর আলী সাতক্ষীরার কলারোয়ার সোনাবাড়িয়া গ্রামের অষ্টাদশী বিউটিকে ভারতের মুম্বাই নিয়ে বিক্রি করেছে। বিউটি খাতুনকে উদ্ধারের জন্য তার মাতা রোকেয়া বেগম ঢাকাস্থ ভারতীয় হাইকমিশনারের মাধ্যমে ভারত সরকারের কাছে আবেদন করেছে। অভিযোগ সূত্রে ও সরেজমিনে জানা গেছে, কলারোয়া উপজেলার সোনাবাড়িয়া গ্রামের এক অসহায় দরিদ্র পরিবারে বিউটির জন্ম। পিতা রুস্তম আলী পরের ক্ষেতে কামলা খেটে আর মাতা রোকেয়া পরের বাড়ি ঝি এর কাজ করে তিন সন্তান সহ ৫জনের সংসার নির্বাহ করত। ফলে বিউটির সুস্থভাবে লেখাপড়া সম্ভব হয়ে উঠেনি। ১৫/১৬ বছর বয়সে বিউটি কোন রকমে সোনাবাড়িয়া প্রাইমারী থেকে ৫ম শ্রেণী পাশ করে। অসচ্ছল সংসারে লেখাপড়ার খরচ যোগাতে না পারায় বিউটিকে মাদ্রাসায় ভর্তি করে দেওয়া হয়। কিন্তু ডাগর মেয়ে বিয়ে দেওয়া হচ্ছে না বলে ৫ জনে নানা রকম মন্তব্য করতে থাকে। ফলে অভাবের সংসারে বিউটি এক যন্ত্রণা হয়ে দাড়ায়। এরকম অবস্থায় ভারত প্রবাসী মশিয়ার নামে এক পরিচিত ব্যক্তি বিউটির বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে হাজির হয়। মা বাবা বিউটির বিয়ের পাত্রের সন্ধান পেয়ে আকাশের চাঁদ হাতে পায়। ছেলে দেখে পছন্দ হলে জানানো হয় পাত্র মোহর আলী ভারতের ২৪ পরগণা জেলার স্বরুপনগর থানার দত্তপাড়া গ্রামের মোবারক আলীর ছেলে। ভিনদেশে মেয়ে বিয়ে দিতে মা বাবার মন খারাপ হয়। কিন্তু তার এক প্রতিবেশীর মেয়ে ভারতে বিয়ে হয়েছে; আর ভারতের ৫ মেয়ে তাদের পাড়ায় বিয়ে হয়েছে, ঘর সংসার করছে- পরিচিত মশিয়ারের এই প্রবোধ ও আশ্বাসে শেষ পর্যন্ত মোহর আলীর সংগে বিউটির বিয়ে হয়। ভিনদেশ হলেও জামাতা মোহর আলী বিউটিকে ২ বার পিত্রালয়ে বেড়াতে আনে। মেয়ের কাছ থেকে তারা জানতে পারে মোহর আলীর আগের স্ত্রী রয়েছে। তাই ট্রাক ড্রাইভার মোহর আলী মুম্বাই শহরে ঘর ভাড়া করে বিউটিকে নিয়ে বসবাস করে। হটাৎ ২০১০ সালের পরে মেয়ে বিউটির কাছ থেকে ফোন আসা বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু জামাতা মোহর আলী সামনের মৌসুমে বিউটিকে নিয়ে বেড়াতে আসার কথা বলে ক্রমান্বয়ে কালক্ষেপণ করতে থাকে। এভাবে কয়েক বছর পার হয়ে যাওয়ার পরে বিউটির গর্ভধারণী মা রোকেয়ার হৃদয় ব্যাকুল হয়ে উঠে। নাড়ি ছেড়া ধন কন্যাকে এক নজর দেখার জন্য চোরাই পথে পাড়ি জমায় ভারতের স্বরুপনগর থানার দত্তপাড়া গ্রামে। কৌশলে টেলিফোনে মোহর আলীর ১ম স্ত্রী মায়ানুর বিবির সংগে কথা বলে জানতে পারে বাংলাদেশের সোনাবাড়িয়া গ্রামের বিউটিকে মুম্বাই নিয়ে বিক্রি করা হয়েছে। একথা শুনে এবং কন্যাকে না দেখে বিউটির মা রোকেয়া জামাতা মোহর আলীকে তার মেয়ে হাজির করতে বলে। এতে ধূর্ত মোহর আলী রাগে অগ্নিশর্মা হয়ে বিউটির মা রোকেয়াকে পুলিশে/ বিএসএফ এর হাতে তুলে দিয়ে সারা জীবন ভারতের জেলে পচানোর হুমকি দেয়। ফলে বিউটির মা ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে দেশে ফিরে আসে। এরপর অভাবের সংসারে এটা সেটা বিক্রি, ধারদেনা করে টাকা নিয়ে পাসপোর্ট ভিসা করে ভারতে প্রবেশ করতে আরো বছরাধিকাল কেটে যায়। সন্তানের জন্য ব্যাকুল মাতৃহৃদয় সব বাধা পেরিয়ে গত ২৪ আগস্ট’১৮ ভারতের স্বরুপনগর থানায় প্রবেশ করে লিখিত অভিযোগ করে। অভিযোগ পেয়ে পুলিশ রোকেয়ার কাছ থেকে মেয়ে বিউটির ১৪ কপি ছবি গ্রহণ করে। এরপর পুলিশ মোহর আলীকে দত্তপাড়া গ্রাম থেকে আটক করে থানায় আনে। কিন্তু মোটা টাকার বিনিময়ে স্বরুপনগর থানার ওসি মোহর আলীকে ছেড়ে দিয়ে বাংলাদেশের মানুষের কোন কেস হবে না বলে জানায়। কিন্তু নাছোড় রোকেয়া পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ সদর দপ্তর লালবাজার যেয়ে বিষয়টি জানায়। লালবাজার পুলিশের পরামর্শ মোতাবেক বাংলাদেশে ফিরে গত ২৪ সেপ্টেম্বর রোকেয়া কলারোয়া পোষ্ট অফিস থেকে ঢাকাস্থ ভারতীয় হাইকমিশনারের কাছে তার কন্যা উদ্ধার ও ফেরত দানের আবেদন প্রেরণ করেছে। আবেদনে ভারত সরকারের কাছে তার কন্যাকে উদ্ধার ও ফেরতের প্রার্থনা জানানো হয়েছে। কন্যাকে পাওয়ার জন্য রোকেয়া পুনরায় পরদিন ২৫ সেপ্টেম্বর পাসপোর্টে ভারতে প্রবেশ করেছে বলে তার পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)